ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ ’২১ সালে

রাজধানীতে দিনে ১৪০ কোটি লিটার ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ হবে

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৩ আগস্ট ২০১৬

রাজধানীতে দিনে ১৪০ কোটি লিটার ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ হবে

ফিরোজ মান্না ॥ সরকারের চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে ২০২১ সালের মধ্যে রাজধানীতে প্রতিদিন ১৪০ কোটি লিটার ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। পদ্মা নদী থেকে পানি সরবরাহের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ওয়াসা। সায়েদাবাদ ফেস-৩ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য নতুন ও পুরাতন জলাধার খনন করার জন্যও আরও একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। বড় এই তিনটি প্রকল্প ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরে পুকুর খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনস্থ ‘ভিলেজ ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট’ নামে আরও একটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে উত্তোলিত ভূ-গর্ভস্থ পানির শতকরা ১০ শতাংশ খাবার পানির জন্য উত্তোলন করা হয়। বাকি ৯০ ভাগ পানি কৃষিখাতে ব্যবহারের জন্য উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে প্রতিবছরই পানিস্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পানির স্তর ধরে রাখার জন্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে। বর্তমান সরকার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের আওতায় সিলেট, বরিশাল মহানগরীসহ গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর, বান্দরবান, নরসিংদী জেলায় ইতোমধ্যে ভূ-উপরিস্থ পানির সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ‘সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ পানির চাহিদা মেটানো হচ্ছে। ভূ-উপরিস্থ খাবার পানির উৎস সৃষ্টির জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনস্থ ‘ভিলেজ ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট’ এর আওতায় আরও একটি প্রকল্পের আওতায় ২শ’টি নতুন পুকুর খনন করা হচ্ছে। এ সব পুকুর থেকে ৩৬০টি পিএসএফের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া ১৪৩টি পুকুর পুনঃখনন করা হচ্ছে। ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ, ব্যবহার ও সংরক্ষণ নিশ্চিতকল্পে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, রাজধানী ঢাকায় প্রতিবছর পানির স্তর নিম্নগামী হচ্ছে। এ জন্য ঢাকা ওয়াসা দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও গণমুখী ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসা ভূ-গর্ভস্থ উৎসের পরিবর্তে ক্রমেই ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে পানি সংগ্রহের জন্য পদ্মা নদীর পানি ‘পদ্মা নদীর পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প-১’ ও মেঘনা নদীর পানি এনে ‘গার্ন্ধবপুর পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প’ হাতে নেয়া হয়েছে। সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-৩ নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জানা গেছে, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ২০২১ সালের মধ্যে দৈনিক যথাক্রমে ৪৫ কোটি লিটার, ৫০ কোটি লিটার ও ৪৫ কোটি লিটার ভূ-উপরিস্থ পানি রাজধানীতে সরবরাহ করা সম্ভব। এটা হবে ঢাকা ওয়াসা মোট উৎপাদনের শতকরা ২২ শতাংশ ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে পানি উৎপাদন করছে। যা কিনা ২০২১ সালনাগাদ শতকরা ৭০ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হবে। এদিকে ঢাকা মহানগরীতে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ৩ হাজার ১৮২ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষসহ বস্তিবাসীর কাছে পানি সরবরাহের প্রক্রিয়া সহজ হবে। অবৈধভাবে নেয়া পানির সংযোগ কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্প প্রস্তাবটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্পে দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা সহজ শর্তে ঋণ দেবে। বাকি ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেয়া হবে। ২০২০ সালনাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্প প্রস্তাবটির মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীতে সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহ ও ঢাকা ওয়াসার সেবার মান বৃদ্ধি পাবে। এজন্য ঢাকা ওয়াসার সাতটি জোনে পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ ও ডিস্ট্রিক্ট মনিটরিং এরিয়া প্রতিষ্ঠা করা হবে।
×