ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মীরসরাইয়ে হচ্ছে মধ্যম আকারের বন্দর

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১১ আগস্ট ২০১৬

মীরসরাইয়ে হচ্ছে মধ্যম আকারের বন্দর

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ও আমদানি-রফতানির সঙ্গে পাল্লা দিতে বিদ্যমান চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সম্প্রসারণ ও নতুন বন্দর সৃষ্টি করতে হবে। এই প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনায় নিয়ে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে মধ্যম আকারের একটি নতুন বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া সাগর পাড়ে বে-টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি সম্প্রসারণ, নতুন টার্মিনাল নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কাজটিও প্রক্রিয়াধীন। খুব শীগ্রই এ সকল প্রকল্প ও পরিকল্পনা দৃশ্যমান হতে শুরু করবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বন্দর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে গৃহীত পরিকল্পনাগুলো অবহিত করেন। এছাড়া তিনি তুলে ধরেন বন্দরের উত্তরোত্তর প্রবৃদ্ধি ও দেশের অর্থনীতিকে বিবেচনায় রেখে বন্দরের সমৃদ্ধি ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো। এ সময় তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং পোশাক খাতে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানির লক্ষ্যে সার্বিক অর্থনীতি ক্রমশ উন্নতির দিকে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরকেও সামগ্রিকভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ বন্দরের মাধ্যমে দেশের নৌ-বাণিজ্যের প্রায় ৯৮ শতাংশ কন্টেনার এবং ৯২ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে। অর্থনীতির আকার যেভাবে বাড়ছে তাতে আমদানি-রফতানি আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে। সে কারণে বিদ্যমান বর্তমান বন্দরের সম্প্রসারণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পাশাপাশি নতুন বন্দর সৃষ্টি করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, সরকার থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে মীরসরাইয়ে নতুন একটি বন্দর গড়ে তোলা যায় কিনা। সে অনুযায়ী প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে মীরসরাই-সীতাকু-ের মাঝামাঝি দুটি পয়েন্ট ঠিক করা হয়েছে। দেশের বৃহত্তম ইকোনমিক জোনকে কেন্দ্র করে মীরসরাইয়ে একটি বন্দর প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সেখানে সাড়ে ৬ মিটার পর্যন্ত ড্রাফট রয়েছে। জোয়ারের সময় ৯ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত ড্রাফট পাওয়া যাচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ড্রাফট আরও বাড়ানো যাবে। তিনি বলেন, মীরসরাইয়ে একটি বন্দর হলে তা ইকোনমিক জোন ও দেশের অর্থনীতি ছাড়াও ট্রান্সশিপমেন্টের কাজে ব্যবহার করা যাবে। বন্দর চেয়ারম্যান তাঁর বক্তব্যে সাগর পাড়ে বে-টার্মিনাল নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এর সম্ভাব্যতা পরিচালনার লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পরামর্শকের সুপারিশের ভিত্তিতে বেশ দ্রুত এ টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। সরকারের রূপকল্পকে সামনে রেখে ২০২১ সালের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বন্দর চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে তুলে ধরেন বন্দরে ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্প, ভবিষ্যতের জন্য গৃহীত প্রকল্প এবং দক্ষতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধিতে গৃহীত ও বাস্তবায়িত পদক্ষেপসমূহ। তিনি জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন ইয়ার্ড নির্মাণ করছে, পুরনো ইয়ার্ডসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি জানান, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যেখানে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২৫ হাজার ৮৬৫ মেট্রিক টন কার্গো ও ১৮ লাখ ৬৭ হাজার ৬২ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে সেখানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ কোটি ১১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮৭ মেট্রিক টন কার্গো ও ২১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩৯ মেট্রিক টন কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। বন্দর চেয়ারম্যান জানান, বাস্তবতার নিরিখে বন্দর কর্তৃপক্ষ বেশকিছু কার্যক্রম বাস্তবায়নের কাজ হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের জন্য বেশ কয়েকটি শিপ টু শ্যোর গ্যান্ট্রিক্রেন, পুরাতন জেটির মেরামত, ৭নং খালের পাশে দশ একর জায়গায় কন্টেনার ইয়ার্ড নির্মাণের চলমান কার্যক্রম, নিউমুরিং এলাকায় ৩৪ একর জায়গায় ওভারফ্লো ইয়ার্ড, কর্ণফুলী কন্টেনার টার্মিনাল (কেসিটি) নির্মাণ, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ, সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বে লালদিয়ার টার্মিনাল নির্মাণ, বে-টার্মিনাল নির্মাণ, কর্ণফুলীর নাব্যতা রক্ষায় কেপিটাল ড্রেজিং, সার্ভিস জেটি ও লাইটারেজ জেটি তৈরি, বন্দরের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, চট্টগ্রাম থেকে পানগাঁও পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে জাহাজের কলেবর বৃদ্ধি করা, সিটিএমএস সিস্টেমকে আরও কার্যকরী করা, বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে ৮ শতাধিক সিসিটিভি স্থাপন এবং অফ ডক নীতিমালার আলোকে সার্বিক কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা। তিনি বলেন, দেশের বর্ধিষ্ণু অর্থনীতিকে সার্ভিস দেয়ার জন্য এসব প্রকল্প ও পরিকল্পনাসমূহের বাস্তবায়ন জরুরী। সে লক্ষ্যেই কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। মতবিনিময় সভায় বন্দরের অতীত থেকে বর্তমান এবং সার্বিক কার্যক্রম উপস্থাপন করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের মেম্বার (এডমিন এ্যান্ড প্লানিং) জাফর আলম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বন্দরে কন্টেনার জট ও জাহাজ জট হচ্ছে বলে যে অভিযোগগুলো শোনা যায় তা ঠিক নয়। তিনি বলেন, বন্দরের প্রবৃদ্ধি প্রতিবছরই বাড়ছে। সাত বছরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং উন্নীত হয়েছে দ্বিগুণে। সুতরাং বন্দর অদক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে তা ঠিক নয়।
×