ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৪ দলের আলোচনা সভা

খালেদা জিয়ার ঐক্যের আহ্বান জাতির সঙ্গে উপহাস

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৪ আগস্ট ২০১৬

খালেদা জিয়ার ঐক্যের আহ্বান জাতির সঙ্গে উপহাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ঐক্যের আহ্বানকে ‘জাতির সঙ্গে উপহাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা বলেন, যারা জঙ্গীবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে তারাই আবার জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে। যারা জঙ্গীবাদ সৃষ্টি ও লালন-পালন করে, স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে চলে, আন্দোলনের নামে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে- তাদের সঙ্গে কোনদিন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য হতে পারে না। খুনীদের দোসর খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোন ঐক্য হতে পারে না। জোটের নেতারা জাতির পিতার হত্যার নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারী ও বেনিফিসিয়ারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। শনিবার রাজধানীর খামারবাড়ী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৪ দলের আলোচনা সভায় নেতারা এ দাবি জানান। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, জাসদের অপর অংশের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া, ন্যাপের এ্যাডভোকেট এনামুল হক, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডাঃ অসিত বরণ রায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুনুর রশিদ, আওয়ামী লীগের আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, নগর আওয়ামী লীগের শাহে আলম মুরাদ, সাদেক খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের মোল্লা আবু কাওছার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভা শেষে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী সেজে মানুষ হত্যা করে বাংলাদেশটাকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে। তাই তাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কোন ঐক্য হতে পারে না। আমাদের জাতীয় ঐক্য ১৬ কোটি মানুষের সঙ্গে হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের দিক এগিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না। তোফায়েল আহমেদ জঙ্গীবাদ দমনে বিএনপির জাতীয় ঐক্যের আহ্বানকে ‘জাতির সঙ্গে উপহাস’ উল্লেখ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের কমিটিতে রেখে এবং নিহত জঙ্গীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে কখনও জাতীয় ঐক্য হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইতোমধ্যে দেশে জঙ্গীবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, যারা ২০১৪ সালে নির্বাচন বানচাল করার জন্য দেশে জ্বালাও-পোড়াও চালিয়েছিল ও ২০১৫ সালে সরকার পতনের জন্য পেট্রোলবোমা হামলা করে নিরীহ মানুষ হত্যা করেছিল- তারাই পেছন থেকে জঙ্গীবাদকে উস্কে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে দেশে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার যেমন হতো না, তেমনি মুক্তিযুদ্ধকালে সংগঠিত যুদ্ধাপরাধের বিচারও সম্ভব হতো না। বিএনপি জাতীয় ঐক্যের আহ্বানের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিএনপি জাতীয় ঐক্যের কথা বলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। যারা যুদ্ধাপরাধীর দল, জামায়াতের সঙ্গে জোট করতে পারে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনদিন ঐক্য হতে পারে না। তিনি বলেন, ঐক্য হতে হবে দেশের জন্য, শান্তির জন্য। সেই স্বার্থে দেশের মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বিএনপি বেকায়দায় পড়ে ঐক্যের বিলাপ করছে। কিন্তু এতে লাভ নেই। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যের কাজ করে যাচ্ছি। সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ নাসিম বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোন ঐক্য হবে না জানিয়ে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট নাশকতা ও জঙ্গীবাদের মদদদাতা। খালেদা জিয়া জঙ্গীবাদ সৃষ্টির মূল পরিকল্পনাকারী। তাই তাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাবার কোন অধিকার থাকতে পারে না। তাদের সঙ্গে কোন ঐক্য হতে পারে না, হবেও না। জনগণ জেনে গেছে বিএনপি-জামায়াতেরাই এই জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে। কিন্তু এর নেপথ্যের মদদদাতা, কুশীলব ও সামরিক-বেসামরিক জড়িত কর্মকর্তাদের বিচারও করতে হবে। এদের খুঁজে বের করতে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের অগ্রযাত্রা ও ব্যাপক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে খালেদা জিয়া দেশী-বিদেশী দালালদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তার এই ষড়যন্ত্র ১৪ দলের নেতাকর্মীরা দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করবে। বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে উন্নয়নের সোপানে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ১৫ আগস্ট ঘাতকরা দেশের সে অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়। আর যেন কোন ১৫ আগস্ট না ঘটে সেদিকে সতর্ক থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একাত্তরেও ধর্মের নামে সন্ত্রাস চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা সম্মিলিত আকাক্সক্ষার কাছে পরাজিত হয়েছে। এবারও মানবিক চেতনা বিকাশের মাধ্যমে জঙ্গীবাদীদের পরাজিত করতে হবে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তের-ঋণ শোধ করে তাঁর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের এখনই ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। আমরা এখন যুদ্ধের ভেতর দিয়ে আগ্রসর হচ্ছি, তাই আমাদের এখন ইতিহাস চর্চা না করে সামনের দিকে এগুতে হবে। সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে পরাজিত করতে হবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের কঠোর সমালোচনা করে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, উনি উচ্চ শিক্ষিত হয়েও মূর্খের মতো কথা বলছেন। গণতন্ত্র না থাকায় যদি জঙ্গী হামলা হয়ে থাকে তাহলে কি আমেরিকায় গণতন্ত্র নেই? ফ্রান্স, জার্মান, ইংল্যান্ডেও জঙ্গীরা কী হামলা হচ্ছে না। সেখানে কি তাহলে গণতন্ত্র নেই? তাহলে আপনারা কোন গণতন্ত্রের কথা বলছেন?
×