ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শূটার বাকীর পর কফিনে শেষ পেরেক গলফার সিদ্দিকুরের

চিরাচরিত ব্যর্থতায় শেষ হলো বাংলাদেশের অলিম্পিক মিশন

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৫ আগস্ট ২০১৬

চিরাচরিত ব্যর্থতায় শেষ হলো বাংলাদেশের অলিম্পিক মিশন

সোনালি স্বপ্নরে রোদ যেন প্রবল উৎকণ্ঠায় ঢেকে গেল। অটুট আত্মবিশ্বাসের আছড়ে পড়েছে ব্যর্থতার ঢেউ। আস্থার মধ্যে লেপ্টে অদৃশ্যের ছায়ায় ঢাকা পড়ল সব প্রতিশ্রুতি। প্রত্যাশার সমাধি ঘটল আটলান্টিকের গভীরে। অলিম্পিকের বড় মঞ্চে কিছু হবে না। ইতিহাস তা প্রমাণ করে না। তবু প্রত্যাশা থাকে, যদি একটা কিছু হয়ে যায়। ভাগ্য-বিধাতার বদৌলতে অনেক সময় তো অবাক করার মতো কিছু ঘটে যায়। সেটাও হলো না। একেবারেই হতাশার চিত্র। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের সাত ক্রীড়বিদের কথা। বাংলাদেশ থেকে এবারই প্রথম সবচেয়ে বড় ক্রীড়া দল অংশ নেয় অলিম্পিকে। প্রতিবারই সেøাগান শোনা যায়, পদক নয়। অংশগ্রহণটাই মুখ্য। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ছিল একটু ভিন্ন। সেটা বড় কিছু নয়। আবার বড়ও। পদক জিততে না পারলেও সম্মানজনক একটা রেজাল্ট। যদিও তা সবাইকে বা সব বিষয়ে নয়। দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখছিল ১১২ বছর পর অলিম্পিকে ফেরা গলফ আর শূটিং ঘিরে প্রত্যাশার মৃদু প্রদীপ জ্বালিয়ে ছিলেন মানুষ। তবে গলফেই সম্ভাবনা দেখছিলেন সবাই। কিন্তু যে দুটি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আশা করা হয়েছিল, সে দু’টিতেই ভর করল সবচেয়ে বড় হতাশা। একেবারেই ল্যাজে-গোবরে। সাঁতার, এ্যাথলেটিক্স ও আরচারিতে সম্ভব নয় ভাল করা। যা আগেভাগেই জানা ছিল। ক্রীড়াবিদরাও আশার বাণী শোনাননি। শুনিয়েছিলেন কেবল গলফার সিদ্দিুকর রহমান, যাকে বলা হতো ‘বাংলার টাইগার’। কিন্তু রিও অলিম্পিকে বাংলাদেশের পতাকা বাহক টাইগার মেছো বাঘের খ্যাচখেচানি আওয়াজও শোনাতে পারলেন না। যত বড় আশা, তার চেয়ে বড় হতাশাই সঙ্গী হলো তার। শূটার আবদুল্লাহ হেল বাকী হচ্ছেন ব্যর্থতার পথ প্রদর্শক। নিজের স্কোর দূরের কথা। বাজে রেজাল্ট করে বিদায় নেন সবার আগে। এরপরই বাড়তে থাকে ব্যর্থতার মিছিল। যে মিছিলের সর্বশেষ যোগফল রিওর গলফ কোর্সে মুখ থুবড়ে পড়া সিদ্দিকুর। তার আগে ধাপে ধাপে তীরন্দাজ শ্যামলী রায়, সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর, সোনিয়া আক্তার টুম্পা, এ্যাথলেট মেসবাহ আহমেদ ও শিরিন আক্তারের বিদায়। ক্রীড়াবিদের তালিকার দিকে তাকালে আর কেউ বাকি নেই। দর্শন বনে গেছে বাংলাদেশের গোটা দল। তার মানে পদকযুদ্ধের মাঝপথেই অলিম্পিক শেষ বাংলাদেশের। ব্যর্থতার একটা রকম আছে। অন্তত একটা বিষয়ে একজন ভাল করলেও চাপা দেয়া যেত অন্যদের চরম ব্যর্থতা। বিশেষ করে গলফে সিদ্দিকুর ভাল একটা অবস্থানে থেকে শেষ করতে পরলেও সান্ত¡না পাওয়া যেত। কিন্তু তিনিই যে ব্যর্থতার মহানায়ক বনে যাবেন কেউ ভাবেননি। আর শূটার বাকী তো নিজের বরেই অমর। ম্যাচ শেষে তীরন্দাজ শ্যামলী রায় তো বলেই দিয়েছিলেন, ঠা-ায় আঙ্গুল অবস হয়ে পড়ছিল। নিশানার খেলায় যদি আঙ্গুলই না চলে তাহলে তো আর লক্ষ্য ভেদ করা যায় না। শূটার বাকী শেষ আটে জায়গা করে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হয়েছেন ৫০ জনে ২৫তম। চমৎকার মিশন। দুই এ্যাথলেট দেশের দ্রুততম মানব-মনবী মেসবাহ ও শিরিন নিজের টাইমিং টপকাতে পারেনি। আসলে এসব গাজীর কেচ্ছা লিখতেও নিজের কাছে লজ্জা লাগছে। তারপরও লিখতে হচ্ছে দেশের সোনার (?) ক্রীড়াবিদ হিসেবে। হতাশার মাঝেও মুখ রক্ষা করায় প্রশংসা করতে হয় সাঁতারু সাগর ও সোনিয়াকে। দেশ ত্যাগের আগে তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল নিজের টাইমিং অতিক্রম। সেটা করেছেন তারা রিওতে। গলফ শুরুর প্রথম দিনেই খেই হারিয়ে ফেলেন সিদ্দিকুর। দায়ী করেন বৈরী আবহাওয়াকে। হতেই পারে দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, দমকা হওয়ায় কনকনে ঠা-ায় ভাল শট খেলতে পরেননি। ৬০ জনের মধ্যে হয়েছিলেন ৫৬তম। দ্বিতীয়দিনে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে উঠে এসেছেলেন ৪৫-এ। বেশ ফুরফুরে মেজাজে বলছিলেন চারদিনের লড়াই শেষ হতে আরও দু’দিন হাতে আছে। এ দু’দিন নিজের করে নিতে পারলে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু তৃতীয় দিনে এসে ফের ছন্দপতন। সব স্বপ্ন তামাদি করে নেমে আসেন ৫৫-তে। যোগ হয়ে গেলেন ব্যর্থতার মিছিলে। লজ্জার আর অবশিষ্ট থাকল না কিছুই। সেই পুরনো কেচ্ছা ‘অভিজ্ঞতা অর্জনই মুখ্য।’ এতেই সীমাবদ্ধ থাকল বাংলাদেশের অলিম্পিক মিশন। স্বাধীনতার ৪২ বছরেও যা বদলায়নি। ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। প্রশ্ন একটাই, এই অজুজাত আর কতদিন? উল্লেখ্য, এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গলফে শেষ, অর্থাৎ চতুর্থ দিনের খেলা অবশিষ্ট ছিল।
×