ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাছিরের অভিযোগ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে তোলপাড়, সাত দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১২ আগস্ট ২০১৬

নাছিরের অভিযোগ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে তোলপাড়, সাত দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ঘুষ চাওয়ার বিষয় নিয়ে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছিরের অভিযোগে বৃহস্পতিবার দিনভর মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় চলেছে। এই অভিযোগের জবাব চেয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মেয়র নাছিরের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না দিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জ্যোতির্ময় দত্ত স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মেয়র নাছিরকে এই সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, চট্টগ্রামের মেয়রকে ব্যাখ্যা দিতেই হবে। তিনি আইনের উর্ধে নন। তিনি প্রকাশ্যে সরকারী কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের হেয় করে বক্তব্য দিয়েছেন। এটা তিনি দিতে পারেন না। যে কর্মকর্তা তার কাছে পাজেরো গাড়ি চেয়েছে তার বিরুদ্ধে তিনি মন্ত্রী অথবা আমাকে বলতে পারতেন। তা না করে তিনি ঢালাও অভিযোগ করেছেন। সাত দিনের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া গেলে স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ১১টি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে সবচেয়ে বেশি টাকা বরাদ্দ দেয়ার পরও তিনি কেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি নাখোশ, তা আমি জানি না। অন্য কোন অপ্রাপ্তি থেকে এসব বলতে পারেন। তার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তা দায়ী নন। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে যে চিঠি দেয়া হয় তা তিনভাবে মেয়র নাছিরের কাছে পাঠানো হয়েছে। রেজিস্ট্রি ডাকে, ই-মেইল ও হাতে হাতে। তিনি ওই চিঠি পাননি এমন কথা বলার কোন সুযোগ রাখা হয়নি। একজন মেয়র মন্ত্রণালয়ের চেয়ে বড় হতে পারেন। তাকে মন্ত্রণালয়ের আইন মেনেই কাজ করতে হবে। তার অবস্থান থেকে মন্ত্রণালয়কে ভাবলে চলবে না। আমরা অপেক্ষা করছি জবাব কি আসে। জবাব সন্তোষজনক না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বুধবার চট্টগ্রামে এক সভায় মেয়র নাছির বলেন, ‘দাবি মত’ কর্মকর্তাদের ঘুষ দিলে যেখানে ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যেত। কিন্ত আমি তা না দেয়ায় এসেছে মাত্র ৮০ কোটি টাকা। আমাকে বলা হয়, কর্পোরেশনের জন্য যত টাকা চাই দেয়া হবে। তার জন্য শতকরা ৫ ভাগ টাকা দিতে হবে। মেয়র নাছির ঘুষের ঘটনা তুলে ধরে ওই অনুষ্ঠানে বলেন, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা সিটি কর্পোরেশনের প্রকল্প পাস করার জন্য একটি নতুন পাজেরো গাড়ি চেয়েছিলেন। আমি দিতে রাজি হইনি বলে বরাদ্দও কম দেয়া হয়েছে। নাছিরের ওই অভিযোগের ‘প্রমাণ দিতে হবে’। স্থানীয় সরকার সচিব আব্দুল মালেক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। মেয়র তার কথা যা বলার বলেছেন, আমরা তার কাছে জানতে চাইব, প্রমাণ চাইব। তিনি প্রমাণ দেবেন যে মন্ত্রণালয়ের কোন্ কর্মকর্তা তার কাছে জীপ চেয়েছেন। তিনি যার কথাই বলুক, সেটা উনি বলুক। আমরা ওই কর্মকর্তারও তদন্ত করব। যদি ওই কর্মকর্তা দোষী হন তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যদি প্রমাণ না করতে পারেন, তাহলে তো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উনি যে কথাগুলো বলেছেন, উনি একজন রাজনৈতিক নেতা এবং একজন মেয়র... সুতরাং উনার বক্তব্য উনিই স্যাটেল করুক। আমরা উনার কাছে অফিসিয়ালি ব্যাখ্যা চেয়েছি। মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠির বিষয়ে জানতে মেয়র আ জ ম নাছিরের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকল্প অনুমোদন এবং বরাদ্দ পেতে মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘুষ চান, মন্ত্রণালয়ের জনৈক যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা আপনার কাছে একটি নতুন পাজেরো জীপ চেয়েছেন, ৫ শতাংশ ঘুষ দিলে আপনি ৮০ কোটির পরিবর্তে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেতেন ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ করে গত ১০ আগস্ট চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মর্মে ১১ আগস্ট বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। আপনার আনীত অভিযোগসমূহ গুরুতর। এতে মন্ত্রণালয় তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে; যার প্রমাণ প্রদান আবশ্যক। এ পরিপ্রেক্ষিতে কোন্ কর্মকর্তা কোথায়-কখন আপনার কাছে ঘুষ দাবি করেছেন, কে, কোথায়-কখন পাজেরো জীপ চেয়েছেন, কোন্ প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে কোন্ কর্মকর্তা জটিলতার সৃষ্টি করেছেন; তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখপূর্বক উপযুক্ত প্রমাণ আগামী সাত দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন শাখার অতিরিক্ত সচিব জ্যোতির্ময় দত্ত।
×