ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর আট লেন মহাসড়ক খুলছে কাল

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১২ আগস্ট ২০১৬

 ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

রাজন ভট্টাচার্য ॥ সাত কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম আট লেন জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের যাত্রা শুরু হচ্ছে। ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর পর্যন্ত এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন কাল শনিবার। নতুন এই প্রকল্পের যাত্রা শুরুর মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে যাতায়াত আরও সহজ হলো। অর্থাৎ এই এলাকা পারি দিতে এখন আর যানজটের ভোগান্তি হবে না। পরিবহন মালিক-শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীও এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। মালিক সমিতি নেতৃবৃন্দ বলছেন, অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাজ শেষ হওয়ায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগ সিলেট এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা- এই তিন অঞ্চলেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়বে। ১৩ আগস্ট গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর মহাসড়ক হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক ও ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কের প্রবেশ ও বহির্গমনের প্রধান করিডর। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর থেকে যানবাহন দ্রুত যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর মহাসড়কে প্রবেশ করবে। এই বিবেচনায় ২০১১ সালে এ মহাসড়কের প্রবেশ ও বহির্গমন অংশে যানবাহনের চাপ সামাল দিতে চার লেনের মহাসড়কটি আট লেনে উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ইতোমধ্যে মহাসড়কটি আট লেনে উন্নীত হওয়ায় যানবাহন দ্রুত ও নির্বিঘেœ ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আসা-যাওয়া করতে পারছে। উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু লিংক রোড চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শেষ হলে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে আসা যানবাহন এ মহাসড়কে প্রবেশ করে সহজে ও স্বল্প সময়ে যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করতে পারবে। হানিফ ফ্লাইওভার থেকে শিমরাইল ইন্টারসেকশন পর্যন্ত ৭ দশমিক ২০ কিলোমিটার মহাসড়কের বিদ্যমান ৪ লেন উন্নয়ন এবং নতুন ৪ লেন নির্মাণের মাধ্যমে মহাসড়কটি আট লেনে উন্নীত করা হয়েছে। সড়কে নিরাপদ যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে সেন্টার লাইন বরাবর নিউজার্সি ব্যারিয়ার নির্মাণ, কালভার্ট সম্প্রসারণ, মানুষের রাস্তা পারাপারের সুবিধার্থে চারটি ফুট ওভারব্রিজ ও প্রয়োজনীয়স্থানে ফুটপাথ এবং বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য আরসিসি ড্রেন ও সসার ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর জাতীয় মহাসড়ক অংশে যানজট ব্যাপক হ্রাস পাবে, এমন আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের। চলতি সপ্তাহে প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি দেখতে যান সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরিদর্শন শেষে তিনি এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, একটু দেরিতে হলেও সড়কটি চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘ দুর্ভোগের অবসান হলো। এটি বাংলাদেশের প্রথম আট লেন। এর আগে কোন আট লেন সড়ক বাংলাদেশে ছিল না। আরেকটি আট লেন করার চিন্তা সরকারের আছে। মন্ত্রী বলেন, সড়কে বেপরোয়া গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। ডিভাইডারের ওপর দিয়ে রাস্তা পারাপার হওয়া যাবে না। এই সড়কে যে ৪টি ফুটওভার ব্রিজ আছে, সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। রাস্তার ওপর থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে। তিনি বলেন, যতই চার লেন, আট লেন হোক রাস্তায় আর পরিবহনে শৃঙ্খলা না হলে পরিবর্তন আসবে না। আট লেন রাস্তার যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পরিসর বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে অনেক দ্রুত পরিবহনগুলো চলাচল করছে। নেই কোন যানজট। রাস্তার পাশের কিছু বেদখল অংশ উচ্ছেদের কাজ চলছে। উদ্বোধনের প্রস্তুতিও চলছে সমানতালে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় রাস্তার পরিধি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। কারণ, এই সড়কে যানবাহনের চাপ সবচেয়ে বেশি। যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল করে ২৪ ঘণ্টা। এতে যানজটের দুর্ভোগ ছিল অনেক আগে থেকেই। তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় এখন যানজট থেকে মুক্তি মিলবে। পরিবহনগুলো দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। মালিকরাও লাভবান হবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এক নজরে প্রকল্প ॥ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের নাম ঠিক করা হয় ‘যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর (পোল্ডার সড়ক) আট লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প’। সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিক কাজের উদ্বোধন হয়েছিল। শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুন মাসে। নানা জটিলতায় তা শেষ হয়েছে প্রায় দেড়মাস পর। সরকারী অর্থায়নে নির্মিত এ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য যাত্রাবাড়ীর হানিফ ফ্লাইওভার থেকে শিমরাইল ইন্টারসেকশন পর্যন্ত সাত দশমিক ২০কিলোমিটার। প্রকল্পজুড়ে প্যাকেজের সংখ্যা ৯। এরমেধ্যে কালভার্ট সম্প্রসারণ হয়েছে চারটি। ফুটওভারব্রিজ চারটি, আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে ৪২০মিটার, সসার ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে এক হাজার ৬০০মিটার, নিউ জার্সি ব্যারিয়ার সাত হাজার মিটার, সাইনবোর্ড এলাকায় একটি ইন্টারসেকশন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও এ প্রকল্পের অধীনে সানারপাড়ায় একটি, মৌচাকে দুটি, মাদানীনগরে দুটি ও শিমরাইলে একটি করে মোট ছয়টি সংযোগ সড়কের উন্নয়নকাজ করা হয়। তবে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতার অনেকেই বলছেন, ঢাকা থেকে হানিফ ফ্লাইওভার ও আট লেন প্রকল্প হয়ে গাড়িগুলোকে কাঁচপুর ব্রিজে গিয়ে যানজটের মুখে পড়তে হবে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দুই লেনের ব্রিজ হওয়ায় একসঙ্গে এত গাড়ি চলার সুযোগ পাবে না। ফলে আট লেনের গাড়ি দুই লেন অতিক্রম করতে সময় লাগবে। তারা আরও বলছেন, ব্রিজ পার হয়ে বামদিকে সিলেট ও ডানদিকে চট্টগ্রাম ক্রসিংয়েও যানজটে পড়তে হবে। কারণ, এই পয়েন্টে ট্রাফিক ব্যবস্থা ভাল না হওয়ায় এমন আশঙ্কা তাদের। তাই কাঁচপুর সেতুর ঢালে অর্থাৎ চট্টগ্রাম ও সিলেট মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
×