ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিওতে অর্জন বলতে সাগরের পর সোনিয়ার আগের টাইমিং টপকানো, আর এ্যাথলেট শিরিনের দৌড়ে হতাশার চিত্র

বিদায়ের মিছিলে এবার যোগ হলেন বাংলাদেশের দুই নারী এ্যাথলেট

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১৪ আগস্ট ২০১৬

বিদায়ের মিছিলে এবার যোগ হলেন বাংলাদেশের দুই নারী এ্যাথলেট

রিওর এ্যাকুয়াকি সেন্টারে তখনও উত্তাপ ছড়ায়নি। বড় তারকাদের লড়াই ছিল রাতে। সকাল থেকে শুরু হয় বেশ কিছু ইভেন্টের হিট। আনকোরা এ সাঁতার উপভোগ করতে অযথা সময় নষ্ট করেননি দর্শক। তারচেয়েও বড় বিষয় বৈরী আবহাওয়া। ঘর থেকে বেরুনোই দায় বৃষ্টি আর কনকনে ঠা-ায়। তবু চোখে পড়ল হাতেগুনা শ’পাঁচেক উৎসুক সাঁতারপ্রেমী। তাদের মধ্যে অর্ধেকেই আবার সমর্থক। নিজ দেশের প্রতিদ্বন্দ্বীদের উৎসাহ যোগাতেই ব্যস্ত। লড়াইয়ে ছিলেন বাংলাদেশের একমাত্র সাঁতারু সোনিয়া আক্তার টুম্পা। রিও আসার আগে নিজের টাইমিং টপকানোর কথা বলেছিলেন এই কৃতী সাঁতারু। কথা রেখেছেন সোনিয়া। নিজের সেরা টাইমিং ৫০ দশমিক ৮৬ সেকেন্ড টপকে রিও গেমসে সময় নিয়েছেন ২৯ দশমিক ৯৯ সেকেন্ড। মেয়েদের ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে সোনিয়ার এই কীর্তি প্রশংসার দাবি রাখে। আগেরদিন একই ইভেন্টে সাইফুর রহমান সাগর ২৩ দশমিক ৯২ সেকেন্ড সময় নিয়ে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন নিজের গড়া টাইমিং। অলিম্পিকে অংশ নেয়া সাত ক্রীড়বিদের মধ্যে এখনও লড়াইয়ে গলফার সিদ্দিকুর রহমান। আর এ্যাথলেট মেজবাহ বিদায়ের মিছিলে। গলফ এখনও চলমান। গলফ বাদে অন্য খেলায় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন কেবল দুই সাঁতারু। পদকের প্রত্যাশা কেউ করেননি। শুধু বলেছিলেন ভাল টাইমিং করতে চাই। বিশেষ করে নিজের গড়া টাইমিংটা উৎরাতে পারলেই সফল ভাববেন নিজেকে। এদিক থেকে ভাগ্যবান সাগর ও সোনিয়া। আগেরদিন হেসেছিলেন সাগর, আর ব্রাজিল সময় শুক্রবার দুপুরে ললাটে হাসির রেখা টেনে পুল ছাড়লেন সোনিয়া। অলিম্পিকের বড় মঞ্চে যে লক্ষ্য নিয়ে এসেছিলাম, সেটা পূরণ করতে পারায় খুবই ভাল লাগছে। যদিও সব বিদায়ই বিষাদের। ব্যতিক্রম নই আমিও। তবে টাইমিং ভাল করতে পারায় ভাল লাগছে। পুল থেকে উঠে সাঁতারের পোশাক পরিবর্তন করে স্বাভাবিক ড্রেসে ফিরে এ্যাকুয়াটিক সেন্টারে দাঁড়িয়ে বলছিলেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাঁতারু ঝিনাইদহের মেয়ে সোনিয়া। অন্তত নিজের মুখ রক্ষা করতে পেরেছি, এতেই আনন্দিত। ক্যারিয়ারের প্রথম অলিম্পিক খেলতে এসে বুঝতে পারলাম এটা কত বড় মাপের আসর। পদক জয় করা কত সন্মানের। কিন্তু আমাদের তো সে সাধ্য নেই। কাজেই যা পেয়েছি এ নিয়েই সন্তুষ্ট আমি। এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কাজে দেবে। সোনিয়া যাই বলুক, বিদায়ের মিছিল এদিন বড় করলেন দুই বঙ্গললনা। হিটেই আউট-ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের লড়াইয়ে দেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার ও সাঁতারু সোনিয়া আক্তার টুম্পা। রেকর্ডে এটাই লেখা থাকবে। তবে সোনিয়ার ভাষায় আমি নামের সুবিচার করতে পেরেছি। কিন্তু পুরোপুরি হতাশ করেছেন এ্যাথলেট শিরিন। তিনি বাদ পড়েন ১০০ মিটার স্প্রিন্টোর প্রিলিমিনারি রাউন্ডে। অর্থাৎ মূল হিটেই যেতে পারেননি। তিন নম্বরে হিটে নেমে তার সেরা টাইমিং সোনিয়া অতিক্রম করেন ২৯ দশমিক ৯৯ সেন্ডেন্ডে। আটজনের মধ্যে হন তৃতীয়। আর মোট ৮৮ জনের মধ্যে ৬৯তম। আগের টাইমিং ৩০ দশমিক ৮৫। ১০০ মিটার স্পিন্টে শিরিন এক সেকেন্ড সময় বেশি নিয়েছেন। তার সেরা টাইমিং ছিল ১১ দশমিক ৯৯ সেকেন্ড। আর রিওর ট্র্যাকে নিয়েছেন ১২ দশমিক ৯৯ সেকেন্ড। প্রাক হিটে এক নম্বরে নেমে আটজনের মধ্যে হন পঞ্চম। মোট ২৪ জনের মধ্যে ১৭তম। একেবারেই বাজে রেজাল্ট, দৌড় শেষে বললেন সাতক্ষীরার মেয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই এ্যাথলেট। শিরিনের প্রাক হিটে ১২ দশমিক ২৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে মূল হিটে জায়গা করে নেন সিয়েরালিওনের হাফসাতু কামারা। দ্বিতীয় হয়ে অটোমেটিক পরের পর্বে পৌঁছে যান ফিজির সিসিলা সিবুলা, ১২ দশমিক ৩৪ সেকেন্ডে সময় নিয়ে। নিজের পারফর্মেন্সে হতাশ শিরিন। বললেন, এমন বাজে হবে ভাবিনি। তারপরও ক্যারিয়ারের প্রথম অলিম্পিকে দৌড়াতে পেরে আমি খুশি। বিশ্ববিখ্যাত এ্যাথলেটরা যে ট্র্যাকে দৌড়াবেন বা দৌড়াচ্ছেন এমন জায়গায় দৌড়ানোর মধ্যে একটা তৃপ্তি রয়েছে। আমি সেটাই উপভোগ করছি। প্রসঙ্গত রিও গেমসের উত্তেজনার পারদ যখন তুঙ্গে তখন একে একে নিভছে বাংলাদেশের দেউটি। শূটিংয়ে আবদুল্লাহ হেল বাকী আশার প্রদীপ নিয়ে গেমসে এলেও সবচেয়ে বড় হতাশায় বিদায় ঘটে তার। তাও সবার আগে। এরপর তীরন্দাজ শ্যামলী রায় ও সাঁতারু সাগর। এই মিছিলে শুক্রবার যোগ হলেন এ্যাথলেট শিরিন আক্তার ও সাঁতারু সোনিয়া আক্তার। দর্শক বনে গেলেও বাংলাদেশের ক্রীড়া দল গেমস শেষে দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। অর্থাৎ সমাপনীর পর।
×