ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জরুরী বৈঠক

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৩ আগস্ট ২০১৬

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানে করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে। তাদের আগমন থেকে শুরু করে নিজ দেশে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। একই সঙ্গে অবৈধভাবে যেসব বিদেশী বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন তাদেরও চিহ্নিত করা হবে। পরপর কয়েক দফা জঙ্গী হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা ইস্যুতে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থাহীনতার সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। তবে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে সরকারের বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপে তারা এখন সন্তোষ প্রকাশ করছেন। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শতভাগ নিরাপত্তা প্রদানে আগামী ১৬ আগস্ট মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় করণীয় নির্ধারণে জরুরী বৈঠক আহ্বান করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, গত কয়েক বছরে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ায় দেশে এখন বিপুলসংখ্যক বিদেশী উদ্যোক্তা ও তাদের প্রতিনিধি বিভিন্ন খাতে কর্মরত রয়েছেন। তবে দেশের তিনটি প্রতিষ্ঠান বিদেশীদের কাজের অনুমতি দিয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছেÑ বিনিয়োগ বোর্ড, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা) এবং এনজিও ব্যুরো। গত ২১ জুলাই বিনিয়োগ বোর্ডে বিদেশী উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তা বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা প্রদানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। আর এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা প্রদানে করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের পরামর্শগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত আকারে প্রদান করবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগমন থেকে শুরু করে তাদের ফিরে যাওয়া পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে যে আস্থাহীনতার সঙ্কট তৈরি হয়েছিল তা সরকার দূর করতে সক্ষম হয়েছে। এখন শতভাগ নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। তিনি বলেন, রফতানিমুখী তৈরি পোশাক খাতসহ দেশের বিভিন্ন খাতে বিদেশীদের বিনিয়োগ রয়েছে। বিপুলসংখ্যক বিদেশী বিনিয়োগকারী এখানে কাজ করছেন। এই বাস্তবতায় তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করবে সরকার। এ সংক্রান্ত বৈঠকের পরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হবে। জানা গেছে, বিনিয়োগ বোর্ড থেকে অনুমতি নিয়ে বর্তমানে ১৪ হাজার বিদেশী কাজ করছেন। আর বেপজার অনুমতি নিয়ে ২ হাজার এবং এনজিও ব্যুরো থেকে অনুমতি নিয়ে আরও ৫শ’ বিদেশী নাগরিক কাজ করছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশে বিদেশী জনশক্তির সংখ্যা ২ লাখেরও বেশি। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশের নাগরিকরা বাংলাদেশে কাজ করছেন। এর মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ভারত। এরপরই রয়েছে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স, ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকাসহ মধপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। এরা গার্মেন্ট খাতে প্রডাকশন ম্যানেজার, মার্চেন্ডাইজার, কাটিং মাস্টার এবং ডিজাইনারের মতো শীর্ষ পদে কাজ করছেন। এছাড়া বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার স্টেশন, আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, ফ্যাশন হাউস, খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান, মোবাইল ফোন কোম্পানি, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, নানা ধরনের পার্লার, এমনকি শোরুমের কর্মচারী হিসেবেও কাজ করছেন। অবৈধভাবে যেসব বিদেশী বাংলাদেশে অবস্থান করে অর্থনৈতিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের ব্যাপারেও কঠোর হচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। তবে বৈধভাবে যেসব বিদেশী বিনিয়োগকারী কাজ করছেন তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে বিনিয়োগ বোর্ডের নজরদারি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র ম-ল জনকণ্ঠকে বলেন, যেসব বিদেশী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসেন তাদের নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। তিনি বলেন, বিদেশী নাগরিকদের ওয়ার্ক পারমিট নিতে হলে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করবেন ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। আমরা নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত নেই। মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক মতামত এলে প্রথমে এক বছরের জন্য কাজের অনুমতি দেয়া হয়। পরে আবেদন করলে নবায়ন করা হয়। তিনি বলেন, ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কেউ কাজ করলে সেটা দেখার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এদিকে এদেশে কর্মরত বিদেশীদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল কোন দফতরের কাছে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। এমনকি এখানে অবৈধভাবে কত সংখ্যক লোক বসবাস করছেন তার সঠিক হিসাব বের করতে তেমন কোন উদ্যোগও নেয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছেন এমন বিদেশীদের একটি তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। অবৈধভাবে বসবাসকারীদের শনাক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, সম্প্রতি জঙ্গী হামলার পর রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের বায়াররা এয়ারপোর্টে নামার পর থেকেই নিরাপত্তা পাচ্ছেন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ডিআইজি আবদুস সালাম জানান, বিজিএমইএ, বিকেএমইসহ যারা বিদেশী বায়ারদের আসা-যাওয়ার বিষয়টি দেখভাল করে তাদের বলা হয়েছে, বিদেশী বায়াররা এয়ারপোর্টে নামার আগেই আমাদের বলার জন্য। বিদেশীরা এয়ারপোর্ট থেকে নামার পর মাঠে তাদের কাজকর্ম শেষ করা পর্যন্ত সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেয়া হবে।
×