ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আশার প্রদীপ নিয়ে সিদ্দিকুরের মিশন শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১১ আগস্ট ২০১৬

আশার প্রদীপ নিয়ে সিদ্দিকুরের মিশন শুরু আজ

নিষ্ঠুর বক্সিংকে নান্দনিকতা, শিল্পে রূপ দিয়েছিলেন প্রয়াত বক্সার মোহাম্মদ আলি। আর আধুনিক গলফ বিশ্বে জনপ্রিয় করে তোলেন আমেরিকার টাইগার উডস। যদিও গলফ চর্চার ইতিহাস শত বছরের। কোন তর্ক ছাড়াই বলা যায় বাংলাদেশে গলফ খেলার পরিচিতি সিদ্দিকুর রহমানের হাত ধরে। আগে এই খেলার প্রতি সাধারণের তেমন আগ্রহ ছিল না বললেই চলে। সংবাদ মাধ্যমে গলফের জায়গা সীমাবদ্ধ ছিল প্রেস বিজ্ঞতি পর্যন্ত। সেই চিত্র আর কেউ নন, পাল্টে দিয়েছেন সিদ্দিকুর। আর তাই নামের পাশে যোগ হয়ে গেছে ‘বাংলার টাইগার’। মঝেমধ্যে খবরের শিরোনামও হয়ে ওঠে গলফ। জায়গা করে নেয় পত্রিকার প্রথম পাতায়। যার পুরো কৃতিত্বই সিদ্দিকুরের। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে নতুন সংযোজন তিনি। গলফের মাধ্যমে দেশের পরিচিতি বাড়িয়ে দিয়েছেন বাংলার টাইগার। দেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের গ-ি পেরিয়ে সিদ্দিকুর রহমান এখন আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়। অলিম্পিকে সরাসরি সুযোগ পাওয়া দেশের প্রথম ক্রীড়াবিদ। বেইস ক্যাম্পের বাইরে সকালের মিষ্টি রোদে শুরু করলেন ঘাম ঝরানো। প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, অনুশীলনে। গতকাল বুধবারই ছিল তার অনুশীলন আনুষ্ঠানিকতার শেষ পর্ব। কারণ আজ থেকেই স্টিক হাতে মাঠে নামতে হবে। রিও অলিম্পিক গেমসের গলফ শুরু পুরুষ ব্যক্তিগত ’স্ট্রোক পে’ দিয়ে। রিও’র সুসজ্জিত গলফ ভেন্যুতে জীবনের প্রথম অলিম্পিক মিশন শুরু করবেন আজ সিদ্দিকুর। বুকভরা সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন। নিজের ক্যারিয়ার আরও সুবিন্যস্ত করার বাসনা তো আছেই। তারচেয়ে বড় দেশের সন্মান। আর দেশের সন্মানের বিষয়টাই বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। একটা কিছু করতেই হবে। পদক গলায় ঝুলানোর ব্যাপারে এখনই কোন মন্তব্য করতে রাজি হলেন না। কেবল বললেন, আগে শুরুটা ভাল করতে চাই। তারপর ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া। ব্যর্থতার মিছিলে নাম লিখাতে চাই না রিও এসে। ১১২ বছর পর অলিম্পিকে ফের জায়গা করে নেয়া গলফে নামের সুবিচার করতে চাই। ভাল খেলার মন-মানসিকতা নিয়েই রিও এসেছি। কথার সঙ্গে কাজের মিল না রাখতে পারলে দেশের মানুষ সন্মান জানাবে না। যদিও পরীক্ষা বেশ কঠিন। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ নিয়ে লড়াই করবে না কেউ। নিজের সেরাটা দিয়েই চেষ্টা করবেন সবাই। এই সেরাটা দিতেই প্রস্তুত আমি। সিদ্দিকুর বললেন, নতুন অভিজ্ঞতা। বিশ্বের ২০৬টি দেশ নিয়ে আয়োজিত অলিম্পিকের আবহ অন্য আসরের তুলনায় অনেক দ্যুতিময়। রিও আমার প্রথম অলিম্পিক। মন থেকে এটা মুছে ফেলেছি। এখানকার কন্ডিশনের সঙ্গে বেশ ভালভাবেই মানিয়ে নিয়েছি। প্রথম অলিম্পিক বিষয়টা মন থেকে দূর করতে না পারলে চাপ থাকবে। সেটা নিতে চাই না। অন্য আন্তর্জাতিক আসরের মতো মনে করছি অলিম্পিক। ওই আসরগুলোতে যেভাবে মন খুলে খেলেছি রিওতে একই লক্ষ্য। প্রবল আত্মবিশ্বাস প্রমাণ করছে সহজেই মাঠ ছাড়তে চান না সিদ্দিকুর। লড়াই চালিয়ে যেতে চান শেষ পর্যন্ত। পদক জিততে না পারলেও অন্তত একটা সন্মানজনক পথ তিনি তৈরি করতে চান, যেখানে অলিম্পিক গেমসের আলোচনায় অন্তত নামটা থাকবে। বিশ্বের মানুষ যেন বলতে পারেন বাংলাদেশের এই প্রতিযোগী ভাল পারফর্মেন্স করেছেন। এটাই হবে বড় প্রাপ্তি। আর সেদিকেই দৃষ্টি। বাকিটা ভাগ্য। কথায় আছে, সাফল্যের জন্য শুধু শুধু ভাল খেলা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন ভাগ্যের সহায়তাও। সিদ্দিকুর বললেন চেষ্টার পাশাপাশি ভাগ্য পাশে থাকলে আশা করি অনেকদূর যাব। ভাগ্যদেবীর আশীর্বাদ পেলে তিনি কতদূর এগোতে পারেন সেটাই এখন দেখার। গরিব ঘরের সন্তান ছিলেন। গফল খেলে হয়েছেন ধনাঢ্য। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা এনে দিচ্ছেন দেশকে। গলফের সঙ্গে যুক্ত সাধারণ বলবয় হিসেবে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছেন জীবনে, এতদূর ওঠে আসতে। অহঙ্কার নেই। আছে জেদ। সেটা অরও অনেক ওপরে ওঠার। কোথায় গিয়ে ঠেকবো এই মুহূর্তে সেদিকে না গিয়ে, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে যেন বাংলাদেশের নাম থাকে তেমন একটা পারফর্মেন্স আমাকে করতে হবেই। যদিও অলিম্পিক অনেক বড় মাপের আসর। তাবৎ বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়রা গেমসে অংশ নিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসি। জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল। অনেক ত্যাগের পর গলফ সম্রাজ্যে একটা স্থান করে নিয়েছি। ভাগ্য, মনের জোর, আত্মবিশ্বাস আর চ্যালেঞ্জ নেয়ার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা আমাকে দিয়েছেন। আশাকরি রিওতে সে প্রমাণ রাখবো। ভাল কিছু করে মুখ উজ্জ্বল করতে চাই জাতির। অবলিলায় বলে গেলেন, এই স্বপ্নচারী কৃতী গলফার। এশিয়ায় সিদ্দিকুরের অবস্থান ৫৫তম। এর নীচে থাকলে তিনি সরাসরি খেলতে পারতেন না। মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সিদ্দিকুরের মিশন শুরু ব্রাজিল সময় আজ বৃহস্পতিবার সকালে। স্বপ্ন আর বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়ে দেশের ঝা-া হাতে সিদ্দিকুর কি উপহার দেন সেদিকে তাকিয়ে সবাই। সাফল্য, অভিজ্ঞতার ঝুলিটা মোটামুটি সমৃদ্ধ বলা যায়। রিও অলিম্পিকে অংশ নেয়া সাত ক্রীড়াবিদের মধ্যে তিনি যে বড় তারকা। প্রথম আন্তর্জাতিক সাফল্য ব্রুনাই ওপেনের শিরোপা। জিতেছেন আরও অনেক ট্রফি। গলফের বড় আসরে দ্বিতীয়, তৃতীয় হয়েছেন। সন্মানজনক স্কোর রয়েছে রেকর্ড বুকে। রিও অলিম্পিক হতে যাচ্ছে তার নতুন অভিজ্ঞতা।
×