ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমবাজারে সুবাতাস

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৪ আগস্ট ২০১৬

শ্রমবাজারে সুবাতাস

অবশেষে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিল সৌদি আরব। অবশ্য এজন্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। নিয়মিত মনিটরের মধ্য দিয়ে করণীয় ঠিক করার দূরদৃষ্টি ও কার্যকর উদ্যোগই এ সাফল্য বয়ে এনেছে। এ প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হিসেবে গত জুনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব সফরে যান। সেখানে সৌদি বাদশাহর সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। তারই সুফল হিসেবে কয়েক মাসের মধ্যে সেদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার খুলে গেল। এবার সেখানে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও গত দু’বছর যাবত সেখানে আংশিকভাবে শ্রমবাজার চালু ছিল বলা যায়। দেশ থেকে প্রায় ৬০ হাজার গৃহশ্রমিক সেখানে চাকরি পান। বর্তমানে ১৩ লাখ বাংলাদেশী সৌদি আরবে বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। সৌদি আরবই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। ২০০৮ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক নিত সৌদি আরব। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার মূলত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক- সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর বাইরের বড় বাজার হলো মালয়েশিয়া। এটা ঠিক যে, বর্তমানে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ কিছুটা সীমিত হয়ে এসেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জনশক্তি রফতানি বাড়াতে প্রচলিত শ্রমবাজারের বাইরে ১৬টি দেশের তালিকা করা হয়। এ দেশগুলো হলো : জাপান, হংকং, তাইওয়ান, ইতালি, বেলজিয়াম, জার্মানি, স্পেন, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, চেকসেøাভাকিয়া, পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা ও জিম্বাবুইয়ে। এই দেশগুলোর পরিস্থিতি দেখতে প্রবাসী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে পাঁচটি দলও গঠন করা হয়। অবশ্য এখন পর্যন্ত আমরা এই ১৬টি দেশে উল্লেখ করার মতো শ্রমবাজার তৈরিতে সমর্থ হইনি। পরবর্তীকালে নতুন করে মরিশাস, কম্বোডিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশ এবং কানাডার মতো কয়েকটি উন্নত দেশে শ্রমবাজার সন্ধানের প্রক্রিয়া শুরু হয়। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে আগামীতে লক্ষ্যমাত্রার অন্তত পঞ্চাশ ভাগ অর্জনের পথে সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি সাধন। সারাবিশ্বে নতুন শ্রমবাজার খুঁজে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে আরও উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়ার বারবার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী শ্রমশক্তি তৈরি করার কাজটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন করা চাই। বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে শ্রমবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলমান রয়েছে। এইসঙ্গে ভাষাগত প্রশিক্ষণ প্রদানও জরুরী। আমাদের যে মানের শ্রমশক্তি আছে, তাকেই সম্ভাব্য সব বাজারে রফতানির জন্য কূটনৈতিক ও ব্যবসায়িক উদ্যোগ বাড়াতে হবে। শ্রমিক ও সাধারণ পর্যায়ের কর্মীদের বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য পাঠানোর পাশাপাশি এখন থেকেই ডিপ্লোমাধারী লাখো ব্যক্তিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের দক্ষ কর্মী প্রেরণের পরিকল্পনা নেয়া দরকার। এ লক্ষ্যে নতুনভাবে শ্রমবাজারের সন্ধান যে জরুরী, সেকথা বলাই বাহুল্য। প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশের চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানকে আকৃষ্ট করার জন্য নতুন অফার দেয়া যেতে পারে। এজন্য বেতন নির্ধারণে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে জনশক্তি রফতানির প্রক্রিয়াটি শুরু করা চাই। রিক্রুটিং এজেন্সি, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে কূটনৈতিক মিশন- সব পক্ষের সহযোগিতা ও সমন্বয় সম্ভব হলে আগামীতে বৈদেশিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
×