ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দাবি পরিবারের ॥ সন্তান হত্যার অভিযোগে স্বামীর মামলা দায়ের, ৫ দিনের রিমান্ডে

তানজিন মানসিক রোগী- স্বপ্নে নির্দেশনা পেয়ে জবাই করে ছেলেমেয়েকে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৪ আগস্ট ২০১৬

তানজিন মানসিক রোগী- স্বপ্নে নির্দেশনা পেয়ে জবাই করে ছেলেমেয়েকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বাসাবোতে ছোট্ট দুই সন্তানকে গলাকেটে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন মা তানজিন আক্তার। তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। তবে কি কারণে সন্তানদের হত্যা করেছেন সে সম্পর্কে তিনি সুস্পষ্ট কোন বক্তব্য দেননি। ইতোপূর্বে তিনি তার সন্তানদের হত্যার কোন চেষ্টা করেননি বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে বলেছেন। গ্রেফতারকৃত মা মানসিকভাবে অসুস্থ কিনা তা নিশ্চিত হতে চায় পুলিশ। এজন্য মাকে পুলিশের তরফ থেকে চিকিৎসক দেখানো হতে পারে। পরিবার ও স্বজনদের দাবি, তানজিন মানসিক রোগী। ইতোপূর্বে তিনি স্বপ্নে স্বামী ও সন্তানদের হত্যা করার নির্দেশনা পেয়েছেন বলে বহুবার পরিবারকে জানিয়েছিলেন। পরিবার বিষয়টি আমলে নিয়ে আরও উন্নত চিকিৎসা করালে হয়তো এমন ঘটনা নাও ঘটতে পারত। অকুস্থল থেকে একটি রক্তমাখা চাপাতি উদ্ধার হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের ক্রাইম সিন বিভাগ প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেছে। শুক্রবার রাতে রাজধানীর সবুজবাগ থানাধীন উত্তর বাসাবোর ১৫৭/২ নম্বর সাততলা ষড়ঋতু নামের বাড়ি থেকে মাশরাফি ইবনে মাহবুব ওরফে আবরার (৭) ও হুমায়রা বিনতে মাহবুব ওরফে তাকিয়ার (৬) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আবরার রাজধানীর খিলগাঁও বাগিচা হাফিজিয়া মাদ্রাসার নূরানী শাখার (আরবী শিক্ষার প্রাথমিক ধাপ) ছাত্র ছিল। আর তাকিয়া বাসার কাছেই দীপ শিখা কিন্ডার গার্টেনের কেজি শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। ভাইবোনের লাশ উদ্ধারকালে মা তানজিন আক্তার (৩১) বাসায় ছিলেন না। এতে করে পুলিশের সন্দেহ বেড়ে যায়। শনিবার ভোর চারটার দিকে অন্য একটি বাসা থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সবুজবাগ থানার ওসি আব্দুল কুদ্দুস ফকির জানান, মা নিজ সন্তানকে গলাকেটে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। তবে কি কারণে তিনি এমন হত্যাকা- ঘটালেন সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন তথ্য দেননি। একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। সেসব তথ্য যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। হত্যাকা-ের পেছনে প্রকৃত কারণ উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যেই তানজিনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত। জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এদিকে তানজিন আক্তার আটক হওয়ার পর শনিবার নিহত দুই শিশুর পিতা ওয়াসার কম্পিউটার অপারেটর মাহবুবুর রহমান (৩৬) বাদী হয়ে সবুজবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় একমাত্র আসামি হিসেবে স্ত্রীর নাম উল্লেখ করেন তিনি। মামলায় মাহবুবুর রহমান বলেন, ২০০৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তানজিন আক্তারের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। তারা বাসাবোর ওই বাড়িতে ভাড়ায় প্রায় আট মাস ধরে বসবাস করছেন। শুক্রবার ছোট শ্যালক মগবাজার মাতৃছায়া আবাসিক স্কুলের ছাত্র আহসানুল হক মিঠু বাসায় যায়। জুমার নামাজের পর খাওয়া দাওয়া সেরে সবাই আরাম করি। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শ্যালককে স্কুলে দিতে বের হই। এ সময় দুই সন্তানকে নিয়ে ওদের মা বাসায়ই ছিল। রাত সোয়া নয়টার দিকে ভাই মোস্তাফিজুর রহমান ফোনে দুই সন্তান খুনের খবর জানায়। দ্রুত বাসায় গিয়ে দেখি দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে প্রথম রুমের বিছানার ওপর মেয়ে তাকিয়ার গলাকাটা লাশ দেখতে পাই। স্ত্রীকে ডাকতে ডাকতে ভেতরে ঢুকে মেঝেতে আবরারের লাশ গলাকাটা অবস্থায় দেখতে পাই। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। স্ত্রী তানজিন দুই সন্তানকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে রাত সোয়া নয়টার মধ্যে যেকোন এক সময় গলাকেটে হত্যা করে। নিহত শিশুদের ফুপু লাইলা নূরসহ পরিবারের অনেকেরই দাবি তানজিন মানসিক রোগী। বিয়ের পরপরই বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর ফার্মগেটের গ্রীন রোডে ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দেখানো হয়। চিকিৎসক নিয়মিত ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন। তিনি নিয়মিত নামাজ রোজা আদায় করতেন। পবিত্র কোরান তেলাওয়াত করতেন। তবে তানজিন অধিকাংশ সময়ই চুপচাপ থাকত। সন্তান বা স্বামীর প্রতিও তেমন কোন খেয়াল রাখত না। যখন ওষুধ সেবন করত, তখন ভাল থাকত। তানজিন স্বপ্নে তার দুই সন্তানকে মেরে ফেলেছেন বা নিহত শিশুদের নানা-নানিকে মেরে ফেলেছেন অথবা তিনি তার স্বামীকে মেরে ফেলেছে বলে পরিবারের সদস্যদের জানাতেন। এসব স্বপ্ন দেখে তানজিন খুবই দুশ্চিন্তা করত। তানজিনের পিতা অনেক আগেই মারা যান। খিলগাঁও বাগিচা এলাকায় তানজিনের পিতার বাড়ি। সেখানে তানজিনের মা, ভাই ও বোনরা বসবাস করেন। তানজিনদের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বারে।
×