ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তবু লক্ষ্য পূরণের আনন্দ সাঁতারু সাগরের

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৩ আগস্ট ২০১৬

তবু লক্ষ্য পূরণের আনন্দ সাঁতারু সাগরের

ব্রাজিল সময় দুপুর ১টা, রিওর এ্যাকুয়াটিক সেন্টার বেশ সরগরম। গেমসের অন্যমত আকর্ষণ সাঁতার। সঙ্গত কারণে দর্শকের ঢল এখানেই। বিশ্বের তারকা সাঁতারুরাও প্রস্তুত। হিট আর ফাইনাল পরবর্তী পদক জয়ের পালা। বিশ্বের বাঘা বাঘা সাঁতারুদের মাঝে হাত-পা ঝাঁকিয়ে শরীরের আড়মোড়া ভাঙছিলেন, নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করে নিচ্ছিলেন মাহফিজুর রহমান সাগর। অবশেষে স্বপ্নের অলিম্পিকে শুরু প্রতিযোগিতা। প্রিয় ইভেন্ট ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে ভালই সাঁতরালেন, আটজনের মধ্যে পঞ্চম। ২৩ দশমিক ৯২ সেকেন্ডে সাঁতার শেষ করে নিজের সেরা টাইমিং ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যটা ঠিকই পূরণ করেছেন সাগর। এটাই ছিল তার রিও অলিম্পিকের লক্ষ্য। সেটা করতে পেরে মহাখুশি। ভারতে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জজয়ী সাগরের টাইমিং ছিল ২৪ দশমিক ০২ সেকেন্ড। রিও আসার আগে বড় কোন লক্ষ্য ছুড়ে দেইনি। আশারবাণী শোনাইনি ঝড় তোলার। টার্গেট বলতে ছিল নিজের টাইমিং টপকানো। আমি সফল, খুব ভাল লাগছে। লড়াই শেষে সুইমিং পুল থেকে ওঠে তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছতে মুছতে বলে যাচ্ছিলেন ২৪ বছর বয়সী বাংলাদেশের এই কৃতী সাঁতারু। পঞ্চাশ মিটার ফ্রি স্টাইলের ৫ নম্বর হিটে নেমে আট জনের মধ্যে পঞ্চম বড় কথা নয়, প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছি, এতেই আমি আনন্দিত। কথা রেখেছি বলে বাহবার দরকার নেই। অলিম্পিকে পদক জিততে না পারলে প্রশংসা দাবি ঠিক নয়। আমি সেটা চাচ্ছি না। রিওর গড়া টাইমিং আগামীর অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজে দেবে। পরবর্তী যে কোন আসরে এটা উতরানোর চেষ্টা করব। প্রসঙ্গত, সব মিলিয়ে হিটে অংশ নেয়া ৮৫ জনের মধ্যে ৫৪তম হয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই সাঁতারু। হিট থেকে সেমিফাইলে জায়গা করে নেয়া ১৬ জনের মধ্যে সেরা টাইমিং হাঙ্গেরিয়ান সাঁতারু স্টিফেন্সের, ২২ দশমিক ১০ সেকেন্ড। সাগর বললেন, আত্মবিশ্বাস ছিল রিওতে নিজেরে টাইমিং পার করতে পারব। প্রস্তুতি ভালই ছিল। তবে থাইল্যান্ডে স্কলারশিপে গিয়ে কাঁধে পাওয়া আঘাতে কিছুটা দুঃশ্চিতায় ছিলাম। যদিও রিওতে অনুশীলন করার সময় সেটা টের পাওয়া যায়নি। আর প্রতিযোগিতায় নামার পর কোন সমস্যাও হয়নি। আর এ কারণেই পেরেছি। নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি, বললেন গত লন্ডক অলিম্পিকসে বাংলাদেশের পতাকা বাহক এই সাঁতারু। গেমসের আগে বাকিরা যখন একাগ্রতার প্রতিমূর্তি, তখন প্রতিযোগিতা শুরুর আগের দিনই তাকে দেখা গিয়েছিল বেশ খোশ মেজাজে। অনুশীলন পরবর্তী বিশ্রামের পর গেমস ভিলেজে আনন্দ, ফূর্তিতে মাতিয়ে রেখে ছিলেন নিজেকে। ৫০ মিটার সাঁতার কাটা মানে মুহূর্তের মামলা। পদক জয়ের প্রত্যাশায় রিও আসা অন্য দেশের সাঁতারুরা যখন পুরোদস্তুর টেনশনে, তখন পুরোপরিই ব্যতিক্রম দেখা গিয়েছিল মাহফিজুর রহমান সাগকে। কোন টেনশন নেই। কারণ একটাই, নেই কোন বড় চাওয়া-পাওয়া। এ প্রসঙ্গে সাগর বললেন, রিও আসার পর থেকে নিজেকে সব সময় সতেজ রাখার চেষ্টা করেছি। আমি ভাল ভাবেই জানতাম, অলিম্পিকের বড় মঞ্চে পদকের লড়াই পর্যন্ত এগোতে পরব না। হিটেই আউট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল। ফলে এখানে আসার পর যে কয়দিন অনুশীলনের সুযোগ পেেেয়ছি, চেষ্টা করেছি টাইমিং বাড়ানোর। চেষ্টার সুফল পেয়ে এখন আগামীর কথা ভাবছি। সাগরের জন্ম পাবনার দ্বীপ চরে। নৌবাহিনীর এই সাঁতারুর ঘরোয়া সাফল্য বেশ ঈর্ষণীয়। মোট ৭১ পদকের মধ্যে রয়েছে ৫০ স্বর্ণ, ১১ রৌপ্য আর ১০ ব্রোঞ্জ। ৬ স্বর্ণসহ আন্তর্জাতিক পদক ১৯। গত কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়মিতই সাঁতরাচ্ছেন সাগর। অংশ নিয়েছেন ২০১২ ইস্তামবুুল বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে। পরের বছর বার্সিলোনা বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপ, ২০১৪ সালে গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমস ও ২০১৫ কাজান বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে। অভিজ্ঞতা, সাফল্যের ভা-ার সমৃদ্ধ। কিন্তু অলিম্পিকের মতো আসরে এই টাইমিং নিয়ে পদকের চিন্ত করা যায় না। অলিম্পিকে দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নিতে পেরেছি, এটাই আমার বড় প্রাপ্তি। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মাঝে আটলান্টিক দাঁড়িয়ে সাগর যাই বলুক, বাংলাদেশ থেকে আসা সাত ক্রীড়াবিদের মধ্যে বিদায়ের মিছিলে যোগ দিয়েছেন তিনি। প্রথমেই বাদ পড়েন শূটার আবুদল্লাহ হেল বাকী। পরবর্তীতে তীরন্দাজ শ্যামলী রায়। তৃতীয় প্রতিযোগী হিসেবে সাগর।
×