ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শোকাবহ ১৫ আগস্ট

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ১৫ আগস্ট ২০১৬

শোকাবহ ১৫ আগস্ট

আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বিপথগামী কতিপয় সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। শোকসন্তপ্ত জাতি আজ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধুকে বিশেষভাবে স্মরণ করছে। যাঁর গৌরবময় নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সেই মহান নেতাকে সপরিবারে হত্যা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক ঘটনা। ঘাতক দল ভেবেছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাঁর নাম ইতিহাস থেকে চিরতরে মুছে ফেলবে। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন সফল হয়নি। যে বাড়িতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হয়েছেন সেই ধানম-ির ৩২ নম্বরের বাড়িটি এখন জাতির অন্যতম আবেগময় স্মৃতিচিহ্নে পরিণত হয়েছে। আর তিনি বাঙালী জাতির প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ঘাতকরা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার যে পথ সৃষ্টি হয়েছিল সেখান থেকে দেশকে সরিয়ে বিপরীতমুখী করার উদ্দেশ্য ছিল তাদের বড় একটি লক্ষ্য। তাদের লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলিয়ে দেয়া। মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর অবদানকে খাটো করা এবং যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্যে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেটা নস্যাত করে দেয়া। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে শুরু হয় এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। একটা পর্যায় দেশে এসেছিল যখন বঙ্গবন্ধুর নামটাও জাতীয় প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হতে পারত না। ইতিহাস থেকে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়কের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। তরুণদের দীর্ঘকাল জানতে দেয়া হয়নি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুকে শুধু অস্বীকার করাই নয়, নানাভাবে তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। তাঁর অবদানকে নানাভাবে খাটো করা, এমনকি অস্বীকারও করা হয়েছে। কিন্তু কুচক্রীদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। এ দেশের ইতিহাসের সঙ্গে যাঁর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত, দেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় যাঁর স্থান; কোন হুকুম বা ফরমান দিয়ে তাঁর নাম মুছে ফেলা যায় না, তাঁর অবদানকে খাটো করা যায় না। দেশকে তিনি ভালবেসেছেন অকৃত্রিমভাবে, দেশের মানুষও তাঁকে দিয়েছে হৃদয় উজাড় করা ভালবাসা। তাই খুনী, ঘাতকচক্র ও তাদের পৃষ্ঠপোষকের সব চক্রান্ত, চেষ্টা, তৎপরতা ব্যর্থ হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু শারীরিকভাবে আজ না থাকলেও মানুষের হৃদয়জুড়ে তাঁর অবস্থান। তাঁর হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। তবে ষড়যন্ত্রের তদন্ত হয়নি আজও। ঘাতকদের দ-াদেশ কার্যকর হয়েছে। তবে এখনও কয়েক ঘাতক পালিয়ে রয়েছে নানা দেশে। তাদের অতিদ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে দ-াদেশ কার্যকরের ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা সবার দাবি। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন সোনার বাংলা গড়ার। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার মাধ্যমেই তাঁর প্রতি সর্বোৎকৃষ্ট শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব। সে কাজটাই এখন করতে হবে।
×