ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে অচেতন অবস্থায় ধরা পড়ল সেই হাতি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১২ আগস্ট ২০১৬

অবশেষে অচেতন অবস্থায় ধরা পড়ল সেই হাতি

আজিজুর রহমান ডল, সরিষাবাড়ী থেকে ফিরে ॥ ভারতের অসম রাজ্য থেকে কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত দিয়ে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীপথে বন্যার পানিতে ভেসে আসা হাতিটি বৃহস্পতিবার দুপুরে গভীর পানিতে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়লে দর্শনার্থীরা তাকে টেনে তোলেন। এতে অল্পের জন্য নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা পেয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলার কয়রা গ্রামে আমগাছের সঙ্গে বাঁধা পড়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাতিটি সরিষাবাড়ী পৌরসভার ধানাটা, ইস্পাহানী এবং কামরাবাদ ইউনিয়নের স্বাধীনাবাড়ি, সোনাকান্দর, নিউটিংগর ও কয়রা এলাকায় ছোটাছুটি করেছে। ওই দিন সকাল ৬টায় হাতিটি কামরাবাদ ইউনিয়নের সোয়াকৈর গ্রামের হরেকের বাড়ির সামনে দিয়ে ঝিনাই নদী পাড়ি দিয়ে নিউটিংগর গ্রামে যায়। এর পর হাতিটি কামরাবাদ ইউনিয়নের নিউটিংগর, স্বাধীনাবাড়ি, সোনাকান্দর ও কয়রা এলাকায় কয়েক দফা ছোটাছুটি করেছে। ওই সময় বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিকের সঙ্গে ছয় সদস্যের একটি উদ্ধার দল হাতিটিকে ট্র্যাঙ্কুলাইজারগান দিয়ে অচেতন করার জন্য অনুসরণ করতে থাকে। একপর্যায়ে ওই দিন দুপুরে হাতিটি আবারও সরিষাবাড়ী পৌরসভার ধানাটা গ্রামে পৌঁছে। সেখানে উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে থাকা ঢাকা অঞ্চলের সাবেক বন কর্মকর্তা ড. তপন কুমার দে এবং ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোবিন্দ রায়ের নির্দেশে কক্সবাজার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন দক্ষ শূটার ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান খুব কাছ থেকে ট্র্যাঙ্কুলাইজারগান দিয়ে মেটাল ডার্টের শূট করে হাতির শরীরে অচেতন করার ওষুধ পুশ করেন। ওই সময় ট্র্যাঙ্কুলাইজারগানের আঘাতে হাতিটি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে হাতিটি ধানাটা গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার দূরে সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের কয়রা গ্রামের মনু ম-লের বাড়ির পাশের্^ কচুরিপানাযুক্ত গভীর পানির মধ্যে গিয়ে অচেতন হতে থাকে। এ সময় উদ্ধারকারীরাসহ শত শত দর্শনার্থী মনু ম-লের বাড়ির পাশের্^ কচুরিপানার কাছে গিয়ে দেখেন হাতিটি ধীরে ধীরে গভীর পানিতে ডুবে যাচ্ছে। তখন অচেতন হাতিটিকে উদ্ধারের জন্য ঢাকা অঞ্চলের সাবেক বন কর্মকর্তা ড. তপন কুমার দে পানিতে নেমে সকলের সহযোগিতা প্রার্থনা করেন। এ সময় শত শত দর্শনার্থী পানিতে নেমে মোটা নাইলনের রশি দিয়ে হাতিটির পা, গলা ও শূড় বেঁধে টেনে প্রায় এক শ’ মিটার দূরে ডাঙ্গায় তোলে। পরে উদ্ধারকারীরা হাতিটির চার পা বেঁধে ফেলে এবং হাতিটিকে দুটি বৃহৎ আমগাছের সঙ্গে আটকে রাখে। প্রায় দু’ঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেলে হাতিটি আস্তে আস্তে হাত-পা নাড়তে থাকে। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় হাতিকে টেনে উপরে তুলে আনা হয়। ২৭ জুন বন্যার পানিতে ভেসে আসে ভারতীয় বুনো হাতিটি। জেলার সরিষাবাড়ী, মাদারগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে হাতিটি। এর আগে হাতিটি রৌমারী, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, বগুড়ায় অবস্থান করেছিল। এ সময় হাতিটি বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত করে। আক্রমণ করে কমপক্ষে ২০-২৫ জনকে। টানা ৪৪ দিন বন্যায় পানিবন্দী থাকায় আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবরের শিরোনাম হয় হাতিটি। হাতি উদ্ধারে ৩ আগস্ট ভারত-বাংলার ১৭ সদস্যের উদ্ধারকারী দল তৎপরতা চালায়। ৯ আগস্ট হাতি উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে ভারতীয় দল চলে যায়। এর পর নতুন করে বাংলাদেশের প্রাণী-প্রকৃতি বিশেষজ্ঞরা হাতি উদ্ধারে হাল ধরেন। বুধবার হাতি উদ্ধারে ‘ট্র্যাঙ্কুলাইজার’ দিয়ে গুলি করেও কাবু করতে পারেনি। উদ্ধারকীদের ভাষ্য অনুযায়ী ট্র্যাঙ্কুলাইজার প্রয়োগে প্লাস্টিক মেটাল ব্যবহার করায় হাতির গায়ে পুশ হয়নি। শেরপুরের বন কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহর ভাষ্য অনুযায়ী, জনরোষের কারণে হাতিটি ডাঙ্গায় উঠতে পারছিল না। ফলে উদ্ধারকাজেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছিল। চট্টগাম বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তা অসিত অঞ্জন পাল, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রাণী বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিভাগীয় বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক, ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ সাইদ হোসেন, হাতি বিশেষজ্ঞ কৌশল কুমার সরমা, ময়মনসিংহ বন বিভাগের কর্মকর্তা গোবিন্দ রায় ও দু’জন মাহুত সুজনসহ বন বিভাগের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল হাতি উদ্ধারে সরিষাবাড়ীতে অবস্থান করছিল।
×