ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আলেপ্পো লড়াইয়ে নির্ধারিত হবে সিরিয়ার ভাগ্য

যুদ্ধ চলতে পারে অনির্দিষ্টকাল

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৪ আগস্ট ২০১৬

যুদ্ধ চলতে পারে অনির্দিষ্টকাল

সিরিয়ার সবচেয়ে জনবহুল শহর আলেপ্পোতে লড়াই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। হাজার হাজার বেসামরিক লোক ফের অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। দেশটিতে পাঁচ বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধে বিবদমান পক্ষগুলো এ থেকে যার যার মতো করে সুবিধা আদায় করে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় এই যুদ্ধে নির্দিষ্ট করে কোন পক্ষেরই জয়লাভের স্পষ্ট সম্ভাবনা নেই। সাধারণ মানুষের মানবিক দুর্ভোগই কেবল বাড়বে। -নিউইয়র্ক টাইমস। শহরের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্বাঞ্চলে ত্রাণ সহায়তা কর্মী হিসেবে কাজ করেন আব্দুল কাদের হাবাক। তিনি বলছেন, ‘যুদ্ধের ফলে প্রতিদিনই এখানে মানুষ আহত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। তিনি বলছেন, রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহারের ফলে এখানে বেসামরিক লোকজনের দুর্ভোগ অনেক বেড়ে গেছে। শহরের পশ্চিমাঞ্চল তুলনামূলক নিরাপদ। শাসক বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনী এই অংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তবে সেখানে রয়েছে খাদ্য সঙ্কট। শহরের অনেক অংশেই বিদ্যুত ও পানি সরবরাহ বন্ধ। পশ্চিমাঞ্চলেও সরকারী বাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে কি না তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। সেখানকার ব্যবসায়ী সাফওয়ান বলছিলেন, ‘আজ আমি পছন্দ মতো জিনিস কিনতে এক ঘণ্টার জন্য বাইরে গিয়েছিলাম। কিন্তু যা আমি খুঁজছিলাম তা পাইনি। তিনি বলেন, পেট্রোল পাম্পগুলোতে এখন তেল নিতে গাড়ির লাইন ক্রমেই দীর্ঘতর হচ্ছে। খাবারের দোকানের তাকগুলো খালি হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে আহত সৈন্য ও বিদ্রোহীদের উপচেপড়া ভিড়। গৃহযুদ্ধ শুরুর আগে আলেপ্পো ছিল সিরিয়ার শিল্প ও ব্যবসাবাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র। এখন সেটি সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে যুদ্ধের প্রধান ঘাঁটি হয়ে উঠেছে। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে এই যুদ্ধে যেই জিতবে সেই পাঁচ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে বিজয়ী হিসেবে নিজেদের দাবি করতে পারবে। এদিকে লড়াই তীব্রতর হওয়ার পটভূমিতে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে শহরের বাসিন্দারা। তারা এখন দুই পক্ষের যুদ্ধের মধ্যে আটকা পড়েছে। আলেপ্পোর লড়াই সিরিয়ার চলমান গৃহযুদ্ধের হয় পরিসমাপ্তি ঘটাবে অথবা যুদ্ধকে আরও প্রলম্বিত করবে। ২০১২ সাল থেকে শহরটি কার্যত দুই ভাগ হয়ে আছে। আসাদ বাহিনী শহরের পশ্চিমাঞ্চল আর বিদ্রোহী গ্রুপগুলো পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। সর্বশেষ লড়াই শুরু হয় গত মাসে। রুশ বাহিনীর সহায়তায় সরকারী বাহিনী উত্তর অভিমুখী সরবরাহ লাইনটি বন্ধ করে দেয়। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বাস করে। লড়াই শুরুর পর প্রথম দিকে সরকারী বাহিনী সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও পরে বিদ্রোহীরা নিজেদের অবস্থান সুসংহত করেছে। সরকারী বাহিনীর সহযোগী হিসেবে রুশ বিমানবাহিনী ছাড়াও লেবাননের শিয়া গ্রুপ হিজবুল্লাহর মিলিশিয়ারা এই লড়াই অংশ নিয়েছে। শুক্রবারও সেখানে সরকারী বাহিনীর বিমান হামলায় ১৮ জন নিহত হয়। বিদ্রোহীরা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং ইউরোপীয় ও আরবদেশগুলোর সহায়তা পাচ্ছে। এরকম একটি বিদ্রোহী গ্রুপের রাজনৈতিক শাখার প্রধান জাকারিয়া মালাহিফজি বলেন, ‘এই লড়াই পুরো সিরিয়া যুদ্ধের জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দিতে পারে ধারণা করেই বিদ্রোহীরা শহরের ভেতর ও বাইরে থেকে আসাদ বলে বাহিনীর উপর তুমুল আক্রমণ চালাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারী বাহিনী বিদ্রোহীদের কাছ থেকে শহরের অনেকাংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিলেও সেগুলোর ওপর দখল বজায় রাখা সরকারের জন্য কঠিন হবে। কারণ লড়াইয়ে যা অর্জিত হয়েছে তা বৈদেশিক বাহিনীর (রাশিয়া ও হিজবুল্লাহ) কল্যাণেই। সিরিয়ার সেনাবাহিনীর এখন কার্যত ভগ্নদশা। এদিকে বিজিত এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখা আসাদের জন্য কঠিন হবে। অন্যদিকে বিদ্রোহীদের মধ্যে ইসলামপন্থী জিহাদীরা থাকায় তারাও কতদিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সহযোগিতা পাবে তা নিশ্চিত নয়। যুক্তরাষ্ট্র পরিষ্কার জানিয়ে রেখেছে ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদার দলছুট অংশ আল নুসরা ফ্রন্টের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
×