ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হস্তি কাহিনী

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৪ আগস্ট ২০১৬

হস্তি কাহিনী

ভারতীয় বানে ভাসছে বাংলাদেশ। দেশের উত্তরাঞ্চলের অগণিত মানুষ যখন পানিবন্দী হয়ে পানির ওপর ভাসছে, সেসময় ঘটনাচক্রে ভারতীয় এক বন্যহাতি বানের জলে ভেসে আসে বাংলাদেশে। অভিবাসী এই হাতিটি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড়। আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয় হাতিটি। ঘুম হারাম এলাকার হাজার হাজার মানুষের। স্বস্তিতে নেই বন বিভাগের কর্মকর্তারাও। কূটনৈতিক বিষয়াদি ও ভিসা জটিলতা কাটিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের উদ্ধারে অংশ নেয়ার তৎপরতাও লক্ষণীয়। যেন এক মহাযজ্ঞ। টিভির পর্দায়, সংবাদপত্রের পাতায়, অনলাইন নিউজ পোর্টালে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকের চোখ ছিল বন্যহাতিটির গতিবিধির ওপর। দেশের সীমানা পেরিয়ে বিবিসি বাংলাসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও শিরোনাম হয় হাতিটি। প্রতিদিন হাজার হাজার উৎসুক জনতা ঘটনাস্থলে আসত হাতিটিকে একনজর দেখার জন্য। প্রায় দেড় মাস ধরে পানিতে আটকে পড়া হাতিটির পানিবন্দী জীবনের করুণ কাহিনী যেন এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করছে। শেষ পর্যন্ত উদ্ধার হলো আলোচিত ভারতীয় সেই হাতিটি। বৃহস্পতিবার ট্রাঙ্কুলাইজার-এর মাধ্যমে চেতনানাশক প্রয়োগের পর হাতিটি এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে জামালপুর সরিষাবাড়ী উপজেলার একটি গ্রামের ডোবার পানিতে পড়ে যায়। গভীর পানির মধ্যে পড়ে নড়াচড়া করতে পারছিল না সে। হাতিটি যখন প্রায় তলিয়ে যাচ্ছিল তখন গ্রামের বাসিন্দারা রশি দিয়ে টেনে ডাঙ্গায় তোলে। অজ্ঞান হাতিটিকে একটি বড় আমগাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। উল্লেখ্য, ২৮ জুন ভারতের অসমের উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে ভেসে আসে হাতিটি। এরপর গত প্রায় দেড় মাস ধরে হাতিটি প্রথমে আটকা পড়ে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের নয়াচরে। তারপর সেখান থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ হয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, ফের জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার যমুনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ছুটে বেড়ায় নিরাপদ আশ্রয় ও খাবারের খোঁজে। তারপর উদ্ধারস্থল জামালপুরে মাদারগঞ্জ উপজেলার বীর ভাটিয়ানী চরে। দীর্ঘ এই পরিক্রমায় কম ধকল পোহাতে হয়নি এলাকাবাসীকে। ভারত-বাংলাদেশের উদ্ধারকারী দলের যৌথ অভিযান ব্যর্থ। ব্যর্থ কোক্কেন পদ্ধতি প্রয়োগও। শেষ চেষ্টা হাতি দিয়ে হাতি উদ্ধার। তার জন্য চট্টগ্রামের কমলগঞ্জ থেকে একটি মাদি পোষা হাতি আনা হয়। শুরু হয় দুই দেশের ১৮ জন সদস্যের নানা কৌশল। যখন সব চেষ্টা ব্যর্থ তখন হাতি নিজেই যেন পরাস্ত। হাতি ধরা দিল নাকি ধরা পড়ল সেটার মূল্যায়ন ভিন্ন। তবে এই হাতি জানিয়ে দিল এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতা, আমার ব্যর্থতা। যদিও এই ব্যর্থতার দায় ভারতের ওপরও বর্তায়। এই অভিজ্ঞতা, এই তিক্ততা আগামীর শিক্ষা হোক এটাই প্রত্যাশা। আন্তর্জাতিক বন্য সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, হাতির কোন দেশ নেই, ওরা যখন যে দেশে অবস্থান করে তখন সে দেশেরই সম্পদ। সেই হিসাবে এই হাতি এখন বাংলাদেশের অভিবাসী। সে এখন এদেশে নাগরিকত্ব পাবে নাকি স্বদেশে ফিরে যাবে সেটা সরকারের ব্যাপার। তবে পানিতে দীর্ঘদিন অবস্থান ও খাদ্যের অভাবে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে হাতিটি। পানিবাহিত নানা রোগেও আক্রান্ত হতে পারে সে। দ্রুত হাতিটি সুস্থ হয়ে উঠুক, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের যতœবান হওয়া দরকার। সবারই প্রত্যাশা সুস্থ স্বাভাবিকভাবে হাতিটি ফিরে যাক তার পরিবারে, হাতির পালে মিশে ঘুরে বেড়াক পাহাড় থেকে পাহাড়ে, নিজ আবাসস্থল অরণ্যের গহিনে। কারণ বন্যেরা বনেই সুন্দর।
×