ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুতিনের দৃষ্টি কোন দিকে

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১০ আগস্ট ২০১৬

পুতিনের দৃষ্টি  কোন দিকে

যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কমিটির সার্ভার হ্যাক করে বেশ কিছু প্রাইভেট ই-মেইল এবং নির্বাচনী প্রচার ও গবেষণা সংক্রান্ত গোপন তথ্যাবলী হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। সার্ভারে দুটো ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া গেছে যা রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের গোয়েন্দা সংস্থার এবং সেটা সম্ভবত কেজিবির প্রধান উত্তরসূরি এফএসবির। সার্ভার হ্যাকিংয়ের এই ঘটনা ডেমোক্র্যাট দলের নেতাদের যথেষ্ট বিব্রত হওয়ার কারণ ঘটায়। কেননা এর মধ্য দিয়ে দলের ভেতরের কাজকর্মের অনেক কিছু এমনকি গোপন ব্যাপার সাপারও জেনে ফেলা হয়েছে। আরও শঙ্কার ব্যাপার এভাবে হ্যাক করা ২০ হাজার ই-মেইল উইকিলিকসের হাতে দেয়া হয়েছে। এখন উইকিলিকস কখন কিভাবে ডেমোক্র্যাটিক শিবিরের গোপন তথ্যাবলী ফাঁস করে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে বিপদে ফেলে দেয় সে চিন্তায় সবাই অস্থির। রাশিয়া এভাবে গোপন তথ্যাবলী হাতিয়ে নিয়ে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য সময়মতো ফাঁস করে দেবে এ নিয়ে বিস্ময়ের কিছু নেই। তবে যে ব্যাপারটা নতুন তা হলো তারা এর দ্বারা মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে এবং সেটাই হলো এক মস্ত বড় ব্যাপার। হিলারি ক্লিনটন তথা ক্লিনটন দম্পতির প্রতি পুতিনের বিদ্বেষভাব কারও অজানা নয় এবং সেটা নতুন কিছুও নয়। পক্ষান্তরে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা ও সুখ্যাতি করে বিভিন্ন সময় তিনি বক্তব্যও দিয়েছেন। ২০১১ সালে হিলারি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তখন মস্কোসহ বিভিন্ন শহরে একবার ব্যাপক পুতিনবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছিল। সে বিক্ষোভ ছিল তার শাসনের বিরুদ্ধে এযাবতকালের প্রবলতম বিরোধিতা। পুতিন মনে করেন এই বিক্ষোভের পেছনে হিলারির ইন্ধন ছিল এবং তার দেয়া সঙ্কেত মতোই যথাসময়ে বিক্ষোভ হয়েছে। এ জন্য পুতিন তখন হিলারিকে প্রকাশ্যে দায়ী করতে ছাড়েননি। সেই ঘটনা ও তাতে হিলারির প্ররোচনার কথা পুতিন আজও ভোলেননি। কিন্তু লক্ষ্য করা গেছে যে ট্রাম্প এ ব্যাপারে রাশিয়ার প্রতি ঢের বেশি সদয়। নির্বাচনী প্রচারে তিনি ক্রেমলিনের শোচনীয় মানবাধিকার রেকর্ডের নিন্দা করতে অস্বীকৃতি জানান। পুতিনের সঙ্গে কখনও দেখা-সাক্ষাত না হলেও ট্রাম্প রাশিয়ার এই লৌহ মানবের প্রশংসা করে টুইট করেছেন। বলেছেন ‘পুতিন রাশিয়ায় এক অনন্য সাধারণ হিরোয় পরিণত হয়েছেন যার জনপ্রিয়তা সর্বকালের সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছেছে। ২০১৩ সালে মস্কোয় মিস ইউনিভার্স প্যাজেন্ট ঘোষণা করার সময় ট্রাম্প জিজ্ঞেস করেছিলেন : ‘পুতিন কি সেখানে যাবেন বলে মনে করেন? যদি যান তিনি কি আমার নতুন সেরা বন্ধুতে পরিণত হবেন?’ এদিকে ‘দি পলিটিক্যাল ইনসাইডার’ নামক এক পত্রিকার খবরে প্রকাশ, সম্প্রতি এই পত্রিকার কাছে ট্রাম্পের প্রশস্তি করে পুতিন বলেছেন : ‘ট্রাম্প সত্যই এক বুদ্ধিদীপ্ত ও মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি। এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই। তার গুণাবলী বিচার করার দায়িত্ব আমাদের নয়, সেই দায়িত্ব আমেরিকান ভোটারদের। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াইয়ে তিনি নিঃসন্দেহে এক সুযোগ্য প্রার্থী।’ পুতিনের এই মন্তব্যকে অনেকে ট্রাম্পের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন হিসেবে দেখছে। এদিকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে ট্রাম্প রাশিয়ার বিষয়াদিতে গভীরভাবে জড়িত সহকর্মীদের ওপর নির্ভর করেন। তার এক নির্বাচনী প্রচার উপদেষ্টা কাটার পেজ রশিয়ার সহকারী জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গাজপ্রমের পরামর্শক ছিলেন। তার নির্বাচনী প্রচার চেয়ারম্যান পল ম্যানাকোর্ট ছিলেন পুতিনের পছন্দের ইউক্রেনী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের উপদেষ্টা। ট্রাম্প ও পুতিন উভয়ের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারসমূহের মধ্যে আশ্চর্য সাদৃশ্য আছে। ট্রাম্প এ কথা বলতে সুস্পষ্ট ভাষায় অস্বীকৃতি জানিয়েছেন যে তিনি ন্যাটো সনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন এবং এস্তোনিয়ার মতো সদস্য দেশগুলো রাশিয়ার হাতে আক্রান্ত হলে তাদের মার্কিন সামরিক সাহায্যের গ্যারান্টি দেবেন। তাই বলে ক্রেমলিন ট্রাম্পকে বিজয়ী হিসেবে দেখতে চায় এ কথা কোথাও স্পষ্টভাবে বলা হয়নি। তবে ডিএনের সার্ভারে ঢুকে গোপন তথ্য হাতিয়ে নেয়ার আসল উদ্দেশ্য ট্রাম্পর্কে সাহায্য করা নাও হতে পারে। অথবা হিলারি ও তার দলকে আঘাতে আঘাতে বিপর্যস্ত করাও হয়ত নয়। বরং প্রকৃত উদ্দেশ্য মার্কিন রাজনীতির কদর্য দিক উন্মোচন করে দেয়া। অবশ্য আমেরিকার মস্ত ক্ষতি করতে চাইলে এভাবে করার ক্ষমতা রাশিয়ার অবশ্যই আছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×