ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফেলপসের মতোই এবার জ্বলে ওঠার পালা বোল্টের

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৩ আগস্ট ২০১৬

ফেলপসের মতোই এবার জ্বলে ওঠার পালা বোল্টের

গত কয়েক দিন ধরেই রিওতে বৈরী আবাহাওয়া। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর কনকনে ঠা-া। শুক্রবার খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি মুষলধারে বৃষ্টি। উত্তাল আটলান্টিকের পাহাড়সম ঢেউ বিশাল গর্জন দিয়ে আছড়ে পড়ছে সৈকতে। মহাসাগরের হিংস্ররূপ, এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। শরৎচন্দ্রের বিখ্যাত ‘সমুদ্রে সাইক্লোন’-গল্পে পড়েছিলম, ভগবান এ চোখ দুটি তুমি দিয়েছিলে, আজ তুমি তা সার্থক করলে। আমাদের বঙ্গোপসাগরের উন্মত্ততা দেখেছি। কিন্তু এবারই প্রথম দেখলাম মহাসাগরের ভয়ঙ্কর রূপ। যে রূপ রিও অলিম্পিকের এ্যাকুয়াটিক সেন্টারে দেখিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিখ্যাত সাঁতারু মাইকেল ফেলপস। অন্যদিকে প্রস্তুত আরেক মহানায়ক, ফেলপসের মতোই বড় তারকা জ্যামাইকার উসাইন বোল্ট। সন্দেহ নেই দুই দিগন্তের দুই বিশ্বখ্যাত ক্রীড়াবিদকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বাস, আগ্রহ দর্শকের। ফেলপস ম্যাজিক ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আর আজ থেকে শুরু অলিম্পিকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় এ্যাথলেটিক্স। ‘বিদ্যুত বোল্ট চমকাবে রিওর আকাশে। দারুণ একটা মিল, রিও হতে যাচ্ছে ক্রীড়াবিশ্বের অবিসংবাদিত দুই সম্রাটের শেষ অলিম্পিকস। তার অলিম্পিক ক্যারিয়ারের দিকে ফিরে তাকালে একটা কথাই বলতে হয় ‘সবচেয়ে সুসজ্জিত’। মোট ২২ পদক, এমন যার ক্যারিয়ারে তাকে নিয়ে নতুন করে কি আর বলার থাকে। তিনি মাইকেল ফেলপস। ফেলপস চমকে রিও অলিম্পিকের এ্যাকুয়াটিক সেন্টার উত্তপ্ত। এরই মধ্যে গলায় ঝুলিয়ে নিয়েছেন চার স্বর্ণপদক। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবশিষ্ট ছিল আরও দুটি। গত লন্ডন অলিম্পিকের পর হঠাৎ অবসরের ঘোষণা দিয়ে ফের ফিরে এসে এখনও তিনি কতটা পরিণত প্রমাণটাও দিয়ে চলেছেন রিওতে। ২০০ মিটার ইনডিভিজুয়াল মিডলেতে সোনা জয়ের আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই ক্ষণিক সময়ের সাক্ষাতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ৩১ বছর বয়সী ফেলস বললেন, আমি এই মুহূর্তে যা করছি, তা শতভাগই উপভোগ করছি। আসলে আমি নিজের ক্যারিয়ার যেভাবে শেষ করতে চেয়েছিলাম সেভাবেই এগিয়ে চলেছি। বিশ্বাস করি ক্যারিয়ারের এই পড়ন্ত মোড়ে যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তা কুড়িয়ে নিয়ে জড়ো করেই ছাড়বো। রিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আমেরিকার পতাকা বাহক আরও বললেন রিওতে আসলে এভাবে শুরু করতে পারব ভাবিনি। যদিও আত্মবিশ্বাস ছিল। লুকিয়ে ছিল একটা শঙ্কাও। রিলেতে প্রথম সোনা জয়ের পরই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম। এখন বলতে পারি অন্যবারের চেয়ে এবার আরও ফুরফুরে মেজাজে আছি। ইতোমধ্যে জেতা হয়ে গেছে ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল, ২০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলে, ৪ল্প১০০ মিটার ও ৪ল্প২০০ মিটার রিলে। রিও গেমসের ভিলেজে বিশেষ সম্মান দেয়া হয়েছে উসাইন বোল্ট অর মাইকেল ফেলপসকে। সাজানো বাগানের পাশে আলাদা গোছালো পরিপাটি কক্ষ বরাদ্দ কেবল এই দুই মহাতারকার জন্য। আর হবেই বা না কেন, গেমসের মূল আকর্ষণই তো তারা। বেজিংয়ের পর লন্ডন অলিম্পিকে ঝড় তোলা বোল্ট রিওতে তার স্বপ্ন পূরণ করতে চান ‘ট্রিপল-ট্রিপল’ জয় করে। টানা দুই অলিম্পিকে ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ। পাশাপাশি ৪ল্প১০০ রিলেতেও ইতিহাস গড়া সাফল্য। রিও অলিম্পিকেও এই তিনটিতে স্বর্ণপদক জিততে কেবল মরিয়া নয়। দারুণ আত্মবিশ্বাসী জ্যামাইকার ‘গতি দানব’। যদিও রিওতে অংশগ্রহণ নিয়ে দারুণ একটা শঙ্কা দেখা দিয়েছিল ইনজুরিতে। কিন্তু দুর্দান্ত সাহস, অটুট মনোবল নিয়ে ফিরে এসেছেন ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডে। ইনজুরিমুক্ত হয়ে বোল্টের ফেরা আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে এ্যাথলেটিক্সের। এখন নিজের স্বপ্ন যাত্রার পথটা কতটুকু মসৃণ করতে পারেন বোল্ট সেটাই দেখার। রিও পৌঁছার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বোল্ট বলছিলেন, ‘ট্রিপল-ট্রিপল’ জিততে আমি পুরোপুরিই প্রস্তুত। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি ইনজুরি মুক্তির পর। আর মনের জোরটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে গেমসের আগে লন্ডনের সাফল্য। আমি এখন ফুরফুরে মেজাজে। ট্র্যাকে নামার প্রহর গুনছিলাম। অপেক্ষার পালা শেষ। এবার প্রত্যাশা আর বাস্তবতার সেতুবন্ধন তৈরি করতে চাই।
×