ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পানিতে ভাসমান সবজি বাগান

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৪ আগস্ট ২০১৬

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পানিতে ভাসমান সবজি বাগান

রিয়াজউদ্দিন জামি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ সবুজ সবজি। প্রতিদিনিই আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকে। এ থেকে পূরণ হয় শরীরের পুষ্টি ও ভিটামিন চাহিদা। সবুজ সবজি উৎপাদনে সাফল্য বয়ে আনছে আধুনিক প্রযুক্তির চাষাবাদ। রাসায়নিক, কীটনাশক ছাড়াই বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। পরিবেশবান্ধব ও ভাসমান সবজি উৎপাদন করে চাষীরা বেজায় খুশি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, সরাইল ও বাঞ্ছারামপুরে চলছে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ। উন্মুক্ত জলাশয় কবলিত এলাকায় বছরজুড়েই চলে সবজি উৎপাদন। মাটিতে নয়, জলাশয়ের ওপর বিছানার মাধ্যমে এ সবজি উৎপাদন হয়। কচুরিপানার স্তূপের ওপর ভর করে কখনও কখনও মাচা বেঁধে ভাসমান এ সবজি চাষ করা হয়। লালশাক, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, ডাঁটা, শসা, চাল কুমড়া, কৈঠা, লাউ, মুলাসহ হারেক রকমের সবজি উৎপাদন হয় ভাসমান পদ্ধতিতে। সারাবছরই মেলে নানা শাকসবজি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ গত কয়েক বছর ধরে জলাশয়ের ওপর ভাসমান সবজি বাগান করতে সবজিচাষীদের উৎসাহিত করছে। এতে ফলও মিলেছে ভাল। অন্তত ৪-৫শ’ বিছানায় এখন সবজি চাষ করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ বলছে, পরীক্ষামূলকভাবে সবজি চাষ করে কৃষকরা সফল হয়েছে। দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা। যে সকল অঞ্চলে বছরজুড়ে পানি জমে থাকে তাদের কর্মসংস্থান এবং খাবারের চাহিদা মেটাতেই ভাসমান সবজি চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশীয় এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েক শ’ কৃষক এখন স্বাবলম্বী। তারা আশার আলো দেখছে। সরাইল উপজেলার বাড়িউড়া, উচালিয়াপাড়া, চুন্টা, নাসিরনগরের চাতলপাড়. সদর ইউনিয়নসহ বাঞ্ছারামপুরের বিস্তীর্ণ জলাবদ্ধ এলাকায় চলছে এ সবজি চাষ। সরাইলের কৃষক এ কে খান ডাঁটা, লালশাক, চাল কুমড়াসহ বিভিন্ন জাতের সবজি ভাসমান বাগানে চাষ করে লাভবান হয়েছেন। এ প্রযুক্তি দেশের জলাবদ্ধ কবলিত এলাকগুলোতে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশের সবজির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। কৃষক মিন্টু মিয়া অনুরূপভাবে করলা, শসা, লালশাক, ঢেঁড়শ, চাল কুমড়া উৎপাদন করে স্থানীয় মানুষের সবজি চাহিদা পূরণ করে চলেছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, কচুরিপানায় বিপুল পরিমাণ জৈবসার থাকায় কচুরিপানা পচার সঙ্গে সঙ্গে সবজিগুলো দ্রুত বড় হয়। অন্যদিকে পানি চলে যাওয়ার পর পচে যাওয়া কচুরিপানা মাটিতে মিশে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। ফসল উৎপাদনে তখন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, ভাসমান সবজি চাষে খরচ খুব কম। তেমন সার দিতে হয় না। শুধু পরিচর্যা করলেই চলে। বাগান শেষ হলে ধান চাষেও জমিতে তেমন সার দিতে হয় না। কারণ মাটির প্রাণ জৈবসার পচে যাওয়া কুচুরিপানা থেকেই প্রাকৃতিকভাবে মিলে যায়। ভাসমান প্রতিটি সবজি বিছানার মধ্যে ৩০-৪০ কেজি সবজি উৎপাদন হয়। প্রতিটি বেড লম্বা থাকে ২০ ফুট, চওড়া থাকে ৪ ফুট। পানির নিচে গভীরতা থাকে ৩ ফুট। তবে সাবধানে চাষ করতে হয় ভাসমান সবজি। ওজন বেশি হয়ে গেলে পানিতে তলিয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। এজন্য কোন অবস্থাতেই সবজির ভরে বেডগুলোর ওজন অতিরিক্ত যাতে না হয় সেদিকে প্রতিনিয়ত নজর রাখাতে হয়। এতে প্রতিটিতে খরচ হয় দুই হাজার টাকা। প্রতি বিছানায় লাভ হয় ৪-৫ হাজার টাকা। সরাইল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার জানান, কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বীজ প্রদান করা হয়েছে। এ উপজেলায় ৬০টি বেড তৈরি করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ আবু নাছের বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে সকল জায়গায় বেশিরভাগ সময় জলাবদ্ধতা থাকে সেসব জায়গায় ভাসমান সবজি উৎপাদন করার জন্য চাষীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
×