ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আশকোনা থেকে লাগেজ নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে

হজযাত্রীদের শাহজালালে হেঁটে যেতে বাধ্য করছে সৌদিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১০ আগস্ট ২০১৬

হজযাত্রীদের শাহজালালে হেঁটে যেতে বাধ্য করছে সৌদিয়া

আজাদ সুলায়মান ॥ হজযাত্রীদের আশকোনা হাজী ক্যাম্প থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে হেঁটে যেতে বাধ্য করছে সৌদিয়া এয়ারলাইন্স। প্রতিটি ফ্লাইটের যাত্রীদেরই বড় বড় লাগেজ হাতে নিয়ে হাঁটতে দেখা যায়। বয়স্ক নারী-পুরুষরা এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান সৌদিয়ার কাছে কৈফিয়ত চাওয়ার পরও তাতে সাড়া দিচ্ছে না। মঙ্গলবার দুপুরে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের পাঁচ শতাধিক হজযাত্রী আশকোনা হাজী ক্যাম্প থেকে হাতে ট্রলি ও লাগেজ নিয়ে হেঁটে বিমানবন্দরে পৌঁছান। এ সময় শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান তাদের হাঁটানোর কারণ জানতে চান। সৌদিয়ার প্রতিনিধিরা তাতে কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। বিষয়টি দেখভাল করার জন্য তিনি হজ অফিসকে অবহিত করেন। এ সম্পর্কে হজ অফিসার ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, বিমানের হজ যাত্রীদের নিজস্ব যানবাহনের মাধ্যমে হাজী ক্যাম্প থেকে শাহজালাল পর্যন্ত বাসের মাধ্যমে পাঠাচ্ছে। হাজী ক্যাম্পেই তাদের ইমিগ্রেশন ও চেক ইন করার পর সরাসরি বাসে উঠিয়ে যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয় শাহজালালে। কিন্তু সৌদিয়ার হজযাত্রীদের ক্যাম্প থেকে বিমানবন্দরে নেয়ার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়নি। বার বার তাগিদ দেয়া হলেও সৌদিয়া আমলে নেয়নি। দুপুরে অশীতিপর বৃদ্ধা সফুরা হাঁটতে হাঁটতে গোল চক্কর পর্যন্ত গিয়ে এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েন যে, তিনি আর সামনে অগ্রসর হতে পারছিলেন না। তাকে রাস্তার ওপর বসে পড়ে খানিক বিশ্রাম নিতে হয়েছে। তার সহযাত্রী মাসুদ জানান, সৌদিয়ার যাত্রীদের মানুষই মনে করা হয় না। বিমান যতেœর সঙ্গে বিলাসবহুল বাসের মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিমানবন্দরে পৌঁছে দিলেও সৌদিয়া এ বিষয়টি বিবেচনাতেই নিচ্ছে না। বাসের ব্যবস্থা করার জন্য কয়েকটি এজেন্সি বার বার অনুরোধ করলেও তা বিবেচনায় নেয়নি। একটি হজ এজেন্সির মালিক জনকণ্ঠকে বলেন, প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা সবটুকুই হাঁটতে গিয়ে বয়স্ক নারী ও পরুষরা যথেষ্ট ক্লান্ত হয়ে পড়েন। জয়নাল নামের এক যাত্রীর সঙ্গে থাকা নাতির হাতে বড় দুটো লাগেজ দিয়ে হাঁটছিলেন। তিনি কুঁজো হয়েই হাঁটতে হাঁটতে বসে পড়েন। টিমের বাইরে তিনি আলাদা কোন সিএনজি অটো রিক্সাও নিতে চাইলেও পারেননি। এজেন্সি থেকে বাধা দেয়া হয়। বাধ্য হয়েই তাকে হাঁটতে হয় দীর্ঘ এই পথ। এ সব বিষয়ে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হলে তিনি বলেন, নন ব্যালটি হজযাত্রীরা যারা সৌদিয়ার মাধ্যমে জেদ্দা যাবেন তাদের জন্য তো হাজী ক্যাম্পে আসাই প্রয়োজন পড়ে না। ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমেই তাদের হাতে টিকেট বোর্ডিং কার্ডসহ যাবতীয় সব কাগজপত্র দিয়ে সরাসরি বাসা থেকে বিমানবন্দরে যাবার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তারপরও কেন তারা হাজী ক্যাম্পে যাচ্ছেন ? এ সম্পর্কে পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান বলেন, সৌদিয়া যে সব ব্যাখ্যা দিচ্ছে তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। হজযাত্রীদের হাজী ক্যাম্পে যাওয়াটাও তো প্রয়োজন। এখানে শর্তারোপ করে তাদের কেন হাঁটানো হবে? মানবিক কারণেও তো তাদের জন্য একটা বাসের ব্যবস্থা করা যায়। এমনকি অনেক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কর্পোরাল সোস্যাল রেসপন্স থেকেও বাস অফার করেছিল। সৌদিয়া সে সুযোগও কাজে লাগাতে পারত। হজযাত্রী সামাদ মিয়া বলেন, সৌদি এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা বাংলাদেশীদের মানুষই মনে করে না। শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ করে বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ হজযাত্রী টানছে এয়ারলাইন্সটি। এ সব অভিযোগ সম্পর্কে জানা যায়, ইতোমধ্যে সিভিল এ্যাভিয়েশনের পক্ষ থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সকে সতর্কতামূলক একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাগেজ হারানো যাত্রীদের অভিযোগ দুইদিনের মধ্যে সুরাহা না করলে ভবিষ্যতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে গত ৩ জুলাই সৌদি এয়ারলাইন্সে আসা এক যাত্রীর ব্যাগেজ হারানোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিমানবন্দরের ভ্রাম্যমাণ আদালত চার লাখ টাকা জরিমানা করে সৌদি এয়ারলাইন্সের দুই কর্মকর্তাকে। এ বিষয়ে বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মোঃ ফরহাদ হোসেন বলেন, সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি-৮০৪ ফ্লাইটে গত ৩ জুলাই সৌদি থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে নির্দিষ্ট বেল্টে তার ব্যাগেজটি খুঁজে পায়নি এক যাত্রী। তিনি দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে কর্মকর্তাদের পরামর্শে নির্ধারিত ব্যাগেজ ক্লেইম করা হয়।
×