ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্প শুধু কাটছাঁটই হচ্ছে

এক যুগে কাজ মাত্র ৮শ’ মিটার

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১৩ আগস্ট ২০১৬

এক যুগে কাজ মাত্র ৮শ’ মিটার

সমুদ্র হক ॥ প্রায় এক যুগ আগে বগুড়া ছিলিমপুর বাইপাস সড়কের ধারে অত্যাধুনিক শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সময় বলা হয়েছিল, দ্রুত পৌঁছার জন্য ২০ মিটার চওড়া এবং ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি লিংক রোড তৈরি করা হবে। এরপর চলেছে প্রকল্প বন্ধ, পুনরায় রিভাইজড করে প্রকল্প পুনরায় তৈরি, প্রকল্প কাটছাঁট করে পথের দৈর্ঘ কমানো, তারপর চওড়া কমানো এমন জটিলতার ফাঁদ। এভাবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা জটিলতার পাকে পড়ে জনস্বার্থের এই প্রকল্পটি। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বগুড়ায় জনসভায় এই লিংক রোড দ্রুত নির্মাণের আশ্বাস দিলে কোন রকমে ৮শ’ মিটার কাজ হওয়ার পর ফের কাজ বন্ধ হয়েছে। কবে এই কাজ শুরু হবে তা অনিশ্চিত। বাড়ছে রোগীদের ভোগান্তি। শজিমেক হাসপাতাল ২ হাজার ৪ সালে স্থাপিত হওয়ার পর কথা ছিল মোহাম্মদ আলী জেনারেল হাসপাতালের ধার দিয়ে মালগ্রাম হয়ে একটি সড়ক শজিমেক হাসপাতালে যুক্ত হবে। এই লিংক রোডের দৈর্ঘ ধরা হয় ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার ও প্রস্থ ২০ মিটার। ব্যয়ের প্রক্কলন করা হয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা। গত ১২ বছরে তিন দফায় প্রকল্প কাটছাঁট করে বর্তমানে দৈর্ঘ্য কমিয়ে নির্ধারণ হয় ২ দশমিক ৬৫ কিলোমটার এবং প্রস্থ কমিয়ে করা হয় ১০ মিটার। সর্বশেষ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয় গত বছর ১২ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়া সফরের সময় জনসভায় রাস্তাটি দ্রুত নির্মাণের নির্দেশ দেয়ার পর। তারপর ধীর লয়ে কাজ করে পাথারের মধ্যে ৮ মাসে মাত্র ৮শ’ মিটার রাস্তা নির্মাণের পর কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। সড়ক ও জনপথ সূত্র জানিয়েছে, যে টুকু বরাদ্দ মিলেছে তা দিয়ে ওই পরিমাণ রাস্তা নির্মিত হয়েছে। পুনরায় অর্থ বরাদ্দ না হলে কাজ শুরু করা যাবে না। শজিমেক হাসপাতাল স্থাপিত হওয়ার পর শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে সরাসরি পৌঁছার কোন সড়ক ছিল না। এখনও নেই। যেতে হয় স্টেশন রোড থেকে তিন মাথা হয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার ঘুর পথে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রথম প্রকল্পে ছিল মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের ধার দিয়ে ২০ মিটার চওড়ার ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ লিংক সড়ক নির্মিত হবে। ওই সময় ব্যয় ধরা হয় ১৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি একই বছর অক্টোবর মাসে গৃহীত হয়ে ২০০৫ সালের মে মাসে পরিকল্পনা কমিশনে যায়। চূড়ান্ত অনুমোদনের পর প্রথমে ১ দশকি ১২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ৮শ’ মিটার অংশে মাটি কাটার পর প্রকল্পটি ঝুলে যায়। এর ৬ বছর পর ২০১১ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পুনরায় উদ্যোগ নিয়ে নতুন করে ব্যয়ের প্রক্কলন করা হয় ৭২ কোট ৫১ লাখ টাকা। কাটছাঁট করা হয় প্রকল্পটি। নকশা সংশোধন হয়ে রাস্তার দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ২ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। চওড়া কমে হয় সাড়ে ১১ মিটার। প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপন হওয়ার সময় তা আটকে যায়। ২০১৫-১৬ সালে সামান্য অর্থ ২ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই অর্থেই পূর্বের মাটি কাটা অংশে ৮শ’ মিটার রাস্তার কাজ হয়ে অর্থাভাবে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর হঠাৎ করেই এই প্রকল্পে তৃতীয় দফায় কাটছাঁট করে দৈর্ঘ্য কমিয়ে ২ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার ও চওড়া কমিয়ে ১০ মিটার করা হয়। এর মধ্যে কাজ হওয়া ৮শ’ মিটার অংশ ধরা হয়। ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয় ৮৩ কোটি টাকা। বর্তমানে কাজ বাকি আছে ১ দমমিক ৮৫ কিলোমিটারের। প্রকল্প ব্যয়ের হিসাব ধরা হলে দেখা যায় প্রথম নক্সার সড়কের দৈর্ঘ্য প্রস্থের চেয়ে বর্তমানে যা ঠেকেছে সেই হিসাবে ব্যয় বেড়েছে অন্তত ২৪ গুণ। সড়ক কমানোর পরও কেন এত ব্যয় বাড়ল এই বিষয়ে সওজ সূত্র জানায়, পূর্বের নক্সায় যে ভূমি ছিল সেখানে অবকাঠামো গড়ে ওঠায় জমির দাম ও ক্ষতিপূরণের অঙ্ক দুই-ই বেড়েছে। এখন শুধু জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণে ব্যয় হবে অন্তত ৬৮ কোটি টাকা। বাকি অর্থে পাকা সড়কের কাজ। সর্বশেষ প্রকল্পে যে ব্যয় প্রাক্কলিত হয়েছে সেই অর্থ কবে বরাদ্দ হবে তাও অনিশ্চিত।
×