ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমজীবীদের জন্যে

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৩ আগস্ট ২০১৬

শ্রমজীবীদের জন্যে

যাদের শ্রমে গড়ে ওঠে প্রতিষ্ঠান, উৎপাদন এবং দেশ, তারাই যদি থাকে উপেক্ষিত, তাহলে মানবকল্যাণ হবে সুদূরপরাহত। শ্রমজীবী মানুষের রক্ত, ঘাম ও শ্রমে গড়ে ওঠা সভ্যতার নিদর্শনগুলো জানান দেয় কী নিদারুণ পরিশ্রমের ভেতর দিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রাসাদ, ঘরবাড়ি, নির্মাণ কাজসহ সকল স্থাপনা। শ্রমিকের দু’হাতের শক্তির ভেতর লুকিয়ে আছে সৃষ্টি আর নির্র্মাণের উৎস। তাদের সৃজনে গড়ে ওঠা নানাবিধ পণ্যসামগ্রীর নিত্য ব্যবহারকালেও কেউ মনে করে না শ্রমজীবী মানুষের প্রাণান্তকর শ্রমের ফসল এটি। বিনিময় তার মেলে না যথাযথ সম্মানী, পারিশ্রমিক। পেনশন তো নয়ই। অসহায়ত্ব, বেকারত্ব, নিয়মিত বেতন ভাতা না পাওয়া শ্রমিক জীবনের অনিবার্য অবস্থাকে দৃষ্টিগ্রাহ্য করে। শ্রমজীবী মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের কথা কাগজে কলমে লিপিবদ্ধ থাকলেও বাস্তবে তার দেখা মেলে না। তাদের আইনানুগ অধিকার বাস্তবায়ন ও পারস্পরিক সম্পর্কের আইনগত ভিত্তি সুদৃঢ় করা, দক্ষতা উন্নয়নের কথা কেবলই শোনা যায়, বাস্তবে এর অবস্থা ও অবস্থান করুণা সঞ্চার করে। ‘দেয় নাই ওরা পারিশ্রমিক মজুরের অধিকার/যা দিয়েছে তাহে জোটেনি মোদের ক্ষুধা তৃষ্ণা ক্ষণিকের।’ বিদ্রোহী কবি নজরুল এ আক্ষেপ করেছিলেন। শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় শিকাগোতে যে আত্মদান হলো, তার স্মরণে প্রতি বছর পালন করা হয় মহান মে দিবস। ধ্বনিত হয় নানা আশ্বাস। কিন্তু শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। তারা কর্মস্থলে মরছে কখনও পুড়ে, কখনও বা চাপা পড়ে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, শ্রমিক অধিকারের কোন সুরক্ষা নেই। এ দেশে শ্রমিক অধিকার রক্ষায় আইনী বিধিবিধান থাকলেও তার ব্যবহার সীমিত ক্ষেত্র বিশেষে। কাঠামোও দুর্বল। শ্রম অধিকারের সুরক্ষাদান, নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টির কাজটি কঠিন হলেও দুঃসাধ্য নয়। আইনী সুরক্ষার অনুপস্থিতি, শ্রমিকদের অসচেতনতা, বিকল্প কর্মের অভাবসহ নানা সমস্যা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অধিকার লঙ্ঘিত হলে আইনের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের আইনী ও আর্থিক সহায়তা পাওয়া দুষ্কর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিক কল্যাণে এগিয়ে এসেছেন। দেশে প্রথমবারে মতো কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাকবলিত নিহত বা কোন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন শ্রমিকরা। সেই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তাও। একই সঙ্গে বেসরকারী শ্রমিকদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ডও গড়া হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের কল্যাণ সাধনে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তহবিলে জমা রয়েছে ১৬০ কোটি টাকা। দেশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে লভ্যাংশের অংশ এ তহবিলে জমা হচ্ছে, যা যুগান্তকারী ও ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। এর মাধ্যমে শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণে বিশাল দিগন্ত উন্মোচিত হলো। দূর হলো শ্রমিকদের অসহায়ত্ব। দুটি শ্রমিক হাসপাতালও গড়ে তোলা হচ্ছে। পেশাগত কারণে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসা দেয়া হবে বিনামূল্যে। শ্রমিকদের জন্য পৃথক হাসপাতাল এই প্রথম হচ্ছে। এই তহবিল থেকে কর্মরতকালে অসুস্থ বা মৃত্যু হলে অনুদান পাবে। মেধাবী সন্তানরা পাবে আর্থিক সহায়তা। থাকছে বীমা ব্যবস্থা। বাংলাদেশের লাঞ্ছিত নিপীড়িত শোষিত বঞ্চিত শ্রমিকদের জীবনে আশার আলো নিয়ে এসেছেন শেখ হাসিনা। তাদের সার্বিক উন্নতির এবং দুর্ভোগ লাঘবের লক্ষ্যে তাঁর গৃহীত শ্রমিকবান্ধব পদক্ষেপ শ্রমজীবী মানুষের জীবনে নিয়ে এলো সূর্যালোকের মতো আলোকিত নতুন দিগন্ত। কোন দুরভিসন্ধি, প্রতিবন্ধকতা যেন এ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়Ñ সেজন্য সতর্কতা প্রয়োজন।
×