ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা হাজার বছরে একবারই আসেন’

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৫ আগস্ট ২০১৬

‘বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা হাজার  বছরে একবারই আসেন’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা হাজার বছরে একবারই আসেন। তিনি চলে গেছেন কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর প্রকাশিত-অপ্রকাশিত লেখা, বক্তৃতা এবং চিঠিপত্র। বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজও গড়ে ওঠেনি। বাংলা একাডেমি আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের একক বক্তৃতায় এ কথা বলেন অধ্যাপক ফকরুল আলম। রবিবার বিকেলে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারার বিবর্তন’ শীর্ষক এই বক্তৃতা। একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। বক্তৃতা শেষে প্রদর্শিত হয় নাগিশা ওশিমা নির্মিত প্রমাণ্যচিত্র জয় বাংলা। বক্তৃতায় ফকরুল আলম আরও বলেন, অসমাপ্ত অত্মজীবনী সকলকে পাঠ করতে হবে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর জীবনীর প্রথম ৩৪ বছরের আখ্যান হিসেবে নয়, এখানে আমরা তাঁর চিন্তাধারার বিবর্তনের বর্ণনা এবং আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে মৌলিক চিন্তার সাক্ষাত পাই। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু যতই জড়িয়েছেন ততই তিনি উপলব্ধি করেছেন, রাজনীতি করার মূল উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর করা; তাদের শোষকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া এবং জনগণের মুক্তির জন্য কাজ করা। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে ৪১ বছর আগে হত্যা করেছিল, তারা মনে করেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস ও মানুষের মন থেকে তাঁকে সরানো যাবে, সেটা আজ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, গুলশানের জঙ্গী হামলা বাংলাদেশের জন্য একেবারেই অপ্রত্যাশিত। এই জঙ্গীবাদ আমাদের বিকারের একটি প্রতিফলন, বাঙালী স্বভাবের নয়। বাঙালীর স্বভাবসুলভ চেতনা দিয়ে এই বিকার রোধ করা সম্ভব হলে বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে। স্বাগত ভাষণে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কেবল কান্না নয়, এখন তাঁকে নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। পঁচাত্তরের শত্রুপক্ষ বসে নেই। তারা আরও শক্তি সঞ্চয় করে আঘাত হানার চেষ্টা করছে। কিন্তু যতদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বাংলার প্রগতিশীল মানুষ বেঁচে থাকবে ততদিন বাংলার মাটিতে উগ্রবাদীদের ঠাঁই হবে না। এজন্য তরুণ সমাজকে আরও চিন্তাশীল হতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে সঠিকভাবে জানতে ও বুঝতে হবে। তবেই বাংলার মানুষ সঠিক লক্ষ্যে ধাবিত হবে। আজ (সোমবার) স্বাধীনতার মহান স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে বাংলা একাডেমি। সকাল ৬টায় একাডেমির পক্ষ থেকে ধানম-ির বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হবে। বিকেল ৪টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত করে স্বরচিত কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, সংগীত পরিবেশনার পাশাপাশি প্রদর্শিত হবে প্রামাণ্যচিত্র। এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। জঙ্গীবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক জাগরণে বাউলদের পদযাত্রা ॥ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে শান্তির বাণী নিয়ে রাজপথে নামল বাউলরা। লালনের গানের সুরে শিল্পকলা একাডেমি থেকে বের হওয়া পদযাত্রাটি শেষ হয় ভাষাশহীদদের স্মৃতির মিনার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সাদা পোশাকে আবৃত বাউলদের কণ্ঠে উচ্চারিত হলো ফকির লালন সাঁইয়ের অবিনাশী বাণী ‘সত্য বল সুপথে চল’। সারা দেশ থেকে জড়ো হওয়া ৩০০ বাউলের অংশগ্রহণে পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আরও অংশ নেন সংস্কৃতিক সচিব আক্্তারী মমতাজ ও শিল্পকলা এাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। শিল্পকলার চিত্রশালা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত ‘জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক জাগরণ’ সম্বলিত ব্যানার, একতারা, দোতরাসহ দেশীয় বাদ্যযন্ত্র নিয়ে লালন সাঁইয়ের গানের তালে বাউলদের পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে জাতীয় চিত্রশালায় ‘জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক জাগরণ’ শীর্ষক চার দিনব্যাপী লালন ভাবধারার ভাবশিষ্যদের নিয়ে ‘ভাবসঙ্গীত ও সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়। এ আয়োজনের শেষ দিনে রবিবার সকালে চিত্রশালায় বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজ। অনুষ্ঠানে বাউল সাধক নহির শাহ, বাউল পাগলা বাবুল ও বাউল হৃদয় সাধু বক্তব্য দেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাউল ভাবদর্শনই পারে অন্ধকারের শক্তিকে রুখে দিতে। বাউলের যে দর্শন তা আমাদের জীবনেরই দর্শন, যে দর্শন জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-পেশার মধ্যে ভেদাভেদ না করে সবাইকে মনুষ্যত্বের আহ্বানে একত্রিত করে। এটি সমগ্র মানবজাতির দর্শন, যার ছায়ায় সব ধর্ম-গোত্র ও সম্প্রদায়ের মানুষ সমাবেত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, মানুষ মানুষে যখন ভালবাসার ঘাটতি হয় তখন শুরু হয় সঙ্কট, ঘটে নানা বিপর্যয় ও ধ্বংস। এ পরিস্থিতির উত্তরণে বাউল ভাবদর্শন পালন করতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কারণ এ দর্শনের মূল কথা মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা আর সম্প্রীতি। সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে অন্ধকারের শক্তিগুলো বাংলাদেশে তাদের অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে। তারা ধর্মের নামে মুক্তমনা মানুষ, ব্লগার, লেখক-প্রকাশক, শিল্পী-কবি-সাহিত্যিক, পুরোহিত, ইমাম, বিদেশীসহ নিরীহ মানুষ হত্যা করছে। বিভিন্ন সময়ে দেশের নানা প্রান্তে বাউলদের ওপর চালাচ্ছে নির্যাতন। এটি শুধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ওপর হামলা নয়, আমাদের সবার ওপর হামলা, মানব জাতির ওপর হামলা, আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ওপর হামলা। এ অপশক্তিগুলোর মোকাবেলায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। এক্ষেত্রে বাউল ভাবদর্শন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ এ ভাবদর্শন মানুষের অন্তরাত্মাকে আলোকিত করে, তাকে দেখায় আলো-অন্ধকারের পার্থক্য, তাকে শেখায় পাপ-পূণ্যের ভেদাভেদ। এবারের মতো প্রতিবছর সরকারী ব্যবস্থাপনায় বাউল সম্মেলন আয়োজনের ব্যাপারে আশা পোষণ করেন মন্ত্রী।
×