ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ শরিফুল আলম

তারুণ্যের আয়ের উৎস হতে পারে ডিজিটাল স্টুডিও

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ১৩ আগস্ট ২০১৬

তারুণ্যের আয়ের উৎস হতে পারে ডিজিটাল স্টুডিও

দেশের গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিদিনের বিভিন্ন প্রয়োজনে ছবি তোলার দরকার হয়, এ কারণে তাদের গ্রাম থেকে কাছের বাজার বা শহরে যেতে হয় যাতে তাদের অর্থ ও সময় দুটোই ব্যয় হয়। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার এবং প্রযুক্তি পণ্য সহজলভ্য হওয়ার ফলে সম্প্রতি আমাদের দেশে ডিজিটাল ক্যামেরার বহুবিধ ব্যবহার বেড়েছে। এর ফলে শহরের পাশাপাশি গ্রামেও চালু হয়েছে ডিজিটাল স্টুডিও। অল্প সময়ে ছবি তোলা যায় বলে এটি খুব দ্রুততার সঙ্গে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কম বিনিয়োগে ও অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায় তাই ব্যবসা হিসাবেও এটি খুব লোভনীয় ও সম্ভাবনাময়। যা যা করা যায় ডিজিটাল স্টুডিওতে স্ট্যাম্প, পাসপোর্ট থেকে শুরু করে যে কোন মাপের ছবি তোলা ও প্রিন্ট করা যায়। কম্পিউটারের মাধ্যমে ছবিকে ছোট বড় করা, পুরনো বা নষ্ট হয়ে যাওয়া ছবিকে নতুনের মতো করা, সাদা কালো ছবিকে রঙিন করা, বিভিন্ন বর্ডার দেয়া, ক্যালেন্ডার বানানোসহ অনেক কিছু করা সম্ভব। ছবি রাখার ফ্রেম বা এ্যালবাম বিক্রি করা যেতে পারে। বিয়ে বা জন্মদিনের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানের ছবি তুলেও যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। এ ছাড়াও অতিরিক্ত সেবা দেয়ার জন্য কম্পিউটারে গ্রামীণফোনের এচজঝ (জেনারেল প্যাকেট রেডিও সার্ভিস) বা ঊউএঊ (এ্যানহ্যান্সড ডাটা রেট ফর গ্লোবাল ইভলুশন) সংযোগ নিয়ে গ্রাহকদের ইন্টারনেট, ই- মইলের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংস্পর্শে আনা যাবে। যারা করতে পারেন মোটামুটি পড়াশোনা জানেন বা মাধ্যমিক পাস করেছেন এমন যে কোন ব্যক্তি এই ব্যবসা করতে পারেন। কম্পিউটার এবং আলোকচিত্র সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেয়ার জন্য দুই মাসের একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করে ডিজিটাল স্টুডিও দেয়া যায়। ছবি তোলা শুধু যন্ত্রপাতি থাকলেই হবে না, জানতে হবে ছবি কিভাবে তুললে ভাল হয়। সাধারণ ক্যামেরা বা এমএলআর ক্যামেরায় ছবি তোলা এবং ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলার মধ্যে মৌলিক কোন তফাৎ নেই। ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে ফলাফল জানা ও ছবির মান এবং ত্রুটিগুলোও বোঝা যায়। মনে রাখতে হবে ক্যামেরাটি খুব স্পর্শকাতর এবং একটি ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে নির্দিষ্টসংখ্যক ছবি তোলা যায়। ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবিকে কম্পিউটারে সম্পাদনা করার সুযোগ থাকে বলে ফটোশপ বা যে কোন ফটো সম্পাদনার সফটওয়্যার সম্পর্কে জানা থাকলে ছবিকে আরও শিল্পমানসম্পন্ন ও সুন্দর করা যাবে। কম্পিউটার ব্যবহার ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবির ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার জানা সবচেয়ে জরুরী বিষয়। কম্পিউটার সম্পকে প্রাথমিক জ্ঞান থাকা যে কেউ এটি চালাতে পারেন। যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন সেগুলো হলো কম্পিউটারে লেখা, সিডি চালানো, নতুন ফাইল খোলা ও সেভ করতে জানলেই কাজ চলে। কম্পিউটারে থাকা ফাইলের ছবিকে সম্পাদনা করার জন্য ফটোশপ জানতে হবে। ফটোশপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে ছবিকে আরও সুন্দর বা কাজের উপযোগী করে তোলা যায়। এরপর একটি ফটো প্রিন্টার কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা জানা দরকার। ফটো প্রিন্টারের ব্যবহার একটি ফটো প্রিন্টার কীভাবে ব্যবহার করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে, তা জানতে হবে। যেমন ছবি তোলার পর প্রিন্ট করার সময় ছবির আলো, রং, উজ্জ্বলতা এগুলো প্রয়োজনমাফিক বাড়িয়ে কমিয়ে নিলে প্রিন্টকৃত ছবির মান অনেক উন্নত হবে। ডিজিটাল ক্যামেরা স্টুডিওর জন্য ভাল মানের ক্যামেরা ব্যবহার করা উচিত। এই ব্যবসায় যারা নতুন তাদের মানের সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট ক্যামেরার নিয়ম-কানুন ভাল করে জানতে হবে। তাই ক্রয় করার পর ক্যামেরার সঙ্গে প্রাপ্ত ম্যানুয়াল বা বিধিমালা মনোযোগ দিয়ে পড়া অবশ্য কর্তব্য। ম্যানুয়াল পড়ার সময় নির্দিষ্ট ক্যামেরার ফ্লাশ সম্পর্কিত বিষয়গুলো ভাল করে পড়তে হবে। ডিজিটাল ক্যামেরা যেহেতু আকারের দিক দিয়ে ছোট তাই এই ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার সময় স্ট্যান্ড ব্যবহার করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে। ডিজিটাল ক্যামেরার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো তাৎক্ষণিক ছবি দেখা যায় বলে ছবি তোলার ক্ষেত্রে অনেক সময় অসাবধানতার কারণে যে ছবি খারাপ আসে তা মুছে আবার নতুন করে নেয়া যায়। এই ক্যামেরায় যেহেতু নিজস্ব মেমোরি বা অতিরিক্ত মেমোরি কার্ড ব্যবহার করার সুবিধা রয়েছে তাই প্রচুর পরিমাণে ছবি তোলা যায়। নেগেটিভ স্ক্যানার এচপি স্ক্যানজেট ২ হাজার ৪০০ স্ক্যানারে এ৪ সাইজ পর্যন্ত যে কোন ছবি স্ক্যান করা সম্ভব। আর ভেহো ৩৫এমএম ফিল্ম স্ক্যানার দিয়ে যে কোন নেগেটিভ থেকে ছবি স্ক্যান করে কম্পিউটারে নেয়া যায়। বর্তমানে বাজারে ক্যাননের ৪ হাজার ২০০ এস মডেলের স্ক্যানারের দাম ৮ হাজার টাকা, এপসনের ৩ হাজার ৪৯০ মডেলের দাম ১১ হাজার টাকা ও ৩ হাজার ৫৯০ ফটো স্ক্যানারের দাম ১৩ হাজার টাকা। ফটো পেপার ও কালি ফটো প্রিন্টারের মান ঠিকভাবে কাজে লাগাতে ভাল মানের ফটো পেপার ও কালি ব্যবহার করা উচিত। কম দামের ফটো পেপার ও কালি ব্যবহার করলে ফটো প্রিন্টার খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া ফটো ফ্যাকাসে হয়ে যেতে পারে। ফটো পেপারের ক্ষেত্রে গ্লসি বা ম্যাট জাতীয় পেপার ব্যবহার করা যেতে পারে। সবচেয়ে প্রয়োজন যে বিষয়টি সেটি হলো প্রিন্টার যে ব্র্যান্ডের সেই একই ব্র্যান্ডের কাগজ ও কালি ব্যবহার করা উচিত। স্টুডিও বসানো ডিজিটাল স্টুডিও তৈরি করতে এর সেট নির্মাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এজন্য অবশ্যই সঠিক স্থান নির্বাচন করতে হবে। প্রথম বিষয়টি হলোÑ আলোকসজ্জা। দুটি ছাতাকৃতির লাইট ও উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। তবে টাংস্টান হ্যালোজেন বাল্ব ব্যবহার করতে পারলে উৎকৃষ্ট মানের ছবি তোলা যাবে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ইলেক্ট্রনিক ফ্লাশ লাইট ব্যবহার করা যাবে। পেছনের পটভূমিটি হালকা নীল রঙের কাপড় দিয়ে করা যেতে পারে অথবা বড় কোন প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি রাখা যেতে পারে। স্টুডিওর সঙ্গে একটি আয়না ঘর থাকলে ভাল হয়। মূল সেট তৈরি করতে পাঁচ-ছয় ফুট দৈর্ঘ্যরে ছোট ঘর হলেও চলবে। নিচের ছবিতে একটি আধুনিক স্টুডিও তৈরি করার নিয়মাবলী ছবি একে উচ্চতা ও দূরত্ব পরিমাপ করে দেখানো হয়েছে। লাভজনক খাত ডিজিটাল স্টুডিওর ব্যবসা বেশ লাভজনক। এত স্থায়ী খরচ হলো যন্ত্রপাতি ও স্টুডিও নির্মাণ এবং চলতি খরচ হলো ফটো পেপার ও কালির খরচ। চারটি পাসপোর্ট আকারের ছবির জন্য কাগজ ও কালিসহ খরচ পড়ে প্রায় ৩০ টাকা। বর্তমানে স্টুডিও মালিকরা ছবি তোলা ও প্রিন্ট করানোর জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। অন্যান্য খাতেও লাভের পরিমাণটা বেশ ভালো। যেমনÑ ছবির জন্য ফ্রেম তৈরি করা বা ছবি রাখার এ্যালবাম বিক্রি করা। ফটো এডিটিং করা ছবি তোলার পর ছবি ইডিটিং করতে হবে। এজন্য বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন সফটওয়্যার যেমনÑ এ্যাডোবি ফটোশপ, পেইন্ট শপ প্রো, মাইক্রোসফট ডিজিটাল ইমেজ প্রো বা ইউলিড ফটো ইমপ্যাক্টের মতো প্রফেশনাল সফটওয়্যার ব্যবহার করলে উচ্চমানের ছবি পাওয়া যাবে।
×