ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার জন্মদিনের কেক কাটছেন না খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৫ আগস্ট ২০১৬

এবার জন্মদিনের  কেক কাটছেন না খালেদা  জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিবছর শোকের দিন ১৫ আগস্টে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কেক কেটে জাঁকজমকভাবে নিজের জন্মদিন পালন করলেও এ বছর এ ধরনের অনুষ্ঠান বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। দেশের চলমান সঙ্কট, বন্যার্তদের প্রতি সহমর্মিতার বিষয়টি মাথায় রেখে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর ১৯৯৩ সাল থেকে ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের রেওয়াজ চালু হয়। তবে জাঁকজমকভাবে জন্মদিন পালন শুরু হয় ১৯৯৬ সাল থেকে। ওই বছর থেকে প্রতিবছর ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে কেক কেটে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জাঁকজমকভাবে জন্মদিন পালন করেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদসহ ক’জন বুদ্ধিজীবীর পরামর্শে গত বছর এ উপলক্ষে ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে কোন কর্মসূচী পালন না করলেও পরদিন রাতে খালেদা জিয়া তাঁর গুলশান কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে কেক কেটে জন্মদিন উৎসব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীর মিন্টো রোডের সরকারী বাসভবনে খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো নেতাকর্মীদের নিয়ে কেক কেটে জাঁকজমকভাবে জন্মদিন উদ্যাপন শুরু করেন। ওই সময় একজন যুবদল নেতা ও ক’জন জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীর পরামর্শে শোকের দিনে এভাবে খালেদা জিয়ার জন্মদিন জাঁকজমকভাবে পালন শুরু হয়। যদিও খালেদা জিয়ার প্রকৃত জন্মদিন কবে এ নিয়ে নানান বিতর্ক রয়েছে। বিএনপি কার্যালয় থেকে জানা যায়, ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। সে হিসেবে সোমবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ৭১ এ পা দিচ্ছেন। তাঁর বাবার নাম ইস্কান্দার মজুমদার এবং মায়ের নাম তৈয়বা মজুমদার। প্রসঙ্গত: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তাই সেই শোকের দিন ১৫ আগস্টে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদ্যাপন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক আছে। জানা যায়, সম্প্রতি বিএনপিপন্থী ক’জন বুদ্ধিজীবী ও দলের ক’জন সিনিয়র নেতার সঙ্গে ১৫ আগস্ট কেক না কাটার বিষয় নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আলোচনা করেছেন। তবে দলের পক্ষ থেকে জন্মদিন উদ্যাপন না করার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে না জানানো হলেও বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের ১৫ আগস্ট কেক নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে না যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান সাংবাদিকদের জানান, ১৫ আগস্ট গুলশান কার্যালয়ে কেক কাটার কোন আনুষ্ঠানিকতা হচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের জানান, উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ব্যাপক বন্যায় মানুষের দুর্দশা, সর্বত্র গুম-খুন ও দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-নির্যাতনের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই ম্যাডামের জন্মদিনে এবার আমরা কেক কাটার অনুষ্ঠান করছি না। ৪ আগস্ট খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। বৈঠককালে তিনি খালেদা জিয়াকে ১৫ আগস্ট জন্মদিনের কেক না কাটার পরামর্শ দেন। এছাড়া আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও খালেদা জিয়াকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন পালন না করার আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়াও জাতীয় শোক দিবসে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের সমালোচনা করে সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বেশ ক’জন বক্তব্য রেখেছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৫ আগস্টে কেক কাটা বন্ধ করলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, খালেদা জিয়ার কেক কাটা বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার সম্পৃক্ততার প্রমাণ। আর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিএনপি করা তৃণমূল বিএনপির সভাপতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, বিএনপিতে থাকা অবস্থায় ১৫ আগস্ট কেক কেটে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের প্রতিবাদ করেছিলাম। মঙ্গলবার বিএনপির যৌথসভা ॥ দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচী ঠিক করতে ১৬ আগস্ট মঙ্গলবার বিএনপির যৌথসভা। বিকেল ৩টায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এ যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। রবিবার বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানান। উল্লেখ্য, ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের এই দিনে সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমান এ দল প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিবারের মতো এবারও দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করবে বিএনপি। মঙ্গলবারের যৌথসভায় এ কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হবে। এছাড়া সভায় ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৯ম কারামুক্তি দিবস এবং ১১ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি দিবস পালনের কর্মসূচী ঠিক করা হবে। সভায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদকম-লী এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
×