ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাতে থাকতো পেঙ্গুইন সিরিজের কোন না কোন বই

জার্নাল নুরুল করিম নাসিম

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১২ আগস্ট ২০১৬

জার্নাল নুরুল করিম নাসিম

ঢাকা কলেজের দু’জন আমার খুব প্রিয় শিক্ষক ছিলেন। দু’জনই বাংলা পড়াতেন। দু’জনই প্রতিষ্ঠিত লেখক ছিলেন। একজন শওকত ওসমান, যার ‘ক্রীতদাসের হাসি’ তখন আদমজি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছে। অন্যজন ‘কণ্ঠস্বর’ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ। শওকত ওসমান স্যার কখনো পাঠ্যবই পড়াতেন না। কিন্তু সাহিত্য বিষয়ে, দেশ ও জাতি সম্পর্কে কথা বলতেন তা আমাদের অভিভূত করতো। চমৎকার প্যান্ট-শার্র্ট পরতেন শওকত ওসমান স্যার, প্রায় সময়ে হাতে থাকতো পেঙ্গুইন সিরিজের কোন না কোন বই। এই প-িত শিক্ষকটিকে ঢাকার বাইরে থেকে আসা তথাকথিত ভালো ছাত্ররা খুব ভুল বুঝতো। আমরা যারা একটু আধটু সাহিত্যচর্চা করতাম, পাঠ্যসূচীর বাইরেও পাড়াশোনা করতাম, আমাদের কাছে তিনি ছিলেন আরাধ্য, বিচিত্র জ্ঞানের ভা-ার। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ সম্পাদিত ‘কণ্ঠস্বর’ তখন তরুণ ও প্রথাবিরোধী লেখকদের মুখপত্র। প্রতিমাসে ঝকঝকে ছাপায় সুসজ্জিত এবং অসংখ্য সৃজনশীল ভালো ভালো লেখায় পরিপূর্ণ হয়ে আমাদের হাতে এসে পৌঁছাতো। আমরা আমাদের কণ্ঠস্বরকে সেই সাহিত্যমাসকে প্রতিধ্বনিত হতে শুনতাম। আমি তখন শেষবর্ষে, ঢাকা কলেজের পাঠ অনেকদিন আগে শেষ হয়ে গেছে, একদিন কণ্ঠস্বর-এর দফতর ফ্রিস্কুল স্ট্রিটে একটি গল্প ‘একটি দুপুরের পলায়ন’ দিয়ে এলাম স্যারের হাতে। অনেক যতœ দিয়ে লেখাটি তিনি ছেপেছিলেন। শুনেছি, স্যারের স্মৃতি কথায় আমার কথা উল্লেখ আছে। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার ছকেবাঁধা পাঠ্যসূচীতে নিজেকে আবদ্ধ রাখতেন না। সাহিত্য শিল্পের বিভিন্ন সব বিষয়ে কথা বলতেন। আমাদেরকে প্রশ্ন করতেন। শ্রেণীকক্ষ আনন্দময় হয়ে উঠতো। খুব প্রাণবন্ত হয়ে উঠতো শ্রেণী কক্ষের পরিবেশ। শুধু তথাকথিত ভালো-ছাত্ররা যারা পাঠ্যসূচীর বাইরে কিছু পড়তে রাজি নয়, তারা গোমরা মুখে বসে থাকতো। কণ্ঠস্বর সাহিত্য মাসিকটি এক সময় ত্রৈমাসিকে রূপান্তরিত হলো। তারপর বের হতো ছ’মাস অন্তর। একসময় নব্বই দশকে স্যার পত্রিকাটি বন্ধ করে দিলেন। এখনও আমার সংগ্রহে স্মৃতির নীরব সাক্ষী হয়ে ‘কণ্ঠস্বর’ এর পুরনো কিছু কপি আছে।
×