ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ৮শ’ ঘেরের মাছ

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৩ আগস্ট ২০১৬

যশোরে বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ৮শ’ ঘেরের মাছ

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ ভবদহ অঞ্চলসহ অভয়নগর উপজেলার প্রায় অর্ধশত গ্রাম মঙ্গল ও বুধবারের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে। এসব অঞ্চলে কমবেশি ৮শ’টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ডুবে গেছে প্রায় এক হাজার সাতশ’ হেক্টর রোপা আমন ও সবজির ক্ষেত। আর এতে বিপাকে পড়েছে মৎস্যচাষীরা। প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস জানিয়েছে, ভবদহের জলাবদ্ধ এলাকার প্রেমবাগ, সুন্দলী, চলিশিয়া, পায়রা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম ও বাঘুটিয়া, সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের কয়েকটি অঞ্চল জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, ভবদহ এলাকার সবক’টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। এতে মৎস্যচাষীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলা অফিসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানিয়ে তথ্য পাঠানো হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সামদানী জানান, প্রায় এক হাজার ৭০০ হেক্টর রোপা আমন ও সবজির ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মূল্য নির্ধারণের কাজ করা হচ্ছে। এদিকে শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, সুন্দলী ইউনিয়নের সবক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া চলিশিয়া ইউনিয়নের বেদভিটা সরকারী প্রাথমিক, ডুমুরতলা সরকারী প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। এলাকার অনেক কাঁচাবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে। ভবদহের জলাবদ্ধ এলাকার মধ্যে রয়েছে-ধলিরগাতি, বনগ্রাম কোটা, বাগদাহ, বলারাবাদ, আন্ধা, ডুমুরতলা, চলিশিয়া, বেদভিটা, দিঘলিয়া, সড়াডাঙ্গা, সুন্দলী, ফুলেরগাতি, ডহর মশিয়াহাটি, গোবিন্দপুর, হরিশপুর, কালিশাকুল, ভবানিপুর, রাজাপুরসহ ৪০টি গ্রাম। চরম দুর্ভোগে পড়েছে এসব গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। ভারি বর্ষণে ভবদহের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় অনেক পরিবার তাদের পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছে। মৎস্য ঘের মালিকরা আহাজারি করছেন। ধোপাদী গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, প্রায় বিশ বিঘা জমিতে তিনি ঘের করেন। বৃষ্টির পানিতে সব ভেসে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। ওই গ্রামের মৎস্যচাষী ইউছুফ আলী শেখ জানান, তিনি আড়তদারের কাছ থেকে মাছ বিক্রি বাবদ অগ্রিম এক লাখ টাকা নিয়েছেন। শুক্রবার মাছ ধরার জন্য জেলেও ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু ঘের ভেসে সব মাছ চলে গেছে। প্রেমবাগের ফারুক হোসেন জানান, তার ২০ বিঘার ঘেরে প্রায় ২০০ মণ মাছ ছিল। ঘেরের সব মাছ চলে গেছে। টানা বর্ষণ ও দমকা হাওয়ায় এলাকার অনেক গাছপালা ভেঙ্গে ও উপড়ে পড়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে ও তার ছিঁড়ে পড়ায় গ্রামের পর গ্রাম বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পায়রা ইউনিয়ন ইউপি চেয়ারম্যান বিষ্ণুপদ দত্ত জানান, ভবদহের ২৬ ভেন্ট স্লুইস গেট দিয়ে ২৭টি বিলের পানি শ্রীহরি নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়। বর্তমানে শ্রীহরি নদী পলি পড়ে ভরাট হওয়ায় জোয়ারের সময় পানি প্রবাহিত হতে না পারায় ভবদহ অঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চলিশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাদির মোল্যা জানান, তার ইউনিয়নে কয়েকশ’ পরিবার পানিবন্দী। সুন্দলী ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশ রায় জানান, ভবদহের সমস্যার কারণে প্রতিবছর সরকারের রাস্তা-ঘাট মেরামতের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ হয়। গত দুই দিনের টানা বর্ষণে পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে অধিকাংশ কাঁচা-পাকা রাস্তা।
×