ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ ‘সলেমান মৌলবিরা পাক আর্মি মিলে দুই শ’ হিন্দুকে হত্যা করে’

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৫ আগস্ট ২০১৬

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ ‘সলেমান মৌলবিরা পাক আর্মি মিলে দুই শ’ হিন্দুকে হত্যা করে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শরীয়তপুরের সোলায়মান মোল্লা ওরফে সলেমান মৌলবি ও ইদ্রিস আলী সরদারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দ্বাদশ সাক্ষী আব্দুস সালাম তালুকদার জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, আমি সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারি আসামি সলেমান মৌলবি ও ইদ্রিস আলী সরদারের সহায়তায় রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা দুই শতাধিক হিন্দু পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা করেছে। নিহতদের স্মরণে মধ্যপাড়া গ্রামে ২০১০ সালে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়েছে। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ৪ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীকে সাক্ষ্যদানে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর (সাবেক জেলা জজ) হƒষিকেশ সাহা ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামি পক্ষে জেরা করেন এ্যাডভোকেট গাজী এম এইচ তামিম। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ আব্দুস সালাম তালুকদার। আমার বর্তমান বয়স ৬১ বছর। আমার ঠিকানা- স্বর্ণঘোষ, ওয়ার্ড নং-৮, শরীয়তপুর পৌরসভা, থানা-পালং, জেলা-শরীয়তপুর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় আমি মাদারীপুর নাজিমউদ্দিন কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলাম। আমি মাদারীপুর শহরে আমার বড়ভাই আব্দুল গফুর তালুকদারের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতাম। একাত্তরে এপ্রিল মাসের ৩ তারিখে আমি আমার ভাগিনা সুলতান মাঝিকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেয়ার জন্য ভারতে যাই। ট্রেনিং শেষে জুলাই মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশে আসি। সাক্ষী বলেন, আমি সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারি আসামি সলেমান মোল্লা ও ইদ্রিস আলী সরদারসহ আরও কয়েকজন রাজাকার পালং থানা শান্তি কমিটি গঠন করেছে। পরে তারা রাজাকার বাহিনী গঠন করে। পালং সিনেমা হলে তারা অবস্থান করে এবং সেখান থেকে রাজাকারদের নিয়ে মাদারীপুর এআর হাওলাদার জুট মিলে পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে। সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেন, একাত্তরে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি মাদারীপুর অবস্থানকালীন জানতে পারি আসামিদ্বয়সহ আরও ৩০-৩৫ রাজাকার পাকিস্তানী আর্মি নিয়ে পালং থানার মধ্যপাাড়া ও কাশাভোগ হিন্দুপাড়ায় আক্রমণ চালিয়েছে। সেখানে আক্রমণ চালিয়ে তারা ২শ’ হিন্দু পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা করেছে। নিহতদের স্মরণে মধ্যপাড়া গ্রামে ২০১০ সালে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। সাক্ষী আরও বলেন, আমি সোর্সের মাধ্যমে আরও জানতে পারি, একাত্তরের ২৩ মে আসামি দুইজন ১৮-২০ জন রাজাকার ও আনুমানিক ১০০ পাকিস্তানী আর্মি নিয়ে পালং থানার হিন্দু এলাকায় আক্রমণ চালায়। হিন্দুবসতি মালোপাড়া গ্রাম থেকে ৩৫ হিন্দু নর-নারীকে ধরে যোগমায়ার বাড়ির সামনে মারপিট করতে থাকে। এ সময় মঠের পুরোহিত চন্দ্র মোহন চক্রবর্তীকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া রাজাকাররা শুক্রাই ও ললিত মোহন কুন্ডুকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
×