ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার শ্যামলীর পালা

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১০ আগস্ট ২০১৬

এবার শ্যামলীর পালা

জীবনের প্রথম অলিম্পিক ছিল তার। তাই স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন ভাল রেজাল্ট করে। পোডিয়ামে ওঠার স্বপ্ন না থাকলেও আন্তত শেষ আটে থেকে অলিম্পিক শেষ করাই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু নিশানা ভেদ করতে না পারায় ধূলিস্যাত সব, মাত্র কয়েক মিনিটে। শেষ রক্ষা করতে পারলেন না দেশসেরা শূটার আবদুল্লাহ হেল বাকী। প্রত্যাশা পূরণ দূরের কথা। শুরুতেই বিদায়। হিটেই আউট। যত প্রত্যাশার কথাই বলা হোক বাকী টের পেলেন অলিম্পিক আসর কত বড় মাপের। লক্ষ্য অর্জনে এখানে পেশাদারিত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অভিজ্ঞতা কাকে বলে, কতটা প্রয়োজন। বাকীর খাতা শূন্যই রইল। রিও অলিম্পিক মিশনে তার বাজে বিদায়ে নিবে গেল এক দেউটি। এবার পালা শ্যামলী রায়ের। ব্রাজিল সময় আজ দুপুরে তার ভাগ্য পরীক্ষা। অরচারির ব্যক্তিগত র‌্যাঙ্কিং পর্বে ৬৪ জনের মধ্যে হয়েছেন ৫৩তম। সান্ত¡না এখানেই যে, পারফর্মেন্স একেবারে তলানিতে নয়। কাজেই আসল লড়াইয়ে কি করতে পারেন সেটাই দেখার। মেয়েদের রিকার্ড বো ইভেন্টের এই লড়াইয়ে তার তীর-ধনুকের নিশানা তাকে কোথায় নিয়ে যায় বলতে পারছেন না নিজেই। কেবল চেষ্টার কথা বলেই ইতি। প্রতিদ্বন্দ্বীর নামও জানেন না। এটা নাকি বাংলাদেশ অফিসিয়ালরা জানেন। খোলাসা করে না বললেও শ্যামলীর চোখ জানান দিচ্ছিল ‘আশার প্রদীপ নিবে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। র‌্যাঙ্কিং রাউন্ডের এই পারফর্মেন্স সাহস যোগাচ্ছে না। যদিও অলিম্পিকের মতো আসরে ভাল কিছু করার শক্ত অবস্থান, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি তার নেই। রিও আসার আগে কোন আশারবাণী শোনা যায়নি তার মুখে। গতানুগতিক ভাষায় শুধু ভাল রেজাল্টের কথা বলেছিলেন। এই ভাল এখন কোথায় গিয়ে ঠেকে সময়ই বলে দেবে। উত্তর নেই শ্যামলীর কাছেও। অলিম্পিকে অংশ নেয়া আর অভিজ্ঞতা অর্জনই যেন মুখ্য। অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা কোথায় কাজে লাগাতে চান? শ্যামলীর উত্তর দক্ষিণ এশিয়ায়। ধীরে ধীরে অবশ্য মুখ খুললেন এই আরচার। জানালেন, চেষ্টার কোন ত্রুটি থাকবে না। জিতার মানসিকতা নিয়েই লড়াইয়ে নামতে চাই। গেমস ভিলেজে টিভির পর্দায় চোখ রেখে আর প্রথম লড়াইয়ের অভিজ্ঞতার আলোকে ইতোমধ্যে শ্যামলী ওজন বুঝে গেছেন অলিম্পিকের। বিশ্বের সেরা ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণে কতটা রোশনাই ছড়াচ্ছে অলিম্পিক সেটাও জানা হয়ে গেছে। সঙ্গত কারণে নিশানা তার কোথায় গিয়ে থামবে বা শেষ হয়ে যেতে পারে হয় তো বুঝতে বাকি নেই। হার-জিতই খেলাধুলার মূলমন্ত্র। ফলে ভাগ্যে যাই থাকুক, অন্তত খেলা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত বাংলাদেশের এই নারী আরচার। তারা জ্বলে-তারা নিবে, কথার মতোই নিবে গেছে বাংলাদেশের শূটিংয়ের আলো। ধাপে ধাপে প্রত্যাশার ঝুলিতে যে কিছুই জমা হবে না, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়। সাউথ এশিয়ান গেমসের মতো ম্যারম্যারে আসরে যেখানে প্রতিনিয়ত খাবি খেতে হয় বাংলাদেশকে। সেখানে অলিম্পিকে কিছু একটা ঘটিয়ে দেয়া অলীক স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়। অংশ নেয়া বাংলাদেশের সাত ক্রীড়াবিদের মধ্যে শূটার বাকী অর বাংলার টাইগার খ্যাত সিদ্দিকুর রহমানকে নিয়ে একটা স্বপ্নের জাল বুনেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বাকীর লজ্জার বিদায়ে সে স্বপ্নের সমাধি ঘটে গেল আটলন্টিকের পাড়ে। তবু জল্পনা-কল্পনা চলছে, গলফার সিদ্দিকুরকে নিয়ে। যদিও বলাবলি শুরু হয়ে গেছে তাবত বিশ্বের বাঘা বাঘা গলফারদের সামনে সিদ্দিকুরের পরিণতিটাও বাকীর মতো না হয়ে যায়। সেটাও এখন দেখার। সিদ্দিকুর মাঠে নামবেন ব্রাজিল সময় আগামীকাল সকালে। গলফ জগতে তারকা খ্যাতি রয়েছে তার। এখন এই খ্যাতি নিয়ে তিনি কতদূর টেনে নিতে পারেন দেশকে সময়ই তা বলে দেবে। বিশেষ করে প্রথম ধাপটা ভালভাবে পেরুতে পারলে আশার আলো জেগে থাকবে। আর হেরে বিদায় নিলে তো ল্যাটা চুকেই যাবে। যা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ অবশিষ্ট দুই ইভেন্ট এ্যাথলেটিক্স ও সাঁতারে বাংলাদেশের চার ক্রীড়াবিদ যে পানি খাবার সময় পাবেন না পরিষ্কারভাবে বলে দেয়া যায়। আগামীকাল গলফার সিদ্দিকুরের দিনে সাঁতারের ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলের হিটে অংশ নেবেন মাফিজুর রহমান সাগর। তার শরীরিক গড়ন আর ফিটসেনেই প্রমাণ হচ্ছে সবার শেষে থেকে লজ্জার মালাটা বড় করে ফেলেন কিনা। ১২ আগস্ট মহিলাদের ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলের হিটের জন্য ফ্রি স্টাইলেই রয়েছেন সোনিয়া আক্তার। কিছুই হবে না। আর এ কারণে টেনশনও নেই। খেলতে এসেছি, খেলে চলে যাবÑ এটাই যে সোনিয়ার চিরন্তন বাস্তব তাতে কোন সন্দেহ নেই। অবশিষ্ট থাকলেন দুই এ্যাথলেট মেসবাহ আহমেদ ও শিরিন আক্তার। দু’জনের মধ্যে শিরিনের পালা ১২ আগস্ট ১০০ মিটার স্প্রিন্টে। বাংলাদেশের দ্রুততম মানবীরও চাওয়া-পাওয়া নেই। আর মেসবাহ তো আরও তোপের মুখে। ১৩ আগস্ট ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দেশের দ্রুততম মানবের এই হিট দিয়ে ‘কোল্ড’ হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের রিও অলিম্পিক মিশন। কারণ এরপর আর কোন ইভেন্ট নেই বাংলাদেশের। কেবল গলফার সিদ্দিকুর ভাল করলেই জিইয়ে থাকবে অলিম্পিকে বাংলাদেশ। আর হেরে গেলে খালাস।
×