ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এবার মেসবাহ শিরিনের পালা

সাফল্যের মূলে নিজের প্রতি আস্থা আর সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ ॥ বোল্ট

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১১ আগস্ট ২০১৬

সাফল্যের মূলে নিজের প্রতি আস্থা আর সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ ॥ বোল্ট

অবশেষে শুরু হচ্ছে গেমসের অন্যতম আকর্ষণ ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের লড়াই। উসাইন বোল্টের দৌড় দেখতে যারা মুখিয়ে আছেন তাদের জন্য সুখবরই বটে। এ্যাথলেটিক্সে আছেন বাংলাদেশের দুই স্প্রিন্টার। দেশের দ্রুততম মানব মেসবাহ আহমেদ ও দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তারের পরীক্ষা অতি নিকটে। গেমসের পর্দা ওঠার পর গড়িয়ে গেছে এক সপ্তাহ। এরই মধ্যে আনন্দ-বেদনার অনেক স্বাক্ষী হয়ে গেছে রিও। ৪১ রকমের খেলা। আর এগারো হাজারেরও বেশি ক্রীড়াবিদ। লড়াই শুরু হয়ে গেছে প্রায় আটত্রিশটি বিষয়ে। হাতে গোনা অবশিষ্ট বিষয়ের মধ্যে এ্যাথলেটিক্স শুরু ব্রাজিল সময় শুক্রবার থেকে। এদিন অবশ্য জ্যামাইকার ’বিদ্যুত বোল্ট’ নামছেন না। তার ইভেন্ট পরেরদিন। একই দিনে লড়বেন মেসবাহ আহমেদ। শিরিন আক্তারকে দেখা যাবে প্রথম দিনেই। ১০০ মিটার স্প্রিন্টেই কেবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বাংলাদেশের দুই এ্যাথলেট। দারুণ প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছেন মেসবাহ আহমেদ। যা না করলেই নয়। এর প্রথমটি হচ্ছে বোল্টের সঙ্গে ছবি তোলা। হিটে দৌড়াতেও চান জ্যামাইকান তারকার সঙ্গে। এছাড়া তার চাওয়া-পাওয়া বলতে কিছু নেই। আর শিরিন খুশি জীবনের প্রথম অলিম্পিক খেলতে পেরেই। গেমস শুরুর আগে অন্য এ্যাথলেটরা যখন একাগ্রতার প্রতিমূর্তি, পদকের চিন্তায় মগ্ন তখন বোল্টকে দেখা গেল ফুরফুরে মেজাজে। অনুশীলন মাঠ থেকে গেমস ভিলেজ, যেখানেই বোল্ট সেখানেই মিডিয়ার ভিড়। আর বোল্ট নিজেও বেশ হাসি-খুশি মনে আবদার মিটিয়ে যাচ্ছেন টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে উপস্থিত মিডিয়াকর্মীদের। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মামলা। শেষে অবধারিত জয়- আর সেই বিশ্ববিখ্যাত পোজ- ‘লাইটনিং বোল্ট’। কিংস্টনে ২০০২ জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সবচেয়ে কম বয়সী বোল্ট সোনার পদক গলায় ঝুলিয়ে ছিলেন রেকর্ড গড়ে। সেই শুরু। আর কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়াটা অভ্যাসে পরিণত করে স্প্রিন্টের অবিসংবাদিত সম্রাট হয়ে ওঠেন মা জেনিফারের ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি ছেলে। কোন মন্ত্রে এত সফল বোল্ট? পরিষ্কার করলেন নিজেই, বললেন নিজের প্রতি আস্থা আর সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস। আমি কখনও প্রার্থনা করতে ভুলি না। ট্র্যাকের লড়াইয়ে কখনও আস্থা হারাই না। সাফল্যের মূলে সৃষ্টি কর্তার আশীর্বাদ আর নিজের আত্মবিশ্বাস। এর বাইরে অন্য কিছু নেই। ২০০৪ এ্যাথেন্স অলিম্পিকে ইনজুরির কারণে প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে গিয়েছিলেন। কেবল হতাশা নয়, দারুণ এক যন্ত্রণা নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছিল। সেই হতাশাই ১২ বছরে বদলে গিয়েছে। নিয়ে গেছে সাফল্যের শিখরে। এবার ২৯ বছর বয়সে শেষবারের মতো খেলছেন বোল্ট। রিওতেই ক্যারিয়ারের শেষ দেখছি। বয়স হয়েছে, আর কত? নতুন কেউ উঠে আসুক, সেটা দেখতে চাই। মঙ্গলবার অনুশীলন শেষে এ কথাই বলছিলেন চনমনে চিত্তে। এক গাল হাসি দিয়ে বোল্ট বললেন, আমি যখন দৌড় শুরু করি দর্শকরা যখন করতালি দিতে থাকে, সাফল্যের জন্য চিৎকার শুরু করে তখন আমার গতি আরও বেড়ে যায়। নার্ভাস হই না। আমার সাফল্যে দর্শকদের ভূমিকাও অনেক। এবারও আমি জানি সব ঠিকঠাক মতোই হবে। প্রত্যাশা-স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমেই ক্যারিয়ারের ইতি টানতে পারব। যদিও ইনজুরি কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সব ঠিক হয়ে গেছে। আমি এখন পুরোপুরি ফিট ও প্রস্তুত। হ্যাটট্রিকের স্বপ্ন নিয়ে অলিম্পিকস ইতিহাসে অমর হয়ে থাকতে তিনিই যে ট্র্যাকের অবিসংবাদিত সম্রাট সে প্রমাণটাই রিওতে করে দেখাতে মুখিয়ে বোল্ট। সানগ্লাস, কানে হেডফোন, কালো ট্র্যাকস্যুটে আপাদমস্তক ঢাকা শরীরটা স্টেডিয়ামে ঢুকতেই যেন উৎসব শুরু হয়ে যায়। মোবাইল, ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ঝলকানি, সেলফি তোলার আবদার সব কিছুই সহ্য করেন হাসি মুখে। এখানেই অন্য তারকাদের সঙ্গে তার পার্থক্য। ফুটবলে মেসি বা রোনাল্ডোর মধ্যে বিশ্বসেরার মুকুট নিয়ে টানাটানি থাকতে পারে। কিন্তু স্প্রিন্টের সম্রাট কে? তা নিয়ে কোন সংশয় থাকার কথা নয়। কার্যত নেই। বোল্ট নিজেও বলছিলেন, দেখুন বিশ্বের সেরা ফুটবলার কে সেটা বাছতে গেলে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু বিশ্বের সেরা স্প্রিন্টার কে, তা নিয়ে কারও কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। সবাই জানে সেটা আমি। রিওতেও সেটা দেখবে বিশ্বের মানুষ। ১০০ মিটার, ২০০ মিটার স্প্রিন্ট ও রিলেতে স্বর্ণপদকের হ্যাটিট্রিকের স্বপ্ন। যা পূরতে পুরোপুরিই প্রস্তুত আমি। যদিও আমার কোচ বলেছেন যত বয়স বাড়বে, তত সমস্যাও বাড়বে। তাই এসব নিয়ে ভাবছি না। আমি প্রমাণ করতে মরিয়া। লন্ডন অলিম্পিকস শুরুর আগে কেউ বাজি ধরেনি ১০০ মিটার নিয়ে। যতই জাস্টিন গ্যাটলিন, জোহান ব্লেকের মতো তারকা থাক, বিশেষজ্ঞরা আগেভাগেই বলে দিয়েছিলেন, বোল্ট হাসতে হাসতেই সোনা নিয়ে যাবেন। ঠিক তাই হয়েছিল। বোল্ট যেন নামার জন্য নেমেছিলেন ট্র্যাকে। হাসতে হাসতে সোনা জিতে বেরিয়ে যাওয়া তাই প্রমাণ করে। আর রিও অলিম্পিকেও সেটা ঘটবে। তাকে নিয়ে কোন ধোঁয়াশা রয়েছে বলে মনে হয় না। প্রসঙ্গত, বোল্ট শুধু বিশ্বসেরা স্প্রিন্টারই নন। ক্রীড়াবিশ্বের অন্যতম গ্ল্যামার তারকাও। পরিশেষে মুখে হাসির রেখা টেনে ক্যারিয়ারের মোড়টা ঘুরিয়ে দিলেন অন্যদিকে। অবসর নিয়ে সিদ্ধান্ত পাকা করিনি এখনও। কোচ তো বলেছেন, উসাইন তুমি চাইলে ২০২০ অলিম্পিকেও নেমে যেত পার। সবশেষে বলা যায় অসাধারণ, দারুণ এক ভদ্রলোক উসাইন বোল্ট।
×