ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেলদুয়ারে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের দেয়া ২৭ লাখ

টিআরের টাকা লোপাট

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৫ আগস্ট ২০১৬

টিআরের টাকা লোপাট

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের বরাদ্দকৃত টেস্ট রিলিফের ২৭ লাখ টাকা দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম শিবলী সাদিক ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। দুস্থ, অসহায় পরিবার ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে টিআর বরাদ্দ দেয়ার বিধান থাকলেও দেলদুয়ারে চলছে প্রকাশ্যে হরিলুট। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা ও হিসাবরক্ষণ অফিসের যোগসাজশে বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। জানা যায়, সোলার স্থাপন বাবদ ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ২৯ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৯ টাকা বরাদ্দ দেন। গত ২৭ জুন প্রকল্প অনুমোদন করে ডিও লেটার দেয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক প্রকল্প কমিটির সভাপতি টাকা উত্তোলন করে কাজ বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম শিবলী সাদিক কোন প্রকল্পের সদস্য না হলেও ২৯ জুন দেলদুয়ার সোনালী ব্যাংক থেকে ডিডির মাধ্যমে টাঙ্গাইল সোনালী ব্যাংকে তার নিজের হিসাবে ২৭ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন। ডিডি নং-০৮৭২৯২৬। কাজের মেয়াদ শেষ হলেও কোন কাজ না করে তার অনুগত কতিপয় নেতাকর্মীকে কিছু টাকা দিয়ে বাকি টাকা তিনি আত্মসাত করেছেন। শুধু তাই নয়, নিয়ম অনুযায়ী অসহায়, দুস্থ পরিবার, বিদ্যুতবিহীন পরিবার ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানে সোলার স্থাপনে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা থাকলেও যাদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তারা সবাই বিত্তবান। এদের মধ্যে কোটিপতিও রয়েছেন। অথচ অধিকাংশ লোক ও প্রতিষ্ঠান জানেই না যে তাদের নামে সোলার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। লাউহাটী একতা যুব সংঘ ক্লাব ও রুহুল আমীনের বাড়িতে সোলার স্থাপনের জন্য ৩ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। উক্ত প্রকল্প কমিটির সভাপতি পলাশ ভূঁইয়া বলেন, শিবলী সাদিক আমাকে বলেছে একটি প্রকল্প কমিটি জমা দিতে। আমি শুধু কমিটি জমা দিয়েছি। টাকার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। সব টাকা শিবলী সাদিকের কাছে রয়েছে। কুমুল্লী একতা ক্লাব, রফিকুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, বাবু মিয়া ও মেনহাজের বাড়িতে সোলার স্থাপনের জন্য তিন লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। প্রকল্প কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, সোলার স্থাপন না করলে কী সরকার আমাদের বিল দিয়েছে ? সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কোথাও সোলার স্থাপন করা হয়নি। কেউ জানেই না তাদের নামে সোলার স্থাপনের টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কুমুল্লী গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল লতিফ বলেন, কুমুল্লীতে রফিকুল ইসলাম বাবুর বাড়িঘর নেই। সে টাঙ্গাইল সদরের করটিয়াতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। কুমুল্লী গ্রামের শরিফ মিয়া বলেন, কুমুল্লীতে একতা ক্লাবের কোন ঠিকানা নেই। ধানকী দক্ষিণপাড়া কবরস্থানের লাশঘরে সোলার স্থাপনের জন্য ২ লাখ টাকা উত্তোলন করা হলেও সোলার লাগানো হয়নি। দেলদুয়ার প্রি-ক্যাডেট স্কুলে সোলার বাবদ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হলেও স্কুলের মালিক মামুন মিয়া বলেন, আমার স্কুলে সোলার স্থাপন করা হয়নি। তাছাড়া এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এলাসিন রওশন আরার বাড়ি, লিয়াকতের বাড়ি, এলাসিন বাজার কালীমন্দির, মাইঠাইন সাইদ মিয়ার বাড়ি, দরিপাড়া সাইদ মিয়ার বাড়ি ও স্থল বর্ষা মসজিদে সোলার স্থাপন বাবদ ৪ লাখ ১৭ হাজার ৫শ’ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। প্রকল্প কমিটির সভাপতি শেখ ফারুক হাসান বলেন, আমরা কি করব না করব আপনাকে জানাতে বাধ্য নই। আপনি জানার কে? এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম শিবলী সাদিকের দুবার বক্তব্য নেয়া হলে ১ম বার ৬ জুলাই তিনি বলেন, জুন ক্লোজিংয়ের কারণে জুন মাসে টাকা উত্তোলন না করা হলে টাকা ফেরত যেত। ২৯ জুন দেলদুয়ার সোনালী ব্যাংকে টাকা স্বল্পতার কারণে টাঙ্গাইল সোনালী ব্যাংকে আমার এ্যাকাউন্টে ২৭ লাখ টাকা ডিডি করা হয়েছে। উপজেলা পিআইও অফিস এবং হিসাবরক্ষণ অফিসে খরচের টাকা দিয়ে বাকি টাকা প্রকল্প সভাপতিদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হবে, তারা কাজ করবে। কিন্তু কোন কাজ করা না হলে ১১ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংক থেকে ইলিয়াস মিয়ার এ্যাকাউন্টে ২৭ লাখ টাকা ডিডি করা হয়েছে। কোথাও অনিয়মের ব্যাপারে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। ইলিয়াস মিয়া বলেন, আমার এ্যাকাউন্টে কোন ডিডি করা হয়নি। ২৭ লাখ টাকা শিবলী সাদিকের এ্যাকাউন্টে ডিডি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে দেলদুয়ার উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা এএইচএম আব্দুর রউফ বলেন, কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি কোথাও সোলার স্থাপন করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্প সভাপতি বরাবর আমরা টাকা ফেরত চেয়ে চিঠি দেব।
×