ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাজী রওনাক হোসেন

আমার দেখা মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১২ আগস্ট ২০১৬

আমার দেখা মিয়ানমার

(পূর্বের প্রকাশিতর পর) ১১টা নয়, আমরা ১০টার পরপরই চেক-আউট করে এসি-কোচে উঠে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আবার শুরু হলো ইয়াঙ্গুনের পথে যাত্রা। আগের দিন রাতে আমরা অন্ধকারে দেখতে বা বুঝতে পারিনি। সারাটা পথই চমৎকার সবুজ-ছায়াঘেরা পাহাড় এবং সমতল ভূমি। মাঝে মাঝে বিশাল জলাধার। দুপুর নাগাদ আমরা সেই রেস্তরাঁতেই এসে পৌঁছলাম, যেখানে গত সন্ধ্যায় আমরা খাওয়া-দাওয়া করেছিলাম। আমরা ফ্রেশ হয়ে চেষ্টা করলাম কিন্তু বিশাল রেস্তরাঁ হওয়া সত্ত্বেও বসার কোন জায়গা মনমতো পেলাম না। ফলে আবার যাত্রা শুরু করলাম। সিদ্ধান্ত হলো পথেই মোটামুটি পছন্দসই কোনো রেস্তরাঁয় নেমে আমরা দুপুরের খাবার সারবো। কিছুদূর যাবার পর তেমনি একটি রেস্তরাঁ পেয়ে গেলাম। ডাল, মুরগি, ভাত, সবজি এবং ছোটমাছ ভাজি এই দিয়ে আমাদের দুপুরের চমৎকার খাবার হয়ে গেল। মজার কথা হলো ভোজন রসিক ইমরান ওদের কিচেনে ঢুকে কলমি শাক ভাজি এবং ফ্রায়েড রাইস বানিয়ে নিয়ে এলো যা, অনেকেই খেল এবং খুব প্রশংসা করল। আবার শুরু হলো লম্বা পথযাত্রা। আমরা সন্ধ্যার আগেই হোটেলে পৌঁছালাম। আমাদের সফরসঙ্গী বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমীন এবং আমি ট্যাক্সিতে করে ডাউন-টাউনে গেলাম। তখন প্রায় সাতটা। সূর্য ডোবার পরপরই তাপমাত্রা অনেক নেমে এলো। প্রচুর দমকা হাওয়া, অস্বস্তিকর গরমটা আর আমরা টের পেলাম না। ডাউন-টাউনে ঝকঝকে পথ ধরে আমরা হাঁটতে লাগলাম। মুগ্ধ চোখে দেখলাম মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডার পাশাপাশি সহবস্থান। বেশ ছবি তোলা হলো। পথে যেতে যেতে লক্ষ্য করলাম পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রচুর লোক রাস্তার উপরেই রাতের খাবার অথবা আইসক্রিম কিংবা কুলফি খাচ্ছে। আমরাও এরকম একটি দোকানে বসে কুলফি খেলাম। এরপর হোটেলে ফিরে এসে রাতের খাবার খেতে বেরোলাম। পরদিন ভোরে নাস্তা খাবার পর আমরা তিনজন বেরোলাম মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় প্যাগোডা সোয়ডিং প্যাগোডা ও শেষ মোগল-সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের মাজার জিয়ারত করতে। দু’জায়গারই অবস্থান আমাদের হোটেলের কাছে। একটি ট্যাক্সি নিয়ে প্রথমে গেলাম সোয়াডং প্যাগোডা। সেখান থেকে আমরা বাহাদুর শাহ জাফরের মাজারে যাব সেটা বোঝাতে অনেক বেগ পেতে হলো। ড্রাইভারও বোঝে না। অন্যরা তো একদমই কিছু বোঝে না। অনেক কষ্টে প্যাগোডার একজন গাইড পেলাম। মহিলা ইংরেজী ভাল বলতে না পারলেও আমরা কোথায় যেতে চাচ্ছি তা বুঝতে পারল এবং ড্রাইভারকে বুঝিয়ে দিল। এবার ড্রাইভার সোজা পাঁচ মিনিটের ভেতরই আমাদের নিয়ে গেল বাহাদুর শাহ জাফরের দরগাতে। দরগার ওপরের তলায় তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলের মাজার। নিচতলায় বাহাদুর শাহ জাফরের মাজার। জানি না কেন আমার মনে হয় বাহাদুর শাহ জাফরের মাজারে না গেলে মিয়ানমার সফরটি অস¤পূর্ণ রয়ে যেতো। নঈম নিজাম ঐ দিনই জরুরী কাজে ঢাকায় ফিরে আসবেন দেখে এই ঝটিকা সফর। গাড়িতে বসেই আমি দু’জনকে বাহাদুর শাহ জাফর সম্পর্কে অনেক কিছু বুললাম। বিশেষ করে বাহাদুর শাহের মাজারে তার মাথার ওপর লেখা এপিটাফ ‘কিতনি বদ নসীব হ্যায় তু জাফর’ এটার মর্মার্থ। আমরা ৯টার ভেতরেই হোটেলে ফিরে আসলাম। একটু বিশ্রাম নিয়ে শুরু হলো সবার সঙ্গে অফিশিয়াল ইয়াঙ্গুন সাইট সিয়িং। নঈম নিজামকে বিদায় জানালাম। আমরা ফেরার আগেই সে চলে যাবে এয়ারপোর্টে। ঢাকার উদ্দেশ্যে। অন্যদের কথা জানি না। পরবর্তী দুই দিন আমি নইম নিজামের অনুপস্থিতি ভীষণভাবে অনুভব করেছি। আমরা আবার বাহাদুর শাহ জাফরের মাজার সোয়াডং প্যাগোডার অন্য প্রান্ত এবং ডাউন-টাউন ও চমৎকার একটি পার্ক সফর করলাম। এরপর চলে গেলাম দুপুরের খাবার খেতে একটি ইন্ডিয়ান রেস্তরাঁয়, তাজ হোটেলে। সেখান থেকে সিনেমা দেখতে যাওয়া। শাহরুখ খানের ‘ফ্যান’ ছবিটি। সত্যিকথা বলতে এই ছবিটি কিং খানের একটি ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছুই না। দুপুরের ক্লান্তিতে মোয়াজ্জেম, আমি এবং আরও কয়েকজন এসি হলে দিবানিদ্রাটি সম্পন্ন করলাম। চরম বিরক্তি নিয়ে প্রায় সবাই হল থেকে বেরুলাম, কিং খানের পিন্ডি চটকাতে চটকাতে। রুমে এসে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যা সাতটায় বেরুলাম আশপাশে ঘুরতে এবং রাতের খাবার খেতে। বেশ অনেকটা পথ ঘুরে খুঁজে পেলাম এক হালাল রেস্তরাঁ। সেখানেও ঐ ভাষার সমস্যা। যা অর্ডার দেয়া হলো তা আমাদের জন্যে অত্যধিক হলো। তবে খাবারটি মোটামুটি ভাল। ফিরে আসলাম হোটেলে। (চলবে)
×