ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাপানের কাছে যা শেখার আছে

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১০ আগস্ট ২০১৬

জাপানের কাছে যা শেখার  আছে

আশির দশকে জাপান অর্থনৈতিক গতিশীলতার দৃষ্টান্ত হিসাবে গবেষকদের গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। পরবর্তী দশকগুলোতেও জাপান বিশেষজ্ঞরা মনোযোগ কেড়ে নেয়। তবে সেটা ভিন্ন কারণেÑ বহুলাংশে অর্থনৈতিক স্থবিরতার জন্য। বছরের পর বছর ধরে মূল্যপতন এবং নামমাত্র প্রবৃদ্ধির পর জাপানের জিডিপি ২০ বছর আগে যা ছিল ২০১৫ সালেও মোটামুটি সেই অবস্থাতেই থেকেছে। অথচ একই সময় আমেরিকার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ১৩৪ শতাংশ। এমনকি ইতালিরও অর্থনীতির প্রসার ঘটেছিল দুই- তৃতীয়াংশ। আজ জাপান আবারও পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছে। তবে সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক কারণে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের চেষ্টার জন্য। জাপানের অর্থনীতির নতুন করে প্রসার ঘটানো এবং একে ঢেলে সাজানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তিনটি লক্ষ্য অর্জনের প্রস্তাব করেছিলেন। লক্ষ্য তিনটি হলোÑ আর্থিক উদ্দীপনা, অর্থবিষয়ক স্থিতিশীলতা এবং কাঠামোগত সংস্কার। সমষ্টিগতভাবে এই তিনটি কার্যক্রম আবেনোমিক্স নামে পরিচিত। বলাবাহুল্য, আবে ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল আছেন। তিন কার্যক্রমের মধ্যে প্রথমটির অর্থাৎ আর্থিক উদ্দীপনার লক্ষ্য হলো জাপানের উৎপাদন শক্তিগুলোকে সংগঠিত ও সংহত করা এবং তৃতীয়টির অর্থাৎ কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্য সেই শক্তিগুলোতে আরও প্রসারিত করা যাতে করে দ্বিতীয় কার্যক্রমটি তার উচ্চাভিলাষী আর্থিক টার্গেট অর্জন করতে পারে। প্রচলিত মত হলো তিনটি কার্যক্রমের কোনটাই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। গত মে পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতি ছিল নেতিবাচক। জাপানের সরকারী ঋণ পরিস্থিতি আগের মতোই খারাপ। শ্রমবাজার সংস্কারের মতো ক্ষেত্রগুলোতে কোথাও পর্যাপ্ত মাত্রায় কিছুই করা হয়নি। আবেনোমিক্সে দেয়া বিশাল বিশাল প্রতিশ্রুতির তুলনায় বাস্তব অর্জনের ব্যাপারটা হতাশাব্যঞ্জক সন্দেহ নেই। কিন্তু আগের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে আবের অর্থনৈতিক নীতি সহানুভূতি পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। অন্যান্য দেশের বিশেষ করে ইউরোপে যেখানে বর্ষীয়ান জনগোষ্ঠী সমাজের জন্য একটা সমস্যা, যেখানে পণ্য ও সার্ভিসের চাহিদা স্থবির এবং ঋণের পাগলা ঘোড়াকে বশে আনা যাচ্ছে না সেখানে এই নীতি বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণের দাবি রাখে। সমালোচকরা বলেন, আবেনোমিক্স নিয়ে যত গর্জন শোনা গিয়েছিল ততটা বর্ষে নাই। কথাটা মিথ্যা নয়। তবে জাপানী অর্থনীতির পশ্চাদগামিতার ধারা ভাঙ্গনের জন্য এমন একটু-আধটু গর্জনের প্রয়োজন ছিল। আবে ও তাঁর দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) ২০১২ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পরই মুদ্রানীতি শিথিল করার অভিপ্রায়ের এবং এর মাধ্যমে ইয়েনকে দুর্বল করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। মুদ্রাস্ফীতির টার্গেট নির্ধারণও করেছিলেন ২ শতাংশ। অর্থলগ্নি বাজারগুলো প্রথম প্রথম তার ওই সঙ্কেতে জোরালো সাড়া দিয়েছিল। জাপানী মুদ্রার দাম হ্রাস পায় এবং শেয়ার বাজার চাঙ্গা হয়। অচিরেই ট্যুরিস্টরা দলে দলে সস্তা দরের জায়গা জাপানেও ছুটে আসতে থাকে। গত বছর প্রায় ২ কোটি ট্যুরিস্ট জাপানে এসেছিল এবং তাদের বেশিরভাগই ছিল খরচের দিক দিয়ে দিলদরাজ চীনারা। এ অবস্থায় জাপানী কোম্পানিগুলো একটু সাহস সঞ্চয় করে তাদের পণ্যের দাম সামান্য কিছু বাড়িয়ে দেয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ জাপানের মুদ্রাস্ফীতি সূচকে দুই-তৃতীয়াংশ পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ সময়ের দিকে দেশের সর্ববৃহৎ আচার চাটনি কোম্পানি কাগোম ২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো তাদের কেচাপের দাম বাড়িয়ে দেয়। দুই দশক ধরে হ্রাস পেয়ে চলার পর জ্বালানি ও তাজা খাবার বাদে জাপানের ভোগ্যপণ্যের দাম একটানা ৩২ মাস ধীরে ধীরে বেড়ে চলে। আবেনোমিস্কের বদৌলতে জাপানের জিডিপি যে হারে বেড়েছে তা ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত। আবেনোমিক্সের আগে জাপানী পণ্যের যে গর দাম ছিল তার তুলনায় এখন তা ৫ শতাংশ বেশি। ওদিকে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও স্পেনে মুদ্রাস্ফীতি যেখানে হ্রাস পেয়েছে সেখানে জাপানে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই নীতিও হয়ত তার লক্ষ্য পুরোটা অর্জন করতে পারেনি কিংবা যত গর্জেছিল ততটা বর্ষেনি। তথাপি বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার চাইলে একটা স্থবির ও মুমুর্ষূ অর্থনীতিকে রীতিমতো নাড়া দিতে এবং তাতে প্রাণসঞ্চার করতে পারে। সূত্র: দি ইকোনমিস্ট
×