ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জিতেন্দ্র কুমার সিংহ

অশুভ শক্তির দমনে...

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ১১ আগস্ট ২০১৬

অশুভ শক্তির দমনে...

মানসিক চাহিদা পূরণ ও নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিষেধক হিসেবে শিল্প-সাহিত্যের কোন বিকল্প নেই। এর অন্যতম প্রধান অঙ্গ হচ্ছে গান। এটা প্রতিটি মানব সদস্যের হৃদয়কে আন্দোলিত করতে পারে- সাহস যোগাতে পারে। মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশের অত্যন্ত কার্যকর এ উপাদান আজ একবিংশ শতাব্দীর আধুনিকোত্তর যুগে এসে দুর্দশাগ্রস্ত, তার ওপর মধ্যযুগীয় বর্বরতার চরম ও অসহনীয় অত্যাচার। এক সময় ভারতীয়দের ধারণা ছিল যে- দেবাদিদেবের কণ্ঠ থেকেই গানের সৃষ্টি এবং তার কাছ থেকে ব্রহ্মা শেখেন। ব্রহ্মা যে পাঁচজনকে গান শেখান তাঁদের মধ্যে ভরতমুনি অন্যতম। তবে ভরতমুনি কর্তৃক গানের জগত বিকশিত হওয়ার আগেও সামগানের প্রচলন হয়েছিল বলে ইতিহাসে পাওয়া যায়। যাই হোক, মুসলিম রাজত্ব স্থাপনের পর ভারতীয় গানের সঙ্গে ফরাসী গানের সামাজিক ভাব মিশেল খেয়ে নতুন নতুন রাগ রাগিণী ও তাল সৃষ্টির পর নতুন ধারায় প্রবাহিত হতে লাগল। সম্রাট আলাউদ্দীন খিলজীর গুরু ও তার মন্ত্রী আমীর খসরু এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। আর বাংলা অঞ্চলের গানের জগতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য সংযোজন মানুষের মনোজগতের মধ্যে বৈচিত্র্য এনেছে। তন্মধ্যে বাংলার বাউল সংগীত এ ভূখ-ের মানুষকে প্রেম শিখিয়েছে, অসাম্প্রদায়িক হতে শিখিয়েছে। বাংলার এ সম্পদ বৈশ্বিক সমাজের সুখ ও শান্তির পথিকৃৎ। বাউল রচয়িতা ও গায়েনরা ক্ষতি ও অপমান জাতীয় নেতিবাচক কোন কিছুর সঙ্গে বিন্দুমাত্র পরিচিত নন। প্রত্যেকেরই প্রত্যাশা ছিলÑ সমাজে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলে বাউলদের যথার্থ মূল্যায়ন করা হবে। কিন্তু আজ মানুষের সেই প্রত্যাশার উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। এরা আজ অপমানিত হচ্ছে-ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলা অঞ্চলের মানুষ বাংলা ভাষার গান শুনেছে ‘মানুষ মানুষের জন্য’। গানের এ কলিকে পরাভূত করার চরম প্রস্তুতি চলছে। সব অশুভ শক্তিকে দমন ও পরাভূত করা এবং সব প্রতিকূল পরিবেশ অতিক্রম করে দেশ ও জাতিকে ধাপে ধাপে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এ দেশের মানুষের অভ্যাস। সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিলেই জনগণ একই কাতারে এসে দাঁড়াতে জানে। ’৭১ সালে দেশ ও জাতি অনেক বুদ্ধিজীবী হারিয়েছে। দেশপ্রেমিক হারানোর ব্যথা মোচন হওয়ার আগেই সেই বর্বর পাকিস্তানীদের পদলেহীতে অভ্যস্ত কতিপয় বাঙালী কর্তৃক জাতির পিতা ও জাতীয় চার নেতাসহ দেশবাসী হাজার হাজার জনদরদী ও দেশপ্রেমিক হারিয়েছে। তার চূড়ান্ত ফল হিসেবে দেশবাসী গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলা দেখেছে, সংখ্যালঘুদের ওপর অনর্থক হামলা ও তাদের প্রার্থনা অঙ্গনকে চুরমার করে দেয়া হচ্ছে। তারা অত্যন্ত সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, দেশে শিক্ষিতের হার ও মান বৃদ্ধির পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক চেতনাসম্পন্ন মানুষের নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে কোন দিনই সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের আশা মিটবে না। তাই বিশ্ববিখ্যাত লালন ফকির ও হাছন রাজার মতো বাউলদের ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের হত্যার মাধ্যমে দেশের প্রগতির পথকে রুদ্ধ করে দিতে চায়। এ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হবার এখনই মোক্ষম সময়। ॥ মৌলভীবাজার থেকে
×