ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাবার মুখ দেখেনি সন্তান ॥ বাধা যৌতুক

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৩ আগস্ট ২০১৬

বাবার মুখ দেখেনি সন্তান ॥ বাধা যৌতুক

মেধাবী আরিফা। জীবন যুদ্ধে আজ পরাজিত। বাবার বোঝা হয়ে তার সংসারে দেড় বছরের সন্তানসহ দিন কাটাচ্ছে। জীবন সংসার তার কাছে আজ দুঃস্বপ্ন। জানে না সন্তানকে কিভাবে মানুষ করবে। এ জীবনে আর নতুন করে সংসার করতে চায় না আরিফা। বেঁচে থাকার জন্য একটা চাকরি চায়। এখন পাড়া প্রতিবেশীদের বাড়িতে কাজ করে কোন রকমে জীবনটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার চাকিরপাশা ইউনিয়নের বাজেমোজরাই গ্রামের কলা বিক্রেতা আবুল হোসেনের মেয়ে আরিফা। তিন বছর আগে টগরাইহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে। পেয়েছিল জিপিএ-৫। বাবার অভাবের কারণে আর লেখাপড়া করতে পারেনি। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি প্রচ- আগ্রহ ছিল আরিফার। গরিব ঘরে জন্ম বলে তার সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। এ সময় খুনিয়াটারী গ্রামের আবদুল জব্বারের ছেলে শাহীন মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। আরিফা খুব মেধাবী। ক্লাসে কোনদিন দ্বিতীয় হয়নি। তার বাবা শুধু কলা বিক্রি করে সংসার চালায়। শাহীন মিয়াদের বাড়ি ছিল ঢাকায়। ব্যবসার জন্য রাজারহাটে এসেছিল। কিছুদিন ভাল ব্যবসাও করেছিল। এক সময় শাহীনের বাবা খুনিয়াটারী গ্রামে বাড়ি করেছিল। এখানেই একদিন আরিফাকে স্কুলে যাবার পথে দেখে পছন্দ হয় শাহীনের। বিয়ের প্রস্তাব দেয় আরিফার বাবাকে। বিয়েতে কোন যৌতুক না নেয়ার অঙ্গীকার করে শাহীন। যৌতুক ছাড়া মেয়ে দান করতে পারার আনন্দে একরকম জোর করেই মেয়েকে বিয়ে দেন আবুল হোসেন। কিছুদিন যেতেই স্বামী শাহীন মিয়ার আসল চেহারা বের হয়ে আসে। শুরু করে আরিফার ওপর নির্যাতন। এক সময় আরিফা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। কিন্তু নির্যাতন বন্ধ হয় না। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়ি ফিরে আসে সে। এ নিয়ে কয়েক দফা সালিশ বৈঠক বসে। গ্রামবাসী যখন স্বামী শাহীন মিয়ার এই অমানসিক নির্যাতনের বিচার শুরু করে, তখন এক রাতে শাহীন মিয়া ও তার বাবা-মা বাড়ি ঘর ফেলে আবারও ঢাকায় পালিয়ে যায়। দিন যায় মাস যায়, তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে আরিফা ও তার বাবা আবুল হোসেন। কাজ হয়নি। আরিফা জানায়, আমি পড়াশোনা করতে পারিনি। শত কষ্টেও আমার সন্তানকে লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করব। আমার কষ্ট জন্মের পর সন্তান বাবার মুখ আজও দেখতে পায়নি। Ñরাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম থেকে
×