ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১২ আগস্ট ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ তোমার স্মৃতি কি সূর্যের মতো জ্বলে?/বাংলার পথে পথে তারা কথা বলে...। বঙ্গবন্ধু নেই। নেই আর। মহান নেতার স্মৃতিরা কথা বলছে। সারাদেশের মতো রাজধানী শহর ঢাকাও শোকগ্রস্ত। বিয়োগ ব্যথা গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে। আর মাত্র কয়েক দিন পর ইতিহাসের কালো দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই দিনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। জাতির পিতার রক্তে ভেসে যায় ধানম-ি বত্রিশ। রেহাই পাননি মহান নেতার পরিবারের সদস্যরাও। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে তবু ধ্বংস করা যায়নি। দিবসটি সামনে রেখে আরও জোরালোভাবে ফিরে আসছেন মুজিবুর। এখন ঢাকার প্রতি প্রান্তে মহানায়কের ছবি। প্রধান প্রধান সড়কের দুই পাশে শোকের কবিতা। হোটেল সোনারগাঁও এবং রূপসী বাংলা মোড়ে জাতীয় শোক দিবসের স্মারক উপস্থাপনা দেখে মন বিষণœ হয়ে যায়। তবে শোকে কাতর হওয়া নয় শুধু, শোককে শক্তিতে পরিণত করার আহ্বান জানিয়ে সেখানে লিখে রাখা হয়েছে অমর কবিতাÑ তোমার অভয় বাজে হৃদয়মাঝে হৃদয়হরণী। আরও নানা আয়োজন। উদ্যোগ। এভাবে মহাপ্রস্থানের মাসেও বঙ্গবন্ধু নতুন করে যেন জন্ম নিচ্ছেন। প্রেরণার অনন্ত উৎস হয়ে সামনে আসছেন। যেতে দাও যেতে দাও গেল যারা।/তুমি যেয়ো না, তুমি যোয়ো না,/আমার বাদলের গান হয়নি সারা...। বাদলের গান সত্যি শেষ হচ্ছে না। দুই মাসের বর্ষা। আষাঢ় বিদায় নিয়েছে। শ্রাবণের শেষবেলা এখন। এর পরও তুমুল বৃষ্টি। অঝোর ধারায় ঝরছে। ভারি বর্ষণে ভেসে যাচ্ছে শহর ঢাকার অলিগলি রাজপথ। দিনে এক বা দু’বার নয়, কয়েক দফায় বৃষ্টি হচ্ছে। তাও অকস্মাত। বৃহস্পতিবার দুপুরের কথাই ধরা যাক, আজিজ মার্কেট থেকে বাংলামোটর আসার পথে হঠাৎই আকাশ যেন ভেঙ্গে পড়ল। রিক্সার হুড দ্রুত টেনে নিয়েও নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব হলো না। পরে চালক সুবিধামতো জায়গায় রিক্সা থামিয়ে সিটের নিচ থেকে পলিথিন বের করে দিলেন। সেটি দিয়ে নিজেকে মুড়িয়ে নিয়ে বাংলামোটর পর্যন্ত আসা সম্ভব হয়। আসতে আসতে দেখা যায়, পথচারীদের অনেকেই ভিজে একাকার। কেউ কেউ কাকভেজা শরীরে ফুটওভারব্রিজের নিচে দাঁড়িয়েছিলেন। বাস আসামাত্রই সেটিতে উঠে পড়ছিলেন। বোঝা যাচ্ছিল, বৃষ্টি থেকে বাঁচতেই এমন তাড়াহুড়া। শ্রাবণের এ বৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করে আবহাওয়া অফিস বলছে, পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি। সহসাই থামছে না। এবার বিলম্বে শুরু হয়েছিল বর্ষা। শেষটাও হবে দেরি করে। এদিকে বৃষ্টির আগে ও পরের সময়টুকু আবার রৌদ্রজ্জ্বল। প্রখর রোদে গরম বাড়ছে। রোদ-বৃষ্টির দুটোই বেশ ভোগান্তির এখন। বর্বর জঙ্গী হামলার পর থেকে কেমন যেন স্থবির হয়ে গিয়েছিল গুলশান। একটা ছন্দপতন টের পাওয়া যাচ্ছিল। নিরাপত্তার প্রশ্নটি এত বড় হয়ে সামনে এসেছিল যে, ওই এলাকার গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়। কোন পাবলিক বাস চলাচল করেনি। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। এভাবে বেশ কিছুদিন। আর তার পর ভাল একটি খবর। বুধবার রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনে সার্কুলার বাস ও বিশেষ রিক্সা সার্ভিস চালু হয়েছে। প্রথমবারের মতো দেশের নির্দিষ্ট এলাকায় চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট কোন যানবাহনের ব্যবস্থা করা হলো। প্রশংসনীয় উদ্যোগটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের। বিশেষ সার্ভিস সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন সোসাইটির বাসিন্দা ও পুলিশের সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে। বুধবার উদ্বোধন হওয়ার পর বৃহস্পতিবার থেকে পুরোদমে চলছে নতুন বাস ও রিক্সা। চাহিদার তুলনায় কম হলেও দেখে ভাল লাগছে। সুন্দর পরিপাটি বাস। একই সঙ্গে খুবই আরামদায়ক। ত্রিশ সিটের এসি বাসগুলোতে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে মাত্র ১৫ টাকায়। রিক্সাগুলোও যাত্রীদের বসার পক্ষে বিশেষ উপযোগী। হলুদ রঙের রিক্সা অনেক দূর থেকে দেখা যায়। তবে বাস ও রিক্সার সংখ্যা দ্রুত বাড়ানো জরুরী বলে মনে করছেন যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার নিকেতনে হাতেগোনা কয়েকটি হলুদ রিক্সা চোখে পড়ে। আমিনুর রহমান নামের এক যাত্রীর বক্তব্য, আমি রিক্সা ও বাস দুটোতেই চড়েছি। পছন্দ না হওয়ার কোন কারণ নেই। তবে সংখ্যা অনেক কম। এত কম যে, মূল উদ্দেশ্য মার খেতে পারে। নতুন সার্ভিস নিয়ে কৌতূহল থাকতে থাকতেই বাস ও রিক্সার সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
×