ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী

ঘুরে এলাম ভিয়েতনাম

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১২ আগস্ট ২০১৬

ঘুরে এলাম ভিয়েতনাম

সম্প্রতি ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে ইউনেস্কোর সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ইউনেস্কো ক্লাবস্ এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েশনের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৮ম ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে বাংলাদেশ জাতীয় ইউনেস্কো ক্লাব এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে আমার যোগদানের সুযোগ হয়েছিল। ভিয়েতনামে এর আগেও ২০০১-এ ভ্রমণ করেছিলাম। এবার গিয়ে ভিয়েতনামকে চিনতে বেশ কষ্ট হয়েছিল। কি আমূল পরিবর্তন ভিয়েতনামের! জাপানের মতো ধাঁধা করার মতো দ্রুত উন্নতির শিখরে পৌঁছে যেতে বেশি দিন লাগবে না ভিয়েতনামের, দেশটিতে নেই কোন গ-গোল, বিবাধ, ঝগড়া বা ধ্বংসাত্মক ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। সে দেশে রাজনীতি আছে তবে তা রাস্তায় নয়, পার্লামেন্টের ভেতরে। গোটা দেশটি চলে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে। আইন ভঙ্গ না করার প্রবণতার মধ্য দিয়ে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে ভিয়েতনামের কাছ থেকে। জাপানীদের মতো ভিয়েতনামীরাও যথেষ্ট পরিশ্রমী। সর্বক্ষেত্রে ভিয়েতনামের উন্নতি চোখে পড়ার মতো এবং তাদের ব্যবহার থাই ও জাপানীদের মতো। ভিয়েতনামের প্রধান খাদ্য ভাত এবং মাছ ঠিক আমাদের মতো। তাদের লেখাপড়ার মান যথেষ্ট মানসম্মত। শত শত জাপানী ও কোরিয়ান কোম্পানি বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ করে ভিয়েতনামের অর্থনীতিকে ভীষণভাবে চাঙ্গা করতে সক্ষম হয়েছে। ভিয়েতনামীদের আশা আগামী ১০ বছরের মধ্যে ভিয়েতনাম তাদের কর্ম, পরিশ্রম ও সততা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কোরিয়া বা জাপানের কাছাকাছি যেতে পারবে। তারা দেখতে থাই জাপানী ও কোরিয়ানদের মতো। চাল-চলন, ব্যবহার, আদব-কায়দা, সম্মান বা শ্রদ্ধাবোধ এবং মানবতার দিক দিয়ে ভিয়েতনামীরা জাপানীদের থেকে কম নয়। তাদের থাই, ফিলিপিনো বা জাপানী ভাবতে অবাক হওয়ার কিছু নয়। থাই কোরিয়া এবং জাপানের বড় বড় কোম্পানি বর্তমানে ভিয়েতনামে তাদের শিল্প, কল-কারখানা ও ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছে। আর বিশেষ করে কোরিয়ান কোম্পানি হোটেল থেকে সব রকম ব্যবসায় এখন তারা ভিয়েতনামকে বেছে নিয়েছে। মূলত আমার নিজের চোখে দেখা ভিয়েতনামের উন্নয়ন সত্যিই অবাক লাগার মতো। ছেলে এবং মেয়েদের ছাত্রজীবনে শিক্ষা এবং কঠোর পরিশ্রম করতে দেখা যায়। দীর্ঘ ৯ বছর আমেরিকানদের সঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামের উন্নতি সত্যিই প্রশংসা না করে পারছি না। এক্ষেত্রে তাদের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদরা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। সে দেশে সরকার আসে যায় তবে রাস্তায় মানুষকে দুর্ভোগ দিয়ে নয়, নির্বাচনের মাধ্যমে। ভিয়েতনামীদের মধ্যে ভালবাসা ও সহানুভূতি সত্যিই অতুলনীয়। এক সময়কার ফ্রেঞ্চ কলোনি ভিয়েতনামীরা কর্মে বিশ্বাসী। তাদের পুরনো বাড়িঘরের পাশাপাশি প্ল্যান অনুযায়ী নতুন নতুন বাসাবাড়িগুলো ইউরোপীয় স্টাইলে গড়ে উঠছে। বাংলাদেশের মতো ভাত ও মাছ ভিয়েতনামীদের প্রধান খাদ্য। তবে তাদের খেলাধুলা থেকে শুরু করে বিনোদনের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যা আমাদের দেশে নেই। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ভিয়েতনামের মেয়েরা দিনে-রাতে রাস্তাঘাটে চলাফেরা, হোন্ডা, গাড়ি, দোকানপাট এমনকি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে। তবে কোথায়ও তাদের নিরাপত্তার কোন অভাব দেখিনি। তবে ছেলেমেয়েদের মধ্যে খুব ভাল সম্পর্ক দেখতে পেলাম কিন্তু তা আবার খারাপ দৃষ্টিতে নয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের ছেলেমেয়ে, পুরুষ-মহিলা এক সঙ্গে কাজ করে থাকে। তবে কর্মক্ষেত্রে ভিয়েতনামের মহিলাদের বেশি প্রাধান্য দেখা যায়। ভিয়েতনামের সর্বত্র রাস্তাঘাট এমনকি গ্রামগঞ্জের রাস্তাঘাটও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং ভীষণ সুন্দর। রৌদ্র এবং বৃষ্টিকে উপেক্ষা করার জন্য গ্রাম-গঞ্জের মানুষেরা রং-বেরঙের ছাতা ছাড়াও কৃষিক্যাপ ব্যবহার করে থাকে। পরিকল্পিত বাজার অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভিয়েতনামকে বোঝায়। ইতোমধ্যে দেশটির অর্থনীতি বেশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়াও ভিয়েতনামের অর্থনীতি বেশ সাড়া জাগিয়েছে। ভিয়েতনামের নিজস্ব বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ভিয়েতনাম কৃষিপণ্যের রফতানিকারক দেশ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী ভিয়েতনামের রফতানির পরিমাণ ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশটির জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান প্রায় ৪০ শতাংশ। তা ছাড়া এ খাতে দেশটির প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষ কাজ করে থাকে। ভিয়েতনামের অর্থনীতিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিল্প খাতের অবদান বেশি। বর্তমানে দেশটি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সিগারেট, তামাক কেমিক্যাল এবং টেক্সটাইল খাতে বেশ উন্নতি লাভ করেছে। এ ছাড়াও দেশটির কৃষি খাত বেশ উন্নত। দেশটি ভ্রমণ করার পর আমার মনে হলো দেশটির কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে। মিথ্যা কথা, প্রতারণা, ফাঁকি, অবহেলা, উদাসীনতা, অলসতা এর কোন কিছুুই ভিয়েতনামের মানুষের মধ্যে দেখতে পেলাম না। যা আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে গাড়ি, ঘোড়া বা বাসের থেকে ছেলেমেয়ে সকলকে হোন্ডা-ভ্যাসপা চালাতে দেখেছি। হাজার হাজার হোন্ডার শহর হ্যানয় কিন্তু নেই কোন যানজট। ট্রাফিক আছে তবে নগণ্য। ভিয়েতনামে অপরাধের সংখ্যা প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অনেক কম। ৯ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ভিয়েতনামের উন্নয়ন ও অগ্রগতির কোন জুরি নেই। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আসুন ভিয়েতনামের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের বাংলাদেশটিকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলি। ঊ-সধরষ : ঁহংপড়পষঁননফ@ুধযড়ড়.পড়স.
×