ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের সকালে পদকযুদ্ধে ত্রিপুরার কন্যা

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১৪ আগস্ট ২০১৬

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের সকালে পদকযুদ্ধে ত্রিপুরার কন্যা

জন্মদিনের শপথ, রিওতে তার পদক চাই-ই চাই। ফাইনালের কৌশল নিয়ে গত কয়েকদিন অনুশীলনে প্রচুর ঘাম ঝরিয়েছেন। গেমস ভিলেজে কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীর সঙ্গে এ সময়ের মধ্যে আলোচনা হয়েছে পদকের লক্ষ্যে এবার হাঁটবেন উল্টো পথে। অর্থাৎ এতদিন যে স্ট্র্যাটেজিতে ভল্ট করে এসেছেন, অলিম্পিকে প্রতিপক্ষদের ধোঁকা দিতে সেটাই আমূল বদলে ফেলেছেন । তিনি দীপা কর্মকার, রিও অলিম্পিক গেমসে জিমন্যাস্টিক্সের ফইনালে উঠে প্রথম ভারতীয় হিসেবে নাম লিখিয়ে ফেলা ত্রিপুরার বাঙ্গালী মেয়ে। ব্রাজিল সময় শনিবার দুপুরে অনুশীলনে যাবার আগে নতুন স্ট্র্যাটেজি ফাঁস করলেন দীপার কোচ। বললেন, ফাইনালে সে দু’টো ভল্টের সুযোগ পাবে। প্রোদুনোভা ভল্টে যেহেতু খুব ভাল করছে আর পয়েন্টও বেশি পাচ্ছে, তাই ঠিক করেছি সেটাকে দু’নম্বরে নিয়ে আসার। দীপা রিওতে অন্য যে ভল্টটা করছেন সেটার নাম সুকাহারা ৭২০ ডিগ্রী টার্ন। বিশ্বশ্বের জানালেন ফাইনালে এই ভল্ট দিয়েই লড়াই শুরু করবেন দীপা কর্মকার। ওটা শুরুতে করলে আমার বিশ্বাস পয়েন্ট বাড়বে, ব্যাখ্যা কোচের। যত পয়েন্ট পেয়ে ফাইনালে উঠেছে পদকের জন্য চাই আরও আধ পয়েন্ট বেশি। আশা করছি হয়ে যাবে। কারণ যে আটজন ফাইনালে উঠেছে, এদিনই তারা যে কেউ পদক পেয়ে যেতে পারেন। কোচ কথাগুলো বলার সময় পাশে দাঁড়ানো দীপা নিঃশব্দ সমর্থনে ঘাড় নাড়লেন। জীবনে এই প্রথম প্রোদুনোভা ভল্ট পরে করবেন তিনি। অলিম্পিকস ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে কোচের নতুন স্ট্র্যাটেজি তার কতটা মনে ধরেছে জানতে চাইলে দীপা বলেন, কোচ এ পর্যন্ত যা তালিম দিয়েছেন তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে নিয়ে লড়াইয়ে নামব। পরিবর্তনটা আমার পছন্দ হয়েছে। বোঝাই যায় কোচ এবং ছাত্রীর মানসিক রসায়ন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। জিমন্যাস্টিক্সের দুনিয়ায় প্রোদুনোভা ভল্টকে বলা হয় ‘মুত্যু’র ইভেন্ট। দারুণ ঝুঁকির এক খেলা। এ পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র পাঁচজন জিমন্যাস্ট প্রতিযোগিতার মঞ্চে এই ভল্ট দেখাতে পেরেছেন। তাদের মধ্যে একজন দীপা, সারা ভারত আজ রবিবার যার দিকে তাকিয়ে। স্বপ্ন দেখছেন অলিম্পিক পদকের। দীপার কাছে ইভেন্টটা এমন রপ্ত যে, আগেই বলছেন, আমার প্রোদুনোভা এখন সবচেয়ে সহজ ভল্ট। প্রোদুনোভার চেয়ে অন্য ভল্টটাতে আমি একটু পিছিয়ে। আর যেটাতে পিছিয়ে সেটা শুরুতে করলে সাধারণত পয়েন্ট বেশি আসে। ফাইনালে যুক্তরাষ্ট্রের সিমোন বিলেসসহ বিশ্বের সেরাদের আর যারা ফাইনালে উঠেছেন, তাদের মধ্যে দীপা বাদে প্রোদুনোভায় পারদর্শী আর মাত্র একজন। উজবেকিস্তানের ৪১ বছর বয়সী জিমন্যাস্ট ওকসানা চুনোভিতিনা। ভল্টে নাম্বার দেয়া হয় ঝুঁকির মাত্রা এবং নৈপুণ্য দেখে। প্রোদুনোভায় ঝুঁকির মাত্রা সর্বোচ্চ সাত হাজার হলে সুকাহারা ৭২ ডিগ্রী টার্নে ঝুঁকির মাত্রা ছয় হাজার। দীপা বললেন এই ভল্টটাই রপ্ত করেছি রিও গেমস শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে। অলিম্পিকের ভল্টের ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়ার ২৪ ঘণ্টা পর নিজের পদক জেতার কৌশল বাছতেই কেটেছে তার। ব্রাজিলে ১৪ আগস্ট রাতে অর্থাৎ ভারতের স্বাধীনতা দিবসের সকালে পদক যুদ্ধে নামবেন ত্রিপুরার কন্যা। দীপার মানসিক দৃঢ়তা দেখলে অবাক হতে হয়। সকালে তিন ঘণ্টা আর বিকালে তিন ঘণ্টা অনুশীলন করছেন অলিম্পিক পার্কে। প্রস্তুতির কোথাও ঘাটতি নেই। ফাইনালের বাকি সাত প্রতিদ্বন্দ্বীর ভিডিও দেখেছেন ইউটিউবে। নিজের কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে দেখছেন সেটাও। পরিশেষে দীপা বললেন, নিজের ভুলগুলো শোধরাতে পারলে আর প্রথম ভল্টে বাড়তি কিছু পয়েন্ট আনতে পারলে আমার পদক অবধারিত। এখন পদক ছাড়া আমি অন্য কিছু ভাবছি না। এতদূর যখন উঠে এসেছি, খালি হাতে ফিরতে চাই না। দীপা এখন আত্মবিশ্বাসের আরেক নাম।
×