ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তোফায়েলকে শ্রিংলা ॥ বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনতে ভারত সরকার আন্তরিক

জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় দু’দেশ এক সঙ্গে কাজ করবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১২ আগস্ট ২০১৬

জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় দু’দেশ এক সঙ্গে কাজ করবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ-ভারত এক সঙ্গে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। তিনি বলেন, ভারতের অকৃত্রিম বন্ধু বাংলাদেশ। তাই এদেশে সব ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে ভারত সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। শুধু তাই নয়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনার বিষয়েও ভারত সরকার আন্তরিক। এলক্ষ্যে ভারতীয় বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বাড়াতে হবে। শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা গ্রহণ করায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে ভারত থেকে আমদানিকৃত কাঁচামালের শুল্ক না বাড়ানোরও দাবি জানান তিনি। অপরদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তবে এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায়ও ভারত এখন বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। ওই বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। গুলশানের হলি আর্টিজান, কল্যাণপুর ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঘটনার জঙ্গী তৎপরতা নির্মূল করার ব্যাপারে উভয় দেশ একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করাই ছিল বৈঠকের মূল বিষয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর ভারত জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সহযোগিতা দিয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও এটি অব্যভহত থাকবে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও ব্যবসার স্বার্থে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ এখন সন্ত্রাস নির্মূলে কাজ করছে। তাদের এই কাজে সব সময় পাশে থাকবে ভারত। তিনি বলেন, সীমান্তহাট সীমান্ত এলাকার জনগণের কাছে অত্যন্ত কম সময়ে জনপ্রিয় হয়েছে। সীমান্ত এলাকার যোগাযোগ বৃদ্ধিতে এটি একটি সাফল্য। তাই এই হাট আরও বৃদ্ধি করার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। হাট বাড়ানোর বিষয়ে আরও কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায় তা ভাবা হচ্ছে। এ ব্যাপারে খুব তাড়াতাড়ি একটি উদ্যোগ নেয়া হবে। বর্তমান চারটি সীমান্তহাট চালু রয়েছে, দুটি হাটের নির্মাণ কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং আরও সাতটি হাট স্থাপনের বিষয় বিবেচনাধীন আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অর্থনেতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা হবে। ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য এখন বেশ উপযুক্ত। এ কারণে অনেকে এখানে আসতে উৎসাহ দেখাচ্ছে। ভারতীয় উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৯৭১ সালের কঠিন দিনগুলোতে ভারত আমাদের পাশে ছিল বলেই আমরা ৯ মাসের মধ্যে দেশকে স্বাধীন করতে পেরেছিলাম। ভারত আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু। বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) চুক্তির ফলে বাংলাদেশ বেশি লাভবান হবে। তিনি বলেন, শূন্য হাতে যাত্রা করে আন্তর্জাতিক বিশ্বে মর্যাদার আসনে দাঁড়িয়ে আছি। কোন ষড়যন্ত্রই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ভারতে ততদিন পাশে থাকবে বলে আশা করি। ভারত থেকে অনেক কাঁচামাল আমদানি করা হয়। সকল দিক থেকে আমরা সুবিধা পাচ্ছি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রফতানিতে যেসব বাধা আছে সেগুলো আস্তে আস্তে দূর হচ্ছে। শুধু পাট রফতানির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। সেটি তুলে ধরেছি। বাকিগুলো দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্য সমাধান করব। ব্যবসা বাণিজ্যের কোন ক্ষেত্রে বাধা নেই। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি থাকলেও তা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। কারণ ভারত থেকে বাংলাদেশ কাঁচামাল আমদানি করে তা বিদেশে রফতানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। তবে ভারত থেকে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে যাতে অতিরিক্ত কোন ধরনের শুল্ক আরোপ করা না হয়, সে বিষয়ে উভয় দেশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভারতের আন্তরিকতার কারণে দীর্ঘদিন পর হলেও ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। এ অঞ্চলে বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধি করতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বিবিআইএন প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারত সহযোগিতা করছে। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গত অর্থবছরে উভয় দেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভারত বাংলাদেশে রফতানি করেছে ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয়েছে মাত্র ৭শ মিলিয়ন ডলার। বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
×