ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাক্ষী জাফর আলীর জবানবন্দী

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ হোসাইন এবং মোসলেমসহ রাজাকার ও পাক আর্মি ২৬ জনকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১২ আগস্ট ২০১৬

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ হোসাইন এবং মোসলেমসহ রাজাকার ও পাক আর্মি ২৬ জনকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১২তম সাক্ষী জাফর আলী (৭১) বলেছেন, রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানসহ রাজাকার ও পাক আর্মিরা আমার মাকেসহ ২৬ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। আমি আমার মা হত্যার বিচার চাই। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কুমিল্লার দাউদকান্দি থানাধীন গোপালেরচর গ্রামের ক্যাপ্টেন (অব) মোঃ শহিদুল্লাহর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন ট্রাইব্যুনাল। সেইসঙ্গে শহিদুল্লাহর সুচিকিৎসার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম জাফর আলী। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৭১ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- গুরুই, থানা নিকলী, জেলা-কিশোরগঞ্জ। আমি লেখাপড়া করি নাই। বর্তমানে আমি কৃষি কাজ করি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমি গুরুই গ্রামে ছিলাম। সাক্ষী তার সাক্ষ্যতে বলেন, একাত্তরের ভাদ্র মাসের ২০ তারিখ ৫০/৬০ রাজাকার আমাদের গ্রামে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গুলিবিনিময় চলে ১০ মিনিট। পরে দেখতে পাই, আমাদের এলাকার রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানসহ রাজাকার ও পাক আর্মিরা আমাদের গুরুই গ্রাম থেকে আমার মা ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনকে আটক করে একত্র জড়ো করে। এবং জড়োকৃতদের বটতলায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ওই সময় রাজাকার হোসাইন ও মোসলেম প্রধান আমার মা সাহেদা বানুকেও গুলি করে হত্যা করে। আমি আমার মা হত্যা বিচার চাই। সাক্ষী বলেন, ওই দিন আমার মাসহ ১৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। আমাদের গ্রামের ইছব আলী ও হামিদ বটতলায় এসে আমাকে জানায়, তাদের এলাকার খালেকের বাড়ির সামনে আরও ১০ জনকে হত্যা করা হয়। এরপর আমরা আমাদের নানার বাড়িতে চলে যাই। আমি আসামি হোসাইন ও মোসলেম প্রধানকে আগে থেকেই চিনতাম। আসামি সোমলেম প্রধান ট্রাইব্যুনালের ডকে শনাক্ত। কুমিল্লার শহিদুল্লাহ ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কুমিল্লার দাউদকান্দি থানাধীন গোপালেরচর গ্রামের ক্যাপ্টেন (অব) মোঃ শহিদুল্লাহর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন ট্রাইব্যুনাল। সেইসঙ্গে শহিদুল্লাহর সুচিকিৎসার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি এম আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। এ মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৭ অক্টোবর। এর আগে এই আসামিকে গ্রেফতারের আবেদন করেন প্রসিকিউটর আবুল কালাম। প্রসিকিউটর আব্দুল কালাম জানান, শহিদুল্লাহর পক্ষে জামিনের আবেদন করেছিল। কিন্তু আমরা কতগুলো যুক্তি দেখিয়ে তীব্র বিরোধিতা করেছি। ফলে ট্রাইব্যুনাল শহিদুল্লাহর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। আসামির বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের একাধিক অভিযোগ পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২টি মানবতাবিরোধী অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, আসামি মোঃ শহিদুল্লাহ একাত্তরে দাউদকান্দি একটি পাক সেনাদের আর্মি ক্যাম্প স্থাপন করেন। তিনি সেই ক্যাম্পের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একাত্তরে এই আসামি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন।
×