ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৪ আগস্ট ২০১৬

শোকের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেখতে দেখতে ৪১ বছর পেরিয়ে গেছে। রাত পোহালেই সেই ভয়াল কালরাত, ১৫ আগস্ট। জাতির সব হারানোর দিন। একজন প্রকৃত নেতার যেসব গুণাবলী থাকা প্রয়োজন, তার সব গুণ নিয়েই জন্মেছিলেন ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ। যাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিল বর্ণিল, যাঁর কণ্ঠে ছিল জাদু। যিনি রচনা করেছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিজয় ইতিহাস। এত কিছুর পরও শেষ পর্যন্ত তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে ঘাতকের হাতে। শোকাবহ আগস্টের আজ চৌদ্দতম দিন। ৪১ বছর আগে ১৯৭৫ সালের এই কালিমাময় দিনে জাতি হারিয়েছে তার গর্ব, ইতিহাসের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। একাত্তরের পরাজিত শক্তির ঘৃণ্য সর্বনাশা চক্রান্তে একদল ঘাতকের পৈশাচিকতার বলি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার-পরিজন। রচিত হয় ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। কিন্তু তাতে তো এমন একজন রাষ্ট্রনায়ককে একটি জাতির হৃদয় থেকে চিরতরে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। তিনি ফিরে আসেন প্রতিটি উৎসবে, আনন্দ-বেদনায়। তিনি যে মৃত্যুঞ্জয়ী। রাজনীতির সঙ্গে সামান্যতম সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও নারী-শিশুও সেদিন রেহাই পায়নি ঘৃণ্য, কাপুরুষ এই ঘাতকচক্রের হাত থেকে। বিদেশে থাকার জন্য প্রাণে বেঁচে যান কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দিনটি তাই বাঙালীর ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত। কাল সেই শোকের দিন, কান্নার দিন। জাতীয় শোক দিবসে আগামীকাল বাঙালী গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে বাংলাদেশ নামক ভূখ-ের স্বাপ্নিক স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় যথাযোগ্য মর্যাদায় কাল পালিত হবে বঙ্গবন্ধুর ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী। আগস্ট মানেই শোক, আগস্ট মানেই শোকে আপ্লুত বাঙালীর কান্নাভেজা পরম বেদনা। আগস্ট এলেই শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসে বাঙালীর মাথা। ডুকরে কেঁদে ওঠে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতির হৃদয়। চারদিকে কেবলই স্রোত নামে শোকস্তব্ধ মানুষের। মানুষ কাঁদে। বেদনায় গান গায়। নামে শোকের মিছিল। কালোয় কালোয়, শোকে শোকে বেদনাবিধুর হয়ে ওঠে গোটা দেশ, দেশের মানুষ। পিতাহীন দেশে, সঙ্কটে উপনীত বাঙালী তাই এখনও আশ্রয় খোঁজে তাঁরই আদর্শে, রেখে যাওয়া কন্যা শেখ হাসিনার পরম ছায়ায়, ভালবাসায়। মুক্তি মেলে মানুষের, তাঁরই স্বপ্নাকাশে। মানুষ যূথবদ্ধ হয়। সম্মিলিত শোক রূপ নেয় শক্তিতে। নতুন করে বেঁচে থাকার নতুন শপথ নেয় বাঙালী। কেননা জীবনের সুখ, স্বস্তি, আরাম, মোহ, অর্থকড়ি; সবকিছু ত্যাগ করার এক মহান মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সাধারণ গরিব-দুঃখী মানুষের কল্যাণে কীভাবে একজন মানুষ অবলীলায় বিসর্জন দিতে পারেন নিজের সব চাওয়া-পাওয়া, তার কালজয়ী ইতিহাস রচে গেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শোকের মাস আগস্টের চৌদ্দতম দিন ছিল শনিবার। পহেলা আগস্ট থেকে প্রতিদিনই অজস্র সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘ইতিহাস কথা কয়’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন প্রধান অতিথি থেকে শনিবার ধানম-ির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে ৩ দিনব্যাপী এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন । স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোল্লা মোঃ আবু কাওসারের সভাপতিত্বে আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি ও সংগঠনের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ধ্বংস করার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাই আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।
×