ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্পের ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে

পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হতে চলেছে, সাফল্যের নতুন বাঁক

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৩ আগস্ট ২০১৬

পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হতে চলেছে, সাফল্যের  নতুন বাঁক

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা উত্তাল! প্রবল বেগে বইছে স্রোত। তাতে কী? ভর বর্ষার সঙ্গে তাল মিলিয়েই এগিয়ে চলেছে স্বপ্নের সেতুর বাস্তবায়ন। এই নির্মাণযজ্ঞে এখন সাফল্যের বিশেষ বাঁক। এখন সেতুর দৃশ্যমানের পালা। তাই স্রোত উপেক্ষা করেই হরদম পদ্মায় স্থাপন হচ্ছে বিশাল বিশাল পাইল। নদীর ওপরে পাইল স্থাপনের পাশাপাশি নদীতে সংযোগ সেতুর ভায়াডাক্টরে পাইলের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সেতুর ২২ নম্বর পিলারের একটি পাইল স্থাপন চূড়ান্ত পর্যায়ে এখন। এছাড়া নদীশাসনসহ অন্যান্য প্যাকেজেও কাজ চলছে সমানতালে। পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচারের একটি অংশ মাওয়ায় পৌঁছার পর প্রকল্পটিতে এক উৎসব পরিবেশ বিরাজ করছে। সুপার স্ট্রাকচারের দৃশ্য দেখে বিস্মিত নির্মাণ কর্মীরা। নাটবল্টুর ওপর ভর করেই স্থাপন হবে বিশাল এই সেতু। আর এরই মধ্য দিয়ে কর্মযজ্ঞে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। সেতু বাস্তবায়নের বিশেষ এক বাঁক অতিবাহিত করছে। সুপার স্ট্রাকচারবাহী দু’টি বার্জের মালামাল বুধবার খালাস হয়েছে। আরও তিনটি বার্জ মাওয়ার পথে রয়েছে। প্রথম চালানের বাাক তিন বার্জও ২/১’র মধ্যে মাওয়া পৌঁছার কথা রয়েছে। প্রথম এই চালানে ৩ হাজার ৮৯২ টন ওজনের ১৫২টি খ-ের স্টিলের এই অবকাঠামোর মাওয়ায় আনা হচ্ছে। চীনা বার্জ মাওয়ার কুমারভোগের কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের জেটিতে নোঙ্গর করা হয়। জেটির ক্রেনে করে বার্জ থেকে এগুলো নামিয়ে আনা হয়। এই অবকাঠামোর মধ্যে জয়েন্ট, সেকশন, ডয়াগনাল মেম্বার, গার্ডার, টপকর্ড ও বটমকর্ড উল্লেখযোগ্য। এদিকে পদ্মা সেতু ঘিরে সড়ক নেটওয়ার্কে যুগান্তকারী আরেক অধ্যায় রচিত হচ্ছে আজ শনিবার। দেশের প্রথম ফোর লেন এক্সপ্রেস ওয়ের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হচ্ছে। রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভার থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এর নির্মাণ করবে সেনাবাহিনী। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগেই এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যে পরিমাণ লোড পড়বে এবং সড়কের প্রয়োজন হবে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই উন্নতমানের এই সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে। শুক্রবার এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রস্তুতি পরিদর্শনে এসে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের তেঘরিয়ায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এই সময় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের প্রধান মেজর জেনারেল সিদ্দিকুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বলেন, এই এক্সপ্রেসওয়ের আশপাশে ধীর গতির সার্ভিস লেনও থাকবে। এটি চালু হলে সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। আর পদ্মা সেতু চালু হলে আর্থ-সামাজিক অবস্থার এত উন্নত হবে যে মানুষ গরিব থাকবে না। মন্ত্রী বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের কাজটি দ্রুত ও মানসম্মতভাবে করার লক্ষ্যেই সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে মন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয় না। কারণ তাদের টেন্ডারসংক্রান্ত জটিলতা নেই। এছাড়া পদ্মা সেতু রেল সংযোগের কাজ শুরু হচ্ছে ডিসেম্বরে। চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড এ কাজ পেয়েছে। প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথের গত সোমবার রাজধানীর রেলভবনে রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের চুক্তি সই হয়েছে। ২০১৮ সালে মূল পদ্মা সেতু চালুর প্রথম দিন থেকেই এই রেলপথের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশ চালু করার কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তিনটি অংশের নির্মাণকাজ সাড়ে চার বছরে শেষ করা হবে। প্রকল্পটি প্রথম পর্যায়ে বিদ্যমান ঢাকা রেলস্টেশন (কমলাপুর) থেকে শুরু হয়ে গেন্ডারিয়া-মাওয়া-পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা স্টেশনকে যোগ করবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ভাঙ্গা জংশন থেকে বিদ্যমান কাশিয়ানী জংশন স্টেশন হয়ে পদ্মবিলা জংশন হয়ে রূপদিয়া ও সিঙ্গিয়া স্টেশনকে সংযুক্ত করবে। ঢাকা-গেন্ডারিয়া সেকশনে তিন কিলোমিটার ডাবল লাইনসহ প্রকল্পের আওতায় মোট ১৭২ কিলোমিটার নতুন মূল রেলপথ নির্মাণ করা হবে।
×