ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করার বিধির খসড়া চূড়ান্ত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৪ আগস্ট ২০১৬

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করার বিধির খসড়া চূড়ান্ত হচ্ছে

শাহীন রহমান ॥ দলীয় ভিত্তিতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিধিমালা ও আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত হতে পারে আজ। এ লক্ষ্যে বিধিমালা ও আচরণবিািধর খসড়ার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে কমিশনের বৈঠক ডাকা হয়েছে। জানা গেছে, কমিশনের বৈঠকে বিধিমালা খসড়া চূড়ান্ত হলে তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে। এর পরই নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। জানা গেছে, ডিসেম্বর নাগাদ এ দুটি সিটির নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হতে পারে। জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিধিমালার খড়সা চূড়ান্ত করার আগে সংশোধিত বিধিমালার প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এসব প্রস্তবনা নিয়ে আজ বেলা ১১টায় কমিশনের বৈঠক বসছে। তা দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে। প্রস্তাবনায় মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে এক হাজার ভোটারের স্বাক্ষরসংবলিত তালিকা জমা দেয়ার বিধানের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাই কেবল দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে দলীয় প্রার্থী হতে হলে তাকে অবশ্যই দলীয় প্রধান বা দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির স্বাক্ষরযুক্ত প্রত্যয়নপত্র মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেয়ার বিধান থাকছে। এর বাইরে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে মন্ত্রী-এমপিদের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞাও থাকছে। এতে রাষ্ট্রের সুবিধাভোগী, লাভজনক পদধারীদের পাশাপাশি অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিষেধাজ্ঞার বিধানও যুক্ত করা হচ্ছে। কয়েকটি ছাড়া বিধিমালার অন্য শর্তগুলো পৌরসভা নির্বাচন বিধিমালা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধিমালার অনুরূপ থাকছে। গত পৌরসভা নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে শুরু করা হয়েছে। এর আগে সব স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন নির্দলীয়ভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনার আইন সংসদে পাস হওয়ার পর সিটি কর্পোরেশনসহ সবগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালায় নতুন করে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। গত পৌরসভা নির্বাচনের আগে দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচনের বিধান রেখে বিধিমালা সংশোধন করা হয়। এর পরই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিধিমালা ও আচরণবিধিমালায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে। তবে নতুন আইনের আগেই দেশের বেশিরভাগ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষে ১৮০ দিনের মধ্যে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। কমিশন জানিয়েছে, ডিসেম্বর নাগাদ দুটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিধিমালায় নতুন করে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। বিশেষ করে আইন অনুযায়ী মেয়র পদে নির্বাচন হবে দলীয় ভিত্তিতে। আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আজ রবিবারের বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। এর পর আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে দুটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণে কমিশনের বৈঠক করা হবে। তবে অন্যান্য স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনের মতো সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ বাদে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের জন্য নির্দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হবে। বিধিমালায় এ বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখেই দলীয় প্রার্থীর জন্য দলীয় প্রতীক এবং নির্দলীয় প্রার্থীর জন্য নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত প্রতীক ব্যবহার করা হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বাইরে যে কোন প্রার্থী মেয়র পদে নির্বাচন করতে চাইলে তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করতে হবে। বিধিমালার খসড়া প্রস্তাবনার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার উপ-সচিব মহসিনুল হক বলেন, আজ রবিবার বৈঠকের মাধ্যমে বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত হবে। এজন্য বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কমিশনের বৈঠক রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে এব হাজার ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকার বিষয়ে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে এক হাজার ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকার একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে আমরা এ প্রস্তাবেব বিরোধিতা করেছি। কারণ একজন ভোটারে পক্ষে এক হাজার ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিক প্রদান করা কঠিন হয়ে পড়বে। রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন ও প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইন প্রণয়নের পর প্রথম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। দিনক্ষণ ঠিক না হলেও আগামী ডিসেম্বর নাগাদ এ দুটি নির্বাচন একত্রে করার সিদ্ধান্ত রয়েছে কমিশনের। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চিঠিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতেও কমিশনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সংশোধিত বিধিমালা প্রসঙ্গে কমিশন সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচনের মতো সিটি নির্বাচনেও প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না মন্ত্রী-এমপিসহ রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচনের জন্য বিদ্যমান আচরণবিধি ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিতে পরিবর্তন এনে নতুন কিছু বিধিবিধান যুক্ত করা হচ্ছে। এ নির্বাচন রাজনৈতিক পরিচয়ে হলেও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর কমিশন। আগে কমিশনের অধীনে ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ এবং ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের পর ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ এবং ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম সভা হয়। আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদকাল হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। আর মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করারও আইনী বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ হিসাবে নারায়ণগঞ্জের ২৬ ডিসেম্বর ও কুমিল্লার আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফলে ইসিকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ এবং ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কুমিল্লার ভোট শেষ করতে হবে। তবে জানা গেছে, বিভিন্ন বিবেচনা মাথায় রেখে দুটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন একদিনেই করতে চায় ইসি। এজন্য তারা সুবিধাজনক সময় হিসেবে স্কুল-কলেজগুলোতে বার্ষিক শেষে এবং এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগের সময়কেই বেছে নিতে চায়। এ সময়কে ধরেই দুটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ রয়েছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মেয়াদ শেষের আগেই তারা দুটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় বলে জানা গেছে। এজন্য দুটি সিটির নির্বাচন একদিনে করার চিন্তাভাবনা বেশি রয়েছে বলে জানা গেছে।
×