ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্দোনেশিয়ার সেই ঘাতক জেনারেল ফের মন্ত্রিসভায়

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১০ আগস্ট ২০১৬

ইন্দোনেশিয়ার সেই ঘাতক জেনারেল ফের মন্ত্রিসভায়

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো যিনি জোকোভি নামেই সবার কাছে পরিচিত, গত ২৭ জুলাই মন্ত্রিসভার রদবদল করেছেন। ২০১৪ সালের শেষ দিকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার নেয়ার পর এটা দ্বিতীয় দফা রদবদল। পর্যবেক্ষকরা আশা করেছিলেন যে এবারের পরিবর্তনটা হবে ছোটখাট ধরনের। কিন্তু দেখা গেল তিনি বেশ বড় ধরনের রদবদলই ঘটিয়েছেন। সবচেয়ে বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম হয়েছে প্রধান নিরাপত্তামন্ত্রী হিসাবে উইরান্তোর নিযুক্তি নিয়ে। অনেক ইন্দোনেশীয়র মতো এই মানুষটিও একটি মাত্র নামই ব্যবহার করে থাকেন। তার নিযুক্তি বিতর্কিত হওয়ার কারণ উইরান্তো ইন্দোনেশিয়ার প্রয়াত লৌহমানব সুহার্তোর আমলে এবং পরবর্তীকালে ১৯৯৯ সালে পূর্ব তিমুরের (বর্তমানে তিমুর-লেসট) স্বাধীনতার গণভোট চলাকালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান ছিলেন। ওই ভোটের আগে ও পরে এক হাজার থেকে দুই হাজার অসাময়িক লোক প্রাণ হারিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। অনেককে বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। ২০০৩ সালে তিমুর-লেসটে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি আদালত উইরান্তোকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করে। অভিযোগের জবাব দিতে তিনি কখনও আদালতে হাজির হননি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো তার এ নিযুক্তিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যেই তারা মাদক অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ১৪ ব্যক্তিকে ফায়ারিং স্কোয়াডে দেয়ার সরকারী পরিকল্পনার প্রতিবাদ জানিয়েছে। জাকার্তার রাজনৈতিক ঝুঁকিবিষয়ক পরামর্শক কীথ লোভিয়ার্ড মনে করেন যে উইরান্তোর নিযুক্তিটা হয়ত প্রেসিডেন্ট জোকোভির একটা কৌশলী চাল যার উদ্দেশ্য মন্ত্রিসভায় ঝগরাটে চরিত্রের সাবেক জেনারেলদের একজনকে আরেকজনের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে ফায়দা হাসিল করা। মন্ত্রিসভায় আরেক লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন হলে শ্রী মুলিয়ানী ইন্দ্রাবতীকে অর্থমন্ত্রীর পদে ফিরিয়ে আনা। ইন্দ্রাবতী ইন্দোনেশিয়ার আগের প্রসিডেন্টের আমলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে বিশ্বব্যাংকের ডিরেক্টর হয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রী হিসাবে ২০০৫-১০ সালে অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন। তিনি এমন এক সময় মন্ত্রিসভায় ফিরলেন যখন পণ্য মূল্যের দরপতনের ফলে ইন্দোনেশিয়ার প্রবৃদ্ধি মার খাচ্ছে। তাঁর অংশ অগ্রাধিকার হবে সঙ্কোচনশীল রাজস্ব বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা এবং বাজেট ঘাটতিকে জিডিপির ৩ শতাংশ সীমার ওপর যেতে না দেয়ার জন্য পদক্ষেপ নেয়া। ইন্দ্রাবতীর ফিরে আসার খবরে মুদ্রা ও শেয়ারবাজারে একটু চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে। তবে এবার তাকে সহকর্মীদের তরফ থেকে কিছু প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হবে। তাঁকে কাজ করতে হবে এমন সব মন্ত্রীদের পাশাপাশি যারা ২০০৮-০৯ সালের আর্থিক সঙ্কটের সময় এক ব্যাংক কেলেঙ্কারির তদন্তে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট জুসফ কাল্লাও আছেন। প্রেসিডেন্ট জোকোভি হলেন দেশের রাজনৈতিক বা সামরিক এলিট শ্রেণীর বাইরে থেকে আসা প্রথম নেতা। প্রেসিডেন্ট পদে তাঁর যাত্রা স্খলিত শুরু হলেও এখন তাঁকে ঢের বেশি আস্থাবান দেখাচ্ছে। অংশত সেটা পার্লামেন্টের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল গোলকার পার্টির সঙ্গে তাঁর সমঝোতার কারণেই সম্ভব হয়েছে। গোলকার পার্টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় জোকোভির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে দলটি তার ভূমিকা পাল্টিয়ে জোকাভিকে সমর্থনের অঙ্গীকার করেছে। এতে আইনসভায় তাঁর হাত শক্তিশালী হয়েছে। বিনিময়ে গোলকারকে পুরস্কৃতও করেছেন তিনি। শিল্পমন্ত্রীর পদটি দিয়েছেন এয়ারলাঙ্গা হারতারতোকে। সুহার্তোর আমলে এই পদটি তার বাবাও ধারণ করেছিলেন। মন্ত্রিসভায় এই বরদবদলের পর কেউ জোকোভির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের আঙ্গুল তুলছেন বা যে তিনি সিদ্ধান্তহীনতা বা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। তথাপি সরকারের সবচেয়ে ক্ষমতাবান একটি পদে উইরান্তোর ফিরে আসার ফলে দেশে বিদেশে তার সরকারের ভাবমূর্তি নিঃসন্দেহের ক্ষুণœ হবে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×