ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাণ্ডায় নিভে গেল তীরন্দাজ শ্যামলীর স্বপ্নের প্রদীপ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১২ আগস্ট ২০১৬

ঠাণ্ডায় নিভে গেল তীরন্দাজ শ্যামলীর স্বপ্নের প্রদীপ

দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, কনকনে ঠা-া গায়ে সুঁচ শূলের মতো আঘাত করছিল। সঙ্গে আটলান্টিকের ঝড়ো বাতাস, ক্ষণে ক্ষণে ওঠানামা করছিল তপমাত্রা। ঘড়ির কাঁটার নিচে তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রাত অবধি ১৮ ডিগ্রীর উপরে উঠেনি। এ রকম একটা বৈরী আবহাওয়া রিও গেমস শুরুর পর প্রথম। অলিম্পিক পার্কের আরচারি স্টেডিয়ামে বিভিন্ন দেশের প্রায় হাজার সাতেক দর্শক। একটা বাজে অবস্থার মধ্যেই তীর-ধনুক নিয়ে তৈরি শ্যামলী রায়। প্রতিপক্ষ মেক্সিকোর গাব্রিয়েলা বায়ার্র্দো। তিনটি সেট, প্রতি সেটে তিনটি করে তীর নিক্ষেপ। প্রথম সেটের প্রথম নিশানায় শ্যামলী দশে দশ। আর গ্রাব্রিয়েলা ৯। একটু নড়েচড়ে বসলাম। শ্যামলীর নিখুঁত নিশানা ভেদ, চনমনে হয়ে উঠাই স্বাভাবিক। মনে হচ্ছিল বিদায়ের মিছিলে শ্যামলী হয়তো অপেক্ষা বাড়াবেন। অন্তত একটা জয় দেখার মোক্ষম সময় হয় তো অপেক্ষা করছে। এরই মধ্যে দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় শ্যামলী দশে ৯, প্রতিপক্ষও তাই। বাংলাদেশের তীরন্দাজের দুর্দান্ত লড়াইয়ে এবার বাড়িয়ে দিল টেনশন। এই তো হয়ে যাচ্ছে। তৃতীয়বারে শ্যামলী দশে আট, আর প্রতিপক্ষ দশে দশ। ধুন্ধুমার লড়াই। ক্ষণিক বিশ্রামের পর শুরু দ্বিতীয় সেট। এবার শ্যামলী ভালই ধরা খেয়ে গেলেন, টানা দুই চেষ্টায় দশে সাত। আর তৃতীয়বার ৯। আর গ্রাব্রিয়েলা পুষিয়ে নিলেন, এগিয়ে গেলেন দশে দশ আর ৯, ৯ স্কোর করে। মনে হচ্ছিল আটলান্টিকের ঠা-া বাতাসটা সম্ভবত কিছুটা কাবু করে ফেলেছে শ্যামলীকে। টেনশনের পারদটা একটু ওপরে উঠে গেল। যা, হোক তারপরও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ শেষ সেটে। অবশ্যই পারবেন, মনটাকে শক্ত করলাম। তৃতীয় সেটের প্রথম চেষ্টায় দশে ৯। মন্দ নয়। অন্যদিকে প্রতিপক্ষ মেরে বসল দশে দশ। অবশিষ্ট রইল আরও দুই। আবার ৯ শ্যামলীর। প্রতিপক্ষও একই, সমান স্কোর। এরই মধ্যে মোট যোগ ফলে ভালই পিছিয়ে পড়লেন শ্যামলী। গেমের শেষ প্রচেষ্টায় পুরোদস্তুর হতাশ, মাত্র ৭। আর ৯ স্কোর করে পরবর্তী পর্বে চলে গেলেন মেক্সিকোর গ্রাব্রিয়েলা। শ্যামলীকে তো বটেই, উপস্থিত বাংলাদেশী সবাইকে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে। অর্থাৎ স্বপ্নের সমাধি। ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দিলেও বলতে দ্বিধা নেই র‌্যাঙ্কিং ১২-এর সঙ্গে ৫৩তম স্থানে থেকে লড়াইটা ভালই জমিয়ে দিয়েছিলেন শ্যামলী রায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ব্যর্থতার মিছিলে যোগ হলেন বাংলাদেশের আরেক ক্রীড়াবিদ ৮৪-৭৫ পয়েন্টে হেরে। রিকার্র্বো ইভেন্ট শেষে যে অনুমান তাই শোনা গেল শ্যামলীবরণ শ্যামলীর মুখে। শুরুটা ভালই করেছিলাম। কিন্তু লড়াইটা শুধু গ্রাব্রিয়েলার সঙ্গে নয়, করতে হয়েছে ঠা-ার সঙ্গেও। আঙ্গুল প্রায় অবশ হয়ে আসছিল। ফলে দ্বিতীয় সেটে খুবই বাজে স্কোর হয়েছে। মূলত ওখানেই বড় একটা ধাক্কা খেয়ে পিছিয়ে পড়েছিলাম। যা আর রিকভারি করা সম্ভব হয়নি। ততক্ষণে গ্রাব্রিয়েলা বাড়িয়ে নেয় আত্মবিশ্বাস। খারাপ লাগছে, জিততে না পারায় কিছুই ভাল লাগছে না। আবহাওয়াটা আর সময় পায়নি। একেবারে বাংলাদেশের ম্যাচের দিন বিদ্রোহ করে বসল। যদিও এই সমস্যা দুই পক্ষের জন্যই সমান। তবে ভাল ফাইট দিতে পেরে হতাশার মাঝেও কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন শ্যামলী। এই অভিজ্ঞতা আগামীতে আরও ভাল করার অনুপ্রেরণা যোগাবে। বাজে আবহাওয়ার মধ্যে যা করেছি এর বেশি সাধ্য আমার নেই। জীবনের প্রথম অলিম্পিক, একটা চাপও মাথার ওপর ঘুরপাক খাচ্ছিল। মূলত কিছুটা টেনশনের কারণে ছন্দ ধরে রাখতে পারেনি। আশা করি আগামীতে সুযোগ পেলে রিওর চেয়ে অনেক ভাল করব। তার ভারতীয় কোচ নীশিত দাস অবশ্য ছাত্রীর নৈপুণ্যে সন্তুষ্ট। বললেন ভালই করেছে। যা আমি আশা করিনি, তারচেয়ে ভাল খেলেছে শ্যামলী। লড়াইয়ের সময় তার মধ্যে যেটুকু ঘাটতি দেখেছি, সেটা শোধরানোর চেষ্টা করব ঢাকায় গিয়ে। আশা করি কাটিয়ে উঠতে পারলে আগামীর ভবিষ্যত হিসেবে গড়ে উঠবে শ্যামলী। পরবর্তী অলিম্পিকে তাকে আমি পদকের জন্য তৈরি করতে চাই। হাতে অফুরন্ত সময়। এর মধ্যে আরও পোক্ত হয়ে দেশের জন্য সম্মানজনক কিছু উপহার দিতে সক্ষম হবে শ্যামলী। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে সাত ক্রীড়াবিদের মধ্যে সবার আগে বিদায় নেন শূটার আবদুল্লাহ হেল বাকী। দশ মিটার এয়ার রাইফেলে বাকীর বাজে রেজাল্টের পর নগদ কিছু করতে পরলেন না তীরন্দাজ শ্যামলী রায়। বনে গেলেন একই পথের পথিক। ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইল সাঁতারে আজ ভাগ্য পরীক্ষা মাহফিজুর রহমান সাগরের। একই দিন মাঠে নামবেন বাংলার টাইগার গলফার সিদ্দিকুর রহমান। জোর দিয়েই বলা যায় ব্যর্থতার মিছির আরও বড় করেন সাঁতারু সাগর। আর এগিয়ে যাওয়ার পালায় সিদ্দিকুর হয়তো পিছ পা হবেন না।
×