ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মোঃ আখতারুজ্জামান

জঙ্গীবাদের শেকড়ের সন্ধানে

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৩ আগস্ট ২০১৬

জঙ্গীবাদের শেকড়ের সন্ধানে

বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় দুটি তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। একদল সরাসরি মহান ভাষা আন্দোলনে বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনা থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত যে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটেছে তার ভিত্তিতে ইতিহাস রচনা করেন। আর অন্য দল ১৭৫৭ সালের পলাশী বিপ্লবে মুসলিম নবাবদের পরাজয়ের ঘটনা থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা করতে চান। তাদের মূল দর্শন হলো মুসলিম জাতীয়তাবোধের চেতনা। বাংলাদেশের জঙ্গীবাদের উৎস খুঁজতে গিয়েও অনেকে সেই ব্রিটিশদের ‘ভাগ করো, শাসন করো নীতি’ অর্থাৎ হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ তৈরির সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে এনে জঙ্গীবাদের উৎস খুঁজতে চান। সন্দেহ নেই যে, এ ধরনের অধ্যয়ন অপ্রাসঙ্গিক নয়, তবে বাহুল্য। কেননা, মূল অধ্যয়ন ক্ষেত্র থেকে এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের দূরে নিয়ে যায়। ফলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী উপেক্ষিত হয় বা আড়ালেই থেকে যায়। সাম্প্রতিক আমাদের দেশে জঙ্গীবাদ বা ধর্মীয় উগ্রতাসম্পন্ন যে ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে, বিশেষ করে গুলশান হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট ও শোলাকিয়া ঈদের জামাতে, সে বিষয়ের উৎস খুঁজতে গিয়েও অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিক, অধ্যাপক, সাংবাদিকগণ বিভিন্ন তত্ত্বের অবতারণা করেছেন। একাডেমিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এসব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মূল্য তথা গুরুত্ব রয়েছে। তবে যে সকল বিষয়ে ব্যাখ্যা এবং পর্যবেক্ষণ ও অনুসিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত সরল ও স্বাভাবিক সে সকল বিষয়কে অনেক সময়েই অধিকতর জটিল, ঘোলাটে ও বিকৃত করতে দেখা যায় এবং সেটা বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। বাংলাদেশ বললে ১৯৭১ সালে জন্মলাভকারী ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্রকেই বোঝানো হয়। তাই বাংলাদেশের জঙ্গীবাদ ও ধর্মীয় উগ্রতার উৎসের সন্ধানে সর্বাগ্রে এই বাংলাদেশের জন্মের পটভূমি বা পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় নেয়া বাঞ্ছনীয়। পঁচাত্তর পূর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশে সহিংসতা, খুন-খারাবি হয়নি এমন কথা বলা যাবে না। একটি সমাজে যত ধরনের অপরাধ, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সংঘটিত হয়, তদ্রƒপ ঐ সময়েও সংঘটিত হয়েছিল। যদিও সেসব মুক্ত থাকাটাই ছিল সভ্য সমাজের জন্য কাক্সিক্ষত। কিন্তু পাকিস্তান মনোভাবাসম্পন্ন ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সেই সময়ে অর্থাৎ যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন পুনর্গঠন করতে হবে ঠিক সেই সময়টাতে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার চেষ্টা চালিয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছিল। কিন্তু উনিশ শ’ পঁচাত্তরের পনেরো আগস্ট ঐতিহাসিক বত্রিশ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনকে ঘিরে সশস্ত্র জঙ্গীরা যে হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসযজ্ঞ, নৃশংসতা, তা-বলীলা চালিয়েছিল তা সম্ভবত উপমহাদেশের ইতিহাসের- কী প্রাচীন যুগ, কী মধ্যযুগ অথবা কী আধুনিক যুগ, কোন যুগের কোন ঘটনার সঙ্গেই তার তুলনা হতে পারে না। জাতির জনকসহ তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে শিশু, নারীসহ হত্যা করা মানব ইতিহাসের এক বর্বরোচিত জঘন্যতম অধ্যায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে সশস্ত্র জঙ্গীবাদী হত্যাযজ্ঞের এবং নৃশংসতার, সন্ত্রাসের সেটিই ছিল প্রথম এবং সবচেয়ে জঘন্যতম একটি ঘটনা। কারা সংঘটিত করেছিল এই হত্যাযজ্ঞ তা এখন প্রমাণিত। এরা আমাদের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ভূ-লুণ্ঠিত করেছিল। এর প্রথম এবং প্রারম্ভিক ভিত রচিত হয়েছিল ১৯৭৭ সালের ২২ এপ্রিল জেনারেল জিয়ার এক ফরমানে। এই ফরমানের মাধ্যমে সংবিধানের চার মূলনীতিতে চরম আঘাত হানা হয়। বাঙালী জাতীয়তাবাদের সর্বজনীনতাকে খ-িত করা হয় ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতিকে বাদ দিয়ে। মানুষের মধ্যে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির অনুপ্রবেশের এ ছিল এক পরিকল্পিত পদক্ষেপ, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প উপ্তের এক কূটকৌশল। পরবর্তীতে এই নীতি-দর্শনের বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করা হয় আরও এক কঠিন পদক্ষেপ। আর তা হলো স্বাধীনতাবিরোধী, মহান মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, মানবতাবিরোধী অপরাধী যারা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে বিদেশে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের দেশে এনে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করা। মন্ত্রী, এমপি বানানো। এরাই ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কূটকৌশলে পাকিস্তানী উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বীজ বাংলার অসাম্প্রদায়িক ভূমিতে বপনের সকল আয়োজন সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়। শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসী জঙ্গীবাদকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়ারও পদক্ষেপ গৃহীত হয়। এক জেনারেলের সাম্প্রদায়িকতার নীতিকে আরেক জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের চব্বিশে মার্চ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পর থেকে বিস্তার ঘটাতে সচেষ্ট হন। সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দিয়ে জেনারেল জিয়ার সাম্প্রদায়িক দর্শনের বীজকে প্রস্ফুটিত করেন জেনারেল এরশাদ। মূলত এভাবেই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের মূল দর্শন উগ্র সাম্প্রদায়িকতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও সাংবিধানিকীকরণের সকল প্রস্তুতি সমাপ্ত হয় পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে। জাতির দুর্ভাগ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পাকিস্তানপন্থী সাম্প্রদায়িক দর্শনের ধারক ও লালন-পালনকারী রাজাকার, আলবদর ও তাদের পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক শক্তিসমূহ দীর্ঘ সময় এই দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। পঁচাত্তরের পর থেকে ছিয়ানব্বইয়ের আগ পর্যন্ত টানা এই একুশ বছর পাকিস্তানপন্থী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী রাজক্ষমতা ভোগ করেছিল। সেই সময়টাতে তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গীবাদ বাস্তবায়নের সহায়ক সকল উপাদান তৈরি করেছে। অনুকূল পরিবেশে জঙ্গীরা নিজেদের অপশক্তিকে বৃদ্ধি করেছিল। এই সময়টাতে জঙ্গী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ডালপালা এতই সম্প্রসারিত হয়েছিল, শেকড় এতই গভীরে প্রবেশ করেছিল যে, সেসবের মূল উৎপাটনের জন্য ইস্পাত কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণের কোন বিকল্প ছিল না। ঐ সকল অপশক্তির অর্থনৈতিক, আইনী ও প্রযুক্তিগত ভিতও অত্যন্ত মজবুত। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্র্যন্ত এই পাঁচ বছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। এই সময়টায় জঙ্গীবাদী সন্ত্রাসীদের কার্যক্রমকে নস্যাৎ করার জন্য সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নেয়। আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ায় তারা সরকারকে বিপদে ফেলতে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করতে থাকে। সেই ষড়যন্ত্র অনুযায়ী জঙ্গীরা ১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচীর জাতীয় সম্মেলনে সাংস্কৃতিক কর্মীসহ নিরীহ দর্শকদের ওপর বর্বরোচিত বোমা হামলা চালায়। সেই নৃশংস হামলায় দশজন নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হন। এরপর আবার ২০০১ সালে বাঙালীর সর্বজনীন বর্ষবরণ বৈশাখী মেলায় রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে গ্রেনেড ও বোমা হামলা চালিয়ে জঙ্গীগোষ্ঠী হত্যা করেছিল অনেক নিরপরাধ মানুষ। সময়টি ছিল তাদের পৃষ্ঠপোষক চারদলীয় জোটের ক্ষমতা লাভের প্রাক্কাল। ক্রমান্বয়ে তারা চারদলীয় জোটের ছত্রছায়ায় আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসভায় তারা পরিকল্পিতভাবে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালায়। পনেরো আগস্টের ন্যায় আরেকটি জঘন্যতম কালো অধ্যায়ের রচনা করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। সেই হামলায় আইভী রহমানসহ চব্বিশজন নির্মমভাবে নিহত হন এবং আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করা জঙ্গীদের যে মূল পরিকল্পনা ছিল তা সফল হয়নি আল্লাহর অশেষ রহমতে। ১৯৭৫’র পর এটি ছিল দ্বিতীয় জঘন্যতম কালো অধ্যায়। এই জঙ্গীগোষ্ঠী সেই সময়কার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের পৃষ্ঠপোষকতায় অর্থাৎ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় একের পর এক সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল। ২০০৫-এর ১৭ আগস্ট একযোগে বাংলাদেশের ৬৩টি জেলায় সমন্বিতভাবে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দু’জন বিচারককে হত্যা করে উগ্র জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী তাদের মজবুত অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছিল। এই সকল ঘটনা থেকে এটা প্রতীয়মান যে, মূলত বাংলাদেশের ইতিহাসে জঙ্গীবাদের বিকাশপর্ব হলো ২০০১-২০০৬ অর্র্থাৎ চারদলীয় ঐক্যজোটের শাসনামল। এই সময়ে বিদ্যমান তথ্য-উপাত্ত ও খবরের কাগজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ঐ সময়ে চারদলীয় জোট সরকারের সকল সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গীবাদের ভিত্তি মজবুত করা হয়েছিল। দশ ট্রাক অস্ত্রের চালানের ঘটনাটি যদি ফাঁস না হতো তাহলে আফগানিস্তানে যেভাবে তালেবান ও আল কায়েদার উত্থান এবং শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, বাংলাদেশেও তাই হতো। ২০০৮ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক মোড় পরিবর্তনকারী বিন্দু। সেবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শের অনুসারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসীন হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পাকিস্তান দর্শনের অনুরাগী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সকল অপপ্রয়াসের লাগাম টানার উদ্যোগ নেয়। প্রথমেই জঙ্গীবাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে পঁচাত্তরের পনেরো আগস্টের ঘাতকদের বিচার করার আইনী প্রক্রিয়া শুরু করে। বাহাত্তরের সংবিধানের পুনর্জীবনের উদ্যোগ নেয়া হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার সাংবিধানিক ব্যবস্থার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। এই সকল ব্যবস্থা তথা পদক্ষেপ স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির ভিতকে কঠিনভাবে ধাক্কা দেয়। অস্তিত্ব সঙ্কটে দিশেহারা হয়ে এই গোষ্ঠী দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে হাত মেলায়। বেছে নেয় নানা সন্ত্রাসী জঙ্গী কর্মকা-। বদলাতে থাকে তাদের কৌশল, কর্মনীতি। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত রাজশক্তি উৎখাতের জন্য এহেন হীন প্রয়াস ছিল না, যা এই সন্ত্রাসী জঙ্গী অপশক্তিসমূহ গ্রহণ করেনি। কখনও গুপ্তহত্যা, কখনও চলন্ত বাসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে সাধারণ মানুষ মারা, ভিন্নমত ও ধর্মালম্বীদের টার্গেট করে খুন করা এবং সর্বশেষ বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করার ন্যায় ঘৃণ্যতম নৃশংস পথও তারা অবলম্বন করেছে। এসব কর্মকা-ের উৎস, কারণ ও উদ্দেশ্য অনুসন্ধানের জন্য বেশি গবেষণার প্রয়োজন হয় না। অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ তথা নির্র্মোহ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে এর উত্তর সহজেই মেলে। সম্প্রতি প্রাপ্ত তথ্যাদির আলোকে দেখা যায় যে, সারাবিশ্বেই এক ধরনের সন্ত্রাসী-জঙ্গী কর্মকা- সংঘটিত হচ্ছে। সেগুলোকে সালাফি, ওয়াবী, আহলাল হাদিস, আল কায়েদা, আল শাবাব, বোকো হারাম, আইএস ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করা হয়। বাংলাদেশের হিযবুত তাহরীর, জমিয়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ইত্যাদি নামে বিভিন্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন গোপনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দাবি করা হয় যে, এই সংগঠনগুলো আন্তর্জাতিক পরিম-লে ক্রিয়াশীল উল্লিখিত জঙ্গী সংগঠনগুলোরই স্থানীয় রূপ। সে কারণে কেউ কেউ বাংলাদেশের জঙ্গী ঘটনাসমূহকে বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতের ফল হিসেবে দেখতে চান। এ ধারণার অসত্যতা হয়ত নেই। কিন্তু জঙ্গীদের কর্মকা-ের সফল পরিসমাপ্তি তথা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের চূড়ান্ত বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর সহযোগিতা, পৃষ্ঠপোষকতা যে প্রয়োজন তা বোধ করি কোন চিন্তাশীল মানুষই উপেক্ষা করবেন না। প্রশ্ন জাগে, এসবের নিরসনের বা মূল উৎপাটনের উপায় কি? প্রথমত, যে ভ্রান্ত মিথ্যে মনগড়া ব্যাখ্যার ভিত্তিতে উগ্র ধর্মীয় দর্শন প্রচার করা হয় তার অসারতা প্রমাণ করা। এক্ষেত্রে আলেম, ওলামা, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, পীর-মাশায়েখ এদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের জীবনে উদার মানবিক গুণাবলীর উন্মেষ ঘটানোর জন্য পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা অভিভাবক ও শিক্ষকের ভূমিকা অত্যাবশ্যক। দ্বিতীয়ত, যে সকল দল, গোষ্ঠী এসবের বিরুদ্ধে সরব অবস্থান নেয় না, তারা পক্ষান্তরে প্রচ্ছন্ন বা পরোক্ষভাবে জঙ্গীদের সহায়তাই প্রদান করে থাকে। তাই এ সকল সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে আরও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা সমাজ ও দেশের জন্য অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। লেখক : প্রো-ভিসি (প্রশাসন), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
×