ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এনআইডির নম্বর ও আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়েই ভোটার পরিচয় নিশ্চিত করা হবে

ভোট জালিয়াতি ঠেকাতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার হতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৩ আগস্ট ২০১৬

ভোট জালিয়াতি ঠেকাতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার হতে যাচ্ছে

শাহীন রহমান ॥ এবার ভোট জালিয়াতি বা কারচুপিরোধে নির্বাচনে বায়োমেট্রিক বা আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে নির্বাচনে ভোট দেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ভোটারের এনআইডির নম্বর ও আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে দেখে ভোটার পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। নিশ্চিত হওয়ার পরই কোন ভোটার ভোট প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্বাচনে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হলে জাল ভোট দেয়ার সুযোগ থাকবে না। জানা গেছে, একই সঙ্গে নির্বাচনে নতুন করে ইভিএম (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইভিএমে ভোট দিতে যাওয়ার আগে বায়োমেট্রিক যাচাই করা হবে। আঙ্গুলের ছাপ জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মেলার পর নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোটারকে ব্যালট ইউনিটে যেতে দেবেন। এরপর ইভিএমে বাটন টিপে পছন্দসই প্রতীকে রায় দেবেন ভোটার। তবে এখানেও ভোটারের পরিচিতি নিশ্চিতে আঙ্গুলের ছাপ দিতে হবে। ইতোমধ্যে এ ধরনের একটা প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ। তারা জানিয়েছে, নির্বাচনে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হবে। এনআইডির এ প্রস্তাব নিয়ে ইতোমধ্যে কমিশনের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনায় নির্বাচনের আঙ্গুলের ছাপ ও আইডি নম্বর ব্যবহারের বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। যদি নির্বাচনে পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা সম্ভব হয় তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই পদ্ধতি ব্যবহার করা হতে পারে বলে জানা গেছে। এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বা অন্য কোন নির্বাচনে প্রয়োগ করা হতে পারে। এক্ষেত্রে কমিশন নিজ উদ্যোগে ইভিএম তৈরির চিন্তাভাবনা করছে বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নতুন ইভিএমের প্রোটোটাইপ উপস্থাপন করেছে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ। এখন ইসি তা পর্যালোচনা করে দেখবে। সম্মতি পেলে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে পরবর্তী সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি জানান, নতুন এ পদ্ধতিতে আঙ্গুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে ভোটার পরিচিতি নিশ্চিত করা হবে। এরপর ভোটারকে ইলেক্ট্রনিক ব্যালটে যেতে দেয়া হবে। এ পদ্ধতি চালু হলে জাল ভোট দেয়া বন্ধ হবে। জানা গেছে, ইভিএম নিয়ে বুয়েটের সঙ্গে কমিশনের দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ার পরই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার আপাতত স্থগিত রেখেছে। বুয়েটের সঙ্গে দ্বন্দ্বের পর নিজেরাই ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বানানোর চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে জালভোট ঠেকাতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির ব্যবহার নিয়েও ভাবনা রয়েছে তাদের। ২০১০ সালে বুয়েটের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে আংশিক ভোটের মাধ্যমে ইভিএম চালু হয়। পাঁচ বছরের মাথায় সেগুলোর কয়েকটি বিকল হয়ে পড়ে। ইসি সচিব বলেন, ইসি নিজেই পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছে। তৈরিও নিজেরাই করব। কারও মুখাপেক্ষী থাকতে হবে না। এ প্রক্রিয়ায় নিজস্ব জনবল ও কারিগরি দক্ষতাকে কাজে লাগানো যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। জানা গেছে, ইভিএম ব্যবহার নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা সমালোচনা থাকলেও কয়েকটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে ভাল ফল দিয়েছে। বিশেষ করে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে নির্ভুল ফল ঘোষণা করে। পরে খুলনা, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের একটি করে ওয়ার্ডে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এতে তিন সিটি কর্পোরেশনে ইভিএম ব্যবহার করে নির্ভুলভাবে ফল ঘোষণা করা সম্ভব হলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রাজশাহীতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে পুনরায় ভোট গ্রহণ করা হয়। এর পর থেকে কমিশন গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচনসহ সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার থেকে বিরত থাকে। তবে কমিশন জানিয়েছে, প্রযুক্তিগত ত্রুটি কাটিয়ে উঠে এটিকে নতুনভাবে ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনগুলোয় ইভিএম ব্যবহারে সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এটি নির্ভর করছে বিধি সংশোধন ও যন্ত্রপাতি নির্মাণের ওপর।ইসি সচিব জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য দু’লাখের বেশি ইভিএমের প্রয়োজন হবে।
×