ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আক্ষেপের মাঝেও ফুরফুরে মেজাজে সাগর

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১১ আগস্ট ২০১৬

আক্ষেপের মাঝেও ফুরফুরে মেজাজে সাগর

যে কোন গেমসের আগে বাকিরা যখন একাগ্রতার প্রতিমূর্তি, তখন তাকে দেখা গেল ফুরফুরে মেজাজে। অনুশীলন পরবর্তী বিশ্রামের পর গেমস ভিলেজে নানা অঙ্গভঙ্গিতে উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা। মুহূর্তের মামলা, ৫০ মিটার সাঁতার কাটতে। পদক জয়ের প্রত্যাশায় রিও আসা অন্য দেশের সাঁতারুদের বুক যখন দুরুদুরু, তখন পুরোপুরিই ব্যতিক্রম মাহফিজুর রহমান সাগর। কোন টেনশন নেই। ভাবভঙ্গি দেখলে যে কারও মনে হতে বাধ্য, যেন মাইকেল ফেলপসের মতোই আত্মবিশ্বাসের আবেগে মুখিয়ে আছেন কখন পদক গলায় ঝুলাবেন। তবে হ্যাঁ, সাগরের কোন টেনশন নেই। না থাকারই কথা। কারণ চাওয়া-পাওয়া বলতে কিছু নেই। ভালভাবেই জানেন তার পরিণতি কি। তারপরও লক্ষ্য বলতে নিজের গড়া সেরা টাইমিং (২৩.৯৯ সেকেন্ড) রিও অলিম্পিকে ছাড়িয়ে যাওয়া। এটা করতে পারলেই খুশি। জীবনের যে কোন কাজে বড় ধরনের যদি লক্ষ্য থাকে না, তখন মনের মধ্যে ভয়ডর বলেও কিছু থাকে না। সাগরের অবস্থা তাই। তবে একটা শখ তার রয়েছে, প্রিয় সাঁতারু ফেলপসের সঙ্গে একটা ছবি তোলা। গত লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশের পতাকা বাহক ফেলপসকে খুব কাছে পেয়েও কথা বলতে পারেননি। পারেননি ছবি তুলতে। এবার সেই সুযোগটার অপেক্ষায় তিনি। যে করে হোক যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত সাঁতারুর সঙ্গে ছবি তোলা। ব্রাজিল সময় আজ দুপুর ১টায়, আর বাংলাদেশে পরদিন সকাল ১০টায় শুরু হবে ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলের হিট। রিওর এ্যাকুয়াটিক সেন্টার ইতোমধ্যে সরগরম হয়ে ওঠেছে। হাসি-কান্নার সাক্ষী হয়ে গেছে অনেক সাঁতারুর। অপেক্ষার প্রহর শেষ বাংলাদেশের সেরা সাঁতারুর। সময়ের পরিক্রমায় আজ ভাগ্য পরীক্ষা সাগরের। পরের দিনই জলকাটার লড়াইয়ে নামবেন অপর সাঁতারু সোনিয়া আক্তার, একই ইভেন্ট ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইল। ‘হিটে আউট’-এ নিয়ে কোন বিতর্ক বা সন্দেহের অবকাশ নেই বাংলাদেশের দুই সাঁতারুর। দু’জনেরই জীবনের প্রথম অলিম্পিক। এটা স্মরণীয় করে রাখার সাধ্য না থাকলেও আছে বুক ভরা আশা। আর তা নিজের টাইমিংয়ের চেয়ে অরও ভাল করা। সাগরের আরেকটা চাওয়ার কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের জলদানবের সঙ্গে ছবি তোলা। এই হচ্ছে গেমসের অন্যতম আকর্ষণ সাঁতারে বাংলাদেশের দুই ক্রীড়াবিদের লক্ষ্য। ২৪ বছর বয়সী সাগরের জন্মস্থান পাবনার দ্বীপচরে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই সাঁতারুর ঘরোয়া সাফল্য বেশ ঈষণীয়। মোট ৭১টি পদকের মধ্যে রয়েছে ৫০ স্বর্ণ, ১১ রৌপ্য আর ১০ ব্রোঞ্জ। ৬ স্বর্ণসহ আন্তর্জাতিক পদক ১৯টি। গত কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়মিতই সাঁতরাচ্ছেন সাগর। অংশ নিয়েছেন ২০১২ ইস্তাম্বুল বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে। পরের বছর বার্সিলোনা বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপ, ২০১৪ সালে গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমস ও ২০১৫ কাজান বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে। অর্থাৎ অভিজ্ঞতার ভা-ার বেশ সুবিন্যস্ত। কিন্তু তাতে কোন কাজ হবে না অলিম্পিকে। প্রতিক্রিয়ায় বললেন, পদক জয় স্বপ্নেও দেখছি না। আর বাস্তবে কোথায়? অলিম্পিকে খেলছি। এটাই বড় প্রাপ্তি। তার কথায়, অলিম্পিকের মতো আসরে ভাল করার প্রস্তুতি নেই। নেই ব্যক্তিগত কোন স্পন্সর। এটা অবশ্য নতুন বিষয় নয়। যে কোন গেমস সামনে এলেই তড়িঘড়ি দল গঠন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। ব্যতিক্রম ঘটেনি এবারও। একটা দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্রীড়াবিদদের গড়ে তোলার উদ্যোগ নেই। খেলতে হবে, খেলে যাও। এটাই হচ্ছে আমাদের পরিণতি। সাগর যোগ করলেন নিজের পরিশ্রম দিয়ে আর কতদূর আগানো যায়। সম্ভব নয় লক্ষ্যস্থির করা, যে এই আসরে আমাকে পদক জিততেই হবে। আসলে সরকারের পক্ষ থেকে গরজ না থাকলে হয় না। যদিও রিও আসার আগে আমাকে সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল থাইল্যান্ডে প্রশিক্ষণের। কিন্তু এই প্রস্তুতি অলিম্পিকের জন্য যথেষ্ট নয়। বছরের পর বছর উন্নত প্রশিক্ষণ দরকার। ভাল খাবার প্রয়োজন। আমরা তো এর কিছুই পাই না। ফলে যা ঘাটার তাই....। অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করাই আমাদের নিয়তি। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের স্বপ্ন থাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বড় আসরে ভাল কিছু করার। একে বাস্তবে পরিণত করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না সীমাবদ্ধতার কারণে। পদক জিততে হলে আগে আমাদের তৈরি করতে হবে, পুকুর থেকে কিভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে তীরে আসতে হবে। কিন্তু সেই সুযোগ তো আমরা পাচ্ছি না। যার কারণে নিজস্ব গ-ির বাইরে আমরা কিছুই করতে পারছি না। ক্রীড়াবিদদের কাছ থেকে কিছু পেতে হলে বাড়তি বাজেট রাখতে হবে। অর্থ খরচ করতে না পারলে ভালমানের খেলোয়াড় তৈরি করা সম্ভব নয়। আর মানসম্পন্ন খেলোয়াড় না থাকলে প্রত্যাশিত রেজাল্টও অসম্ভব। রিওতে পদকের জন্য মুখিয়ে আছে বিশ্বের অনেক সাঁতারু। পদক লাভের জন্য তাদের গড়া হয়েছে সেভাবে। সেখানে আমরা দর্শক পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাবে। সাগরের বুকভরা এই আক্ষেপ শোনার মতো কেউ কি আছেন?
×