ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অলিম্পিকের অন্যতম আকর্ষণ এ্যাথলেটিক্স শুরু

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৩ আগস্ট ২০১৬

অলিম্পিকের অন্যতম আকর্ষণ এ্যাথলেটিক্স শুরু

রিও অলিম্পিকের সবচেয়ে বড় তারকা মাইকেল ফেলপস না উসাইন বোল্ট, দুই দিগন্তের তারকা হলেও বোদ্ধারা মনে করেন, দু’জনেই রিও গেমসের অবিসংবাদিত সম্রাট। কেউ কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই। মেসি-রোনাল্ডোর মধ্যে কে বড় তারকা এ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু মার্কিন সাঁতারু ফেলস আর জ্যামাইকান স্প্রিন্টার বোল্টের জনপ্রিয়তা সমান। ফেলপসের সাঁতার দেখতে দর্শক যেমন মুখিয়ে থাকেন। ঠিক একইভাবে ‘বিদ্যুত বোল্ট’ ধামাকা উপভোগ করতেও প্রহর গুনছে। এ কারণেই রিওতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বড় তারকা এ দু’জনই। ফেলপস ইতোমধ্যে মাতিয়ে তুলেছেন রিও গেমস। কিন্তু দেখা মিলেনি বোল্টের। সে অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে আজ। গেমসের অন্যতম আকর্ষণ এ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে গড়াচ্ছে। ব্রাজিল সময় সকাল থেকে বেশ কিছু ইভেন্টের প্রিলিমিনারি রাউন্ড তথা হিটের মাধ্যমে সরগরম হয়ে উঠবে অলিম্পিক পার্কের ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড। পাশাপাশি পদকের চমকও রয়েছে। প্রথমদিনে থাকছেন বাংলাদেশের চারবারের দ্রুততম মানব মেসবাহ আহমেদ। ১০০ মিটার স্প্রিন্টের প্রিলিমিনারি রাউন্ডে দেখা মিলত তার। অলিম্পিকে মেসবাহর লক্ষ্য বলতে ভাল টাইমিং। অনুশীলন পরবর্তী গেমস ভিলেজে আলাপচারিতায় বাগেরহাটের কৃতী এ্যাথলেট বললেন, নিজের টাইমিং টপকাতে পারলেই মনে করব আমি স্বার্থক। যথেষ্ট হয়েছে। অলিম্পিকের বড় মঞ্চে এর বেশি চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। বড় কোন প্রত্যাশা না থাকায় মাথার ওপর চাপ নেই। পুরোপুরিই টেনশনমুক্ত। সঙ্গত কারণে বেশ প্রাণবন্ত মনে হচ্ছিল মেসবাহকে। অলিম্পিকে খেলছেন, এটাই যেন বড় বিষয়। নিজেও তাই বললেন, ভাল টাইমিংয়ের জন্য দৌড়ানোই একমাত্র লক্ষ্য। পদক দূরের কথা। ধারে কাছে যাওয়ার স্বপ্নও দেখি না। স্বাদ থাকলেও আমাদের সাধ্য নেই। নির্জলা এ সত্যটাকে সামনে রেখে অলিম্পিক খেলতে এসেছি। বিশ্বের নামী দামী তারকাদের মিলন মেলায় শরিক হতে পেরেই আমি গর্বিত। মেসবাহর আইডল উসাইন বোল্ট। বোল্টই আমার অনুপ্রেরণা। সুযোগ পেলে একটা ছবি তোলার চেষ্টা করব। কাছে গিয়ে কথা বলতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব। আমার ঘরটা বোল্টের দৌড় আর নানা অঙ্গ-ভঙ্গির ছবিতে ভরা। স্বপ্নের তারকাকে খুব কাছ থেকে এক নজর দেখতে পরলেও ভাল লাগবে। এদিকে প্রস্তুত উসাইন বোল্ট। রিওতে তার রেকর্ড বুক সুবিন্যস্ত করতে। ইতিহাস গড়া ‘ট্রিপল-ট্রিপল-এর অপেক্ষায় তিনি। বেজিং থেকে লন্ডন, টানা দুই অলিম্পিকে তিনটি করে স্বর্ণপদক তার দখলে। এবার হ্যাটট্রিক পূরণের পালা। প্রিয় ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টের সঙ্গে ৪ল্প১০০ মিটার রিলে, এ্যাথলেটিক্সের সবচেয়ে মর্যাদার তিন ইভেন্টে দৌড়াবেন স্বর্ণপদকের লক্ষ্যে। উসাইন বোল্টের রেকর্ড গড়ার এই দৌড় দেখতে যারা মুখিয়ে আছেন তাদের জন্য সুখবরই বটে। গেমস শুরুর আগে অন্য এ্যাথলেটরা যখন একাগ্রতার প্রতিমূর্তি, পদকের চিন্তায় মগ্ন। তখন বোল্টকে দেখা গেল খোশ মেজাজে। বৃহস্পতিবার অনুশীলন মাঠ থেকে গেমস ভিলেজ, যেখানেই বোল্ট সেখানেই মিডিয়ার ভিড়। আর বোল্ট নিজেও বেশ হাসি-খুশি মনে আবদার মিটিয়ে গেলেন মিডিয়াকর্মীদের। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মামলা। শেষে অবধারিত জয়- আর সেই বিশ্ব বিখ্যাত পোজ- ‘লাইটনিং বোল্ট’। রিওতেও বোল্টের সেই রোশনই দেখতে ইতোমধ্যে টিকেট কাউন্টার শূন্য। সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে বোল্টের এই তিন ইভেন্টের। কিংস্টনে ২০০২ জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সবচেয়ে কম বয়সী বোল্ট সোনার পদক গলায় ঝুলিয়ে ছিলেন রেকর্ড গড়ে। সেই শুরু। আর কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়াটা অভ্যাসে পরিণত করে স্প্রিন্টের অবিসংবাদিত সম্রাট হয়ে উঠেন ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি এই বিশ্বনন্দিত এ্যাথলেট। কোন মন্ত্রে এত সফল বোল্ট? পরিষ্কার করলেন নিজেই, বললেন নিজের প্রতি আস্থা আর সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস। ট্র্যাকের লড়াইয়ে কখনও আস্থা হারাই না। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসই আমার অনুপ্রেরণা। ২০০৪ এ্যাথেন্স অলিম্পিকে ইনজুরির কারণে প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে গিয়েছিলেন। কেবল হাতাশ নয়, দারুণ এক যন্ত্রণা নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছিল। সেই হতাশাই ১২ বছরে বদলে দিয়েছে গতিদানবের ক্যারিয়ার। পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের শিখরে। এবার ২৯ বছর বয়সী বোল্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চান রিওর সাফল্য গলায় ঝুলিয়ে। নিজেই খোলাশা করলেন, রিওতেই ক্যারিয়ারের শেষ দেখছি। বোল্ট বললেন, আমি যখন দৌড় শুরু করি দর্শকরা যখন করতালি দিতে থাকে, সাফল্যের জন্য চিৎকার শুরু করে তখন আমার গতি আরও বেড়ে যায়। নার্ভস হই না। এবারও সব ঠিকঠাক মতোই হবে। সে আত্মবিশ্বাস নিয়েই ট্র্যাকে নামব। হ্যাটট্রিকের স্বপ্ন নিয়ে অলিম্পিকস ইতিহাসে অমর হয়ে থাকতে তিনিই যে ট্র্যাকের অবিসংবাদিত সম্রাট হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখাতে প্রস্তুত সেটা আলাপেই সুস্পষ্ট। গত লন্ডন অলিম্পিকস শুরুর আগে কেউ বাজি ধরেনি ১০০ মিটার নিয়ে। যতই জাস্টিন গ্যাটলিন, জোহান ব্লেকের মতো তারকা থাক, বিশেষজ্ঞরা আগেভাগেই বলে দিয়েছিলেন, বোল্ট হাসতে হাসতেই সোনা নিয়ে যাবেন। ঠিক তাই ঘটে। এবার রিওতেও ব্যত্যয় ঘটবে বলে মনে হয় না। বোল্ট শুধু বিশ্বসেরা স্প্রিন্টারই নন। ক্রীড়াবিশ্বের অন্যতম গ্ল্যামার তারকাও। অসাধারণ মানুষ, মিশুক। এত বড় তারকা হওয়া সত্ত্বেও নেই কোন অহঙ্কার। পরিচিত আর অপরিচিত বলে কোন কথা নেই। নিরাপত্তার দেয়াল ভেঙ্গে ভাগ্যক্রমে কেউ সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারলে, কাউকে হতাশ করেন না। কথা বলেন হাসিমুখে। তার বিশ্ব বিখ্যাত সেই পোজ দিতেও দ্বিধা বোধ করেন না। সেটা যে পোশাকেই হোক। ফলে তিনি কেবল বড় তারকাই নন। উদার মনের মানুষও বটে। সাফল্যের পাশাপাশি একজন নিপাট ভদ্রলোক হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়ে হয়ে থাকবেন তিনি। রিওতে সেই মঞ্চ প্রস্তুত উসাইন বোল্টের জন্য।
×