ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্ন আর বাস্তবতার কঠিন মঞ্চে সাঁতারু সোনিয়া ও এ্যাথলেট শিরিন

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১২ আগস্ট ২০১৬

স্বপ্ন আর বাস্তবতার কঠিন মঞ্চে সাঁতারু সোনিয়া ও  এ্যাথলেট শিরিন

অলিম্পিকের বড় মঞ্চে এবার বাংলাদেশের দুই নারী ক্রীড়াবিদের পালা। পদকের মঞ্চে উঠার সাধ্য না থাকলেও স্বাদ নিতে চান ক্যারিয়ারের প্রথম অলিম্পিকে। সাফল্য নয়, অংশগ্রহণই দু’জনের মূলমন্ত্র। মেয়েদের ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইল সাঁতারের হিটে সোনিয়া আক্তার আর ১০০ মিটার স্প্রিন্টের প্রিলিমিনারি রাউন্ডে অংশ নেবেন শিরিন আক্তার, বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী। অসচ্ছল পরিবারে সন্তান সোনিয়ার জন্ম ঝিনাইদহ শহরের পাশে এক গ্রামে। বাবা আনিসুর রহমান ছিলেন পান বিক্রেতা। কিন্তু দিন বদলেছে। সংসারের দারিদ্রতাকে সোনিয়া জয় করেছেন সাঁতার কেটে। ঢাকা শহরে স্থায়ী বসবাস দূরের কথা। ঝিনাইদহে সপরিবারের সঙ্গে থাকতেন ছাপরা ঘরে। দেশসেরা সাঁতারু মেয়ের বদৌলতে ব্যবসার পরিধি বেড়েছে পিতার। বাড়ি ঘরের চিত্রও এখন সচ্ছল। ওয়াইলকাড পেয়ে রিও অলিম্পিক খেলার খবরটা শোনার পর শিহরিত হয়েছিলেন সোনিয়া। বাবা-মাকেই প্রথম জানিয়েছিলেন ব্রাজিল যাওয়ার খবরটা। সোনিয়ারও স্বপ্ন ছিল অলিম্পিকে সাঁতরানোর। গত লন্ডন অলিম্পিকে সতীর্থ মাঝিফুজুর রহমানের লড়াই দেখেছেন টিভিতে। সেই থেকে প্রত্যাশা বাড়তে থাকে সোনিয়ার। মনে মনে ভাবতেন অলিম্পিকে অংশ নেয়ার কথা। কবে আসবে সেই সুযোগ। অবশেষে সেই সুযোগ এসে গেল রিও অলিম্পিকে। আর এতেই মহাখুশি সোনিয়া। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এবার নিজেকে প্রমাণের পালা। ব্রাজিল সময় আজ দুপুর ১টায় স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে দাঁড়িয়ে রিও এ্যাকুয়াটিক সেন্টারের পুলে নামবেন বাংলাদেশের এই নারী সাঁতারু। তবে চাওয়া, পাওয়া বলতে কিছু নেই। বাস্তববাদী ১৯ বছর বয়সী সোনিয়া বললেন, খেলাধুলার সবচেয়ে বড় ও মর্যাদার আসর অলিম্পিকে আমার মতো সাঁতারুর প্রত্যাশা বলতে কিছু নেই। অংশ নেয়াটাই বড় কথা। জীবনের বড় শখ ছিল অলিম্পিকে সাঁতরানোর। এটা পূরণ হয়েছে। আর কি আশা করতে পারি। তবে নিজের সেরা টাইমিংটা যদি উতরাতে পারি সেটাই হবে বড় পাওয়া। ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাঁতারু সোনিয়ার সেরা টাইমিং ৩০.৮৬ সেকেন্ড। সেটা করেছিলেন রাশিয়ার কাজানে বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে। ব্রাজিলে অন্তত এই টাইমিংটা টপকাতে চান সোনিয়া। তার কথায়, যেভাবে অনুশীলন করেছি তাতে সেটা সম্ভব। বড় ভাইয়ের হাত ধরে সাঁতারে আসা সোনিয়ার। ২০০৩ সালে যশোর শিক্ষা বোর্ডের হয়ে বয়সভিত্তি সাঁতার দিয়ে শুরু সোনিয়ার। জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে ২০০৬ সালে অংশ নিয়ে জেতেন ১১ স্বর্ণপদক। আর ২০১০ সালে ১১টিতে অংশ নিয়ে ১০টিতেই সোনা। এর মধ্যে ৯টিতে ছিল নতুন রেকর্ড। ঘরোয়া আসরের সাফল্যই ভাগ্য খুলে দেয় তার অলিম্পিক খেলার। এক সময় বাংলাদেশ আনসারের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন সোনিয়া। এখন নৌবাহিনীতে স্থায়ী চাকরি পেয়েছেন। তার প্রথম আন্তর্জাতিক মিট ২০১০ সালে সিঙ্গাপুরে যুব অলিম্পিক গেমস। পরের বছর অংশ নেন যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত যুব কমনওয়েলথ গেমসে। এরপর ২০১৪ কাতার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার রেকর্ড প্রমাণ করছে অভিজ্ঞতার ঝুলিটা বেশ পরিণত। আর এ কারণে কাজানে গড়া টাইমিংটা রিওতে টপকাতে আত্মবিশ্বাসী সোনিয়া। অন্যদিকে সাতক্ষীরার মেয়ে শিরিন আক্তারের প্রত্যাশাও অভিন্ন। ১১.৬৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে এ বছরই জাতীয় মিটে হয়েছেন দেশের দ্রুততম মানবী। ২৩ বছরে পা রাখা শিরিনের প্রিয় ইভেন্ট ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। টানা দুইবারের সেরা সাফল্যকে সামনে রেখে স্বপ্ন দেখছিলেন বয়স থাকতে থাকতেই যেন অলিম্পিক খেলার সুযোগ পান। বাংলাদেশ এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের গাফিলতিতে অনেটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল অলিম্পিকের স্বপ্ন। রিও আসা অপর এ্যাথলেট দ্রুততম মানব মেসবাহ আহমেদের পরিণতিও ছিল শিরিনের মতোই। অনেক নাটকীয়তার পর বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের চিঠি চালাচালিতে ভাগ্য খুলে দু’জনের। বিকেএসপির ছাত্রী শিরিন বর্তমানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হয়ে খেলেন চাকরির সুবাধে। গেমস ভিলেজে আলাপচারিতায় শিরিন বললেন, অলিম্পিক পদক আমাদের জন্য সোনার হরিণ। আমরা তো পারবই না। পরবর্তী প্রজন্মের কেউ পারবেন কিনা জানি না। আমরা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা, প্রশিক্ষণের মধ্যে বড় হয়েছি তা অলিম্পিক পদকের ধারে কাছে যাওয়ার মতো নয়। বড় মঞ্চের এই আসরে পদক জিততে যে ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন তা আমরা পাই না। ফলে অংশগ্রহণটা অলিম্পিক দর্শকের মতো। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে না পারলে দর্শক হয়েই থাকতে হবে। কাজেই কোন আশার বাণী রিও আসার আগেও শোনাইনি। আর এখানে পা রাখার পরও বলিনি। প্রত্যাশা একটাই, ভাল টাইমিং করা। এটা করতে পরলেই ভাবব আমি সফল।
×